কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
রাজ্যের বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির অন্তর্গত ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড পরিষেবা শুরু করেছেন তিনি। শাসক শিবিরের অনেকেই বলছেন, পাঁচ লক্ষ টাকা ‘ক্যাশলেস’ চিকিৎসার ওই কার্ড মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মাস্টারস্ট্রোক’। কেউ কেউ একধাপ এগিয়ে বলছেন ‘গেমচেঞ্জার’। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যে ওই প্রকল্প নিয়ে অভিভূত, তা বোঝা গেল শুক্রবার ২৬ তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। যখন শেষলগ্নে এসে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত অভ্যাগতদের বললেন, ‘‘আপনারা কিন্তু সকলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটা করিয়ে নেবেন। ফিল্মস্টার থেকে টেকনিশিয়ান— সকলে। পাঁচ লক্ষ টাকা ক্যাশলেস!’’
উদ্বোধনী মঞ্চে হাজির ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের বড় অংশ। ছিলেন বলিউডের পরিচালক অনুভব সিন্হা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ খান। গ্ল্যামার বলতে ওই ‘বাদশাহ’র উপস্থিতিটুকুই। সেটুকু বাদ দিলে করোনা আবহে অন্যান্যবারের মতো এ বার ফিল্মোৎসবে সেই জাঁক নেই। জৌলুসও নেই। প্রত্যাশিত ভাবেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মমতাও জোর দিয়েছেন করোনাবিধির উপর।
চলচ্চিত্র উৎসবে শিল্পীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ মুখ্যমন্ত্রীর।
সশরীরে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে না পারার জন্য দুঃখপ্রকাশ করে শাহরুখ বলেন, অতিমারি থেকে তিনি শিখেছেন, পরিবারই জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিস। শাহরুখ বলেন, ‘‘কলকাতা আমার পরিবার। পশ্চিমবঙ্গ আমার পরিবার। খুব দ্রুতই বাংলায় যাব।’’ এ-ও বলেন যে, পরের বার কলকাতায় এসে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং অনেকটা সময় কাটাবেন। মমতাও শাহরুখকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে রাখিবন্ধনে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে দেন। মমতা-শাহরুখ সম্পর্ক বরাবরই ঘনিষ্ঠ। প্রতিবারই ফিল্মোৎসবের উদ্বোধনে কলকাতায় আসেন শাহরুখ। প্রতিবারই উদ্বোধন হয় নেতাজি ইন্ডোরে। বস্তুত, বাম আমলে নন্দনের ‘ঘেরাটোপ’ থেকে বাইরে এনে ফিল্মোৎসবকে ‘সার্বজনীন’ রূপ দিয়েছিলেন মমতা। ঘটনাচক্রে, তাঁর অন্যতম প্রিয় সেই অনুষ্ঠানই এ বার হতে হল নবান্ন সভাঘরের ঘেরাটোপে।
অনুষ্ঠানের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ বারের উৎসবের আগে বহু শিল্পীকে হারিয়েছি আমরা। তার দুঃখ রয়ে গিয়েছে।’’ তবু স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। হল মালিকদের কাছে আবেদন জানান, করোনাবিধি মেনে দর্শকদের ছবি দেখার ব্যবস্থা করে দিতে। উদ্বোধনে ছিলেন রঞ্জিত মল্লিক, গৌতম ঘোষ, কৌশিক সেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সাংসদ নুসরত জাহান, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, দেব, তনুশ্রী চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী, পায়েল সরকার, অরিন্দম শীল, ঋতাভরী চক্রবর্তী প্রমুখ।
ফিল্মোৎসব চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। করোনাবিধি মেনে নন্দন, রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ-সহ মোট আটটি প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, কোভিড পরিস্থিতির জন্য এ বার ফিল্মোৎসব হওয়া নিয়েই সংশয় ছিল। কিন্তু মমতা ঠিক করেন, ছোট করে হলেও উৎসব হবে। সেইমতোই শুক্রবার তুলনামূলক অনাড়ম্বর ভাবে উৎসবের উদ্বোধন হল।
এবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমা দেখার জন্য দু’দিনের অগ্রিম টিকিট বুক করার ব্যবস্থা ছিল অনলাইনে। শুক্রবার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কমিটি জানিয়েছে, যাঁরা অনলাইনে ‘বুক মাই শো’-এর মাধ্যমে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আসন সংরক্ষণ করেছিলেন, তাঁরা হলে এসে সংরক্ষিত আসনে বসেই সিনেমা দেখতে পারবেন। আর ওই দু’দিনে যে সমস্ত আসনের অনলাইন বুকিং হয়নি, সেই সব আসনে হলে এসে সিনেমা দেখতে পারবেন, বিশেষ অতিথি, অতিথি ও সংবাদমাধ্য়মের কার্ড থাকা দর্শকরা। ১১ জানুয়ারি থেকে উৎসবের বাকি দিনগুলোর জন্য আর অনলাইন টিকিট সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে না। সেক্ষেত্রে, ডেলিগেট, গেস্ট ও প্রেস কার্ড আছে যাঁদের তাঁরা কার্ড দেখিয়ে কোভিড বিধি মেনে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়িয়ে হলে সিনেমা দেখতে পারবেন।