তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালম, তামিল এবং হিন্দি— দক্ষিণের টলিউড থেকে বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত নাম মাধবী।
১৭ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ারে ৩০০-রও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু কেরিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন এই নায়িকা রাতারাতি ইন্ডাস্ট্রি থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন।
নিজের জনপ্রিয়তা বিসর্জন দিয়ে আধ্যাত্মিকতায় মন দিয়েছিলেন। তার পর বিয়ে করে সংসারধর্ম পালন করে চলেছেন।
কেন এ ভাবে রাতারাতি সব কিছু ছেড়ে আধ্যাত্মিকতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন? সব কিছু ছেড়ে দিলেও ইন্ডাস্ট্রির এক অভিনেতার সঙ্গে আজও যোগাযোগ রেখে চলেছেন মাধবী। সেই অভিনেতাকে তিনি আবার নিজের গুরু বলে মনে করেন। তিনি কে জানেন?
১৯৬২ সালে হায়দরাবাদে জন্ম মাধবীর। হায়দরাবাদের স্ট্যানলে গার্লস হাই স্কুলে পড়াশোনা তাঁর। ছোট বয়স থেকেই ভারতনাট্যমে প্রশিক্ষিত।
তেলুগু পরিচালক দাসারি নারায়ণ রাও তাঁকে খুব কম বয়সেই একটি ছবির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ‘থুরুপু পাদামারা’ নামে ওই ছবি সুপারহিট হয়েছিল।
কেরিয়ারের প্রথম ভাগে সবচেয়ে বেশি ছবি তিনি করেছিলেন চিরঞ্জীবীর সঙ্গে। এমনকি তাঁর শেষ তেলুগু ছবি ‘বিগ বস’-এও চিরঞ্জীবী ছিলেন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে ওঠেন। রজনীকান্তের সঙ্গে জুটি বেঁধেও একাধিক ছবি করেছেন তিনি। রজনীকান্ত তাঁকে নিজের সৌভাগ্য মনে করতেন। কারণ তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধা সব ছবিই সফল হত।
১৯৭৮ সালে কে বালাচন্দর ‘মারো চরিত্র’ নামে একটি ছবি বানান। ওই ছবির গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পান মাধবী।
১৯৮১ সালে তেলুগু এই ছবি হিন্দিতেও তৈরি হয়। ‘এক দুজে কে লিয়ে’। হিন্দি ছবির জন্যও ওই একই পার্শ্বচরিত্রে দেখা যায় তাঁকে।
মাধবী বলিউডে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পার্শ্বচরিত্র দিয়ে বলিউড কেরিয়ার শুরু করতে চাননি। শ্রীদেবীর মতো বলিউডে তিনিও প্রথম সারির নায়িকা হতে চেয়েছিলেন।
এর পর ‘অন্ধা কানুন’, ‘মুঝে শক্তি দো’, ‘মিসাল’, ‘গ্রেফতার’, ‘লোহা’ এবং ১৯৯৪ সালে ‘খুদাই’ দিয়ে তাঁর বলিউড কেরিয়ারে ইতি টানেন তিনি। তবে শেষ বলি ছবির অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন বলিউডে তিনি পসার জমাতে পারবেন না। তাঁর কোনও ছবিই সে ভাবে সফল হচ্ছিল না। তার উপর বেশির ভাগ ছবিতেই পার্শ্বচরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
১৯৮৭ সালে ‘কলিযুগ অউর রামায়ণ’ ছবিতে সাহসী অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার পর থেকেই মূলত ছবিতে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমতে শুরু করে। বি-গ্রেড অভিনেত্রীর ছাপ পড়ে গিয়েছিল তাঁর গায়ে।
১৪ বছর বলি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার পরও সে ভাবে পসার জমাতে পারেননি। তখনও অবশ্য দক্ষিণী ছবিতে তিনি কাজ করে যাচ্ছিলেন এবং সে ইন্ডাস্ট্রিতে জনপ্রিয়ও ছিলেন।
বলিউডের স্বপ্ন দেখা মাধবী মনে মনে ভেঙে পড়েছিলেন। কাজের সৌজন্যেই রজনীকান্ত তাঁর খুব ভাল বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন।
রজনীকান্তই তাঁকে নিজের আধ্যাত্মিক গুরুর কথা বলেন। সেই গুরুর সঙ্গে দেখা করে জীবনের দিশা খোঁজার পরামর্শ দেন।
গুরু স্বামী রামার সঙ্গে গিয়ে হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব যোগা সায়েন্স অ্যান্ড ফিলোজফি-তে গিয়ে দেখা করেন। আমেরিকাতেও গুরুর বাণী শুনতে গিয়েছিলেন তিনি।
সেই গুরুর এক কথাতেই রাতারাতি অভিনয় ছেড়ে দেন তিনি। গুরুই তাঁর আর এক শিষ্যর সঙ্গে তাঁকে বিয়ে করে নিতে বলেছিলেন।
গুরুর কথাতেই আমেরিকার ব্যবসায়ী র্যাফ শর্মার সঙ্গে বিয়েও করেন তিনি। তার পর থেকে অভিনয় থেকে সম্পূর্ণ দূরে আমেরিকার নিউ জার্সিতেই জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
বিয়ের পর ৩০ বছর তিনি ভারতে আসতে পারবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন গুরু। হয়েছেও তাই। অনেক বার বিমানের টিকিট কাটলেও ১৯৯৬ সালে বিয়ের পর থেকে এখনও ভারতে ফেরা হয়নি তাঁর।
ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে রাতারাতি সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। দুই মেয়ে, স্বামীর সঙ্গে নিউ জার্সিতে থাকেন মাধবী। শুধুমাত্র রজনীকান্তের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগ রেখে চলেছেন।