সৌমিত্র-জায়া দীপা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে মমতা। বৃহস্পতিবার, আনন্দপুরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
তিনি আবেগপ্রবণ। তবু বড়দের আশীর্বাদ, ভালবাসার স্পর্শে সচরাচর তাঁকেও এতটা আলোড়িত হতে দেখা যায় না। সৌমিত্র-জায়া দীপা চট্টোপাধ্যায়ের কথায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিতরের সেই অকৃত্রিম সত্তাই বেরিয়ে এল বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে।
দীপা আপ্লুত স্বরে বলছেন, ‘‘ও (মমতা) তো আমার সন্তানদের কাছাকাছি বয়সের। আমার অনেক শুভেচ্ছা, ভালবাসা ওর জন্য থাকল। ও যে লড়াইটা করছে, তা যেন করে যেতে পারে! ওর শরীরটা যেন ভাল থাকে...!’’ একটু দূরেই নিশ্চুপ মমতা এক মনে সব শুনছেন, শুনতে শুনতে তাঁর চোখও চিকচিক করে উঠল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরে বলেছেন, ‘‘নবগঠিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ফাউন্ডেশন-এর জন্য কর্মকর্তারা দরকারে তথ্য-সংস্কৃতি বিভাগে যে কোনও প্রস্তাব পাঠান। দীপা বৌদির যে কোনও আদেশ আমার কাছে শিরোধার্য।’’
আগামী ১৯ জানুয়ারি সদ্যপ্রয়াত সৌমিত্রবাবুর ৮৬ বছরের জন্মদিন। আনন্দপুরের ‘কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি’-তে সেই জন্মদিনের উৎসবের সূচনা-লগ্নেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাঙালির গর্ব, প্রিয় শিল্পীর পরিবারের আত্মীয়তার ছবিটাই সবার চোখে লেগে থাকল।
আরও পড়ুন: ধোনির ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে নেপটিজমের অভিযোগ অমিতাভ বচ্চনের দিকে!
সৌমিত্রবাবুর দীর্ঘ অসুস্থতা-পর্বে অভিভাবকের মতো ‘মমতাদি’র পাশে দাঁড়ানোর কথা আগেও মুক্তকণ্ঠে বলেছিলেন সৌমিত্র-কন্যা পৌলমী। এ দিন একই ভাবে দীপাও বললেন মমতার ভূমিকার কথা। এই প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হল। দেখা হতেই আবেগে মমতাকে জড়িয়ে ধরেন দীপা। দেখা হওয়া ও বিদায় নেওয়ার সময়ে মমতা তাঁকে প্রণাম করেছেন। পৌলমীও এ দিন তাঁর কন্যার সঙ্গে মমতার পরিচয় করিয়ে দেন। শুধু সৌমিত্র নন, বাঙালি আবেগের কেন্দ্রস্থলে থাকা বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পরিবার-পরিজনের সঙ্কটে পাশে থাকাটা তাঁর দায়বদ্ধতা বলে এ দিন মমতা স্মরণ করেছেন। উঠে এসেছে উত্তমকুমারের পরিবার বা সুপ্রিয়াদেবীর কথাও।
আরও পড়ুন: প্রেমে পড়া বারণ! জাহ্নবী বললেন, তাঁর না বলা কথা বুঝে নিতে হবে
তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তমের পুত্রবধূর সঙ্গে মমতার যোগাযোগ। একদা সুপ্রিয়ার বাসস্থান-সঙ্কট নিয়ে উৎকণ্ঠা এবং তা সমাধানের চেষ্টার কথাও মমতা উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি যখন যেটুকু করেছি, তার জন্য কোনও কৃতজ্ঞতা আমার প্রাপ্য নয়! আমি যে জায়গায় আছি, তাতে এটুকু করা আমার দায়বদ্ধতা!’’ তাঁর দৌহিত্র, অভিনেতা রণদীপ বসুর দুর্ঘটনার পরে সৌমিত্রবাবুর দুশ্চিন্তার কথাও এ দিন স্মরণ করেছেন মমতা। তিনি এখন আগের থেকে অনেকটা ভাল বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাজ ও স্মৃতির সংরক্ষণ এবং তাঁর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার বয়ে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন কন্যা তথা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজিং ট্রাস্টি, নাট্যকর্মী পৌলমী বসু। শিল্প ক্ষেত্রের সম্ভাবনাময় কারও পৃষ্ঠপোষকতাও করবে সৌমিত্রের নামের ফাউন্ডেশন। সৌমিত্রের ছবি, সিনেমা-নাটকের পোশাক, অন্য ব্যবহার্য রেখে একটি প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থা হবে বলে জানান ফাউন্ডেশনের অন্যতম মুখ্য আহ্বায়ক যোগেন চৌধুরী। আনন্দপুরে সৌমিত্রের ছবির প্রদর্শনী ও নানা অনুষ্ঠান চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।