সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় ‘চারুলতা’ ছবিতে কাজ করেন মাধবী।
বাঙালির কাছে এখনও তিনিই চারুলতা। তিনি মাধবী মুখোপাধ্যায়। মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, সত্যজিৎ রায় থেকে পূর্ণেন্দু পত্রী- বুদ্ধিদীপ্ত পরিচালকের প্রথম পছন্দ তিনিই। কিন্তু সেই চারুলতাই এক সময়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিতের ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব।
এর নেপথ্য কারণ কী?
১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ উপন্যাস অবলম্বনে ‘চারুলতা’ ছবিতে কাজ করেন মাধবী। এই চারুলতা ছবির মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের পরেই ইন্ডাস্ট্রিতে মাধবী আর সত্যজিতের বিশেষ সম্পর্কের কথা ছড়িয়ে পড়ে। মাধবীর বাড়িতে সত্যজিতের যাতায়াতের কথাও প্রকাশ্যে আসে।কিন্তু পরিচালক বা অভিনেত্রী কেউ এই নিয়ে কোথাও মুখ খোলেননি।
বরং পরবর্তীকালে সত্যজিতের স্ত্রী বিজয়া রায় তাঁর ‘আমাদের কথা’ গ্রন্থে স্পষ্টভাবে কোনও নাম না করে তাঁর স্বামীর এই সম্পর্কের রটনা নিয়ে বলেন, তাঁর স্বামী সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে নায়িকার ‘স্ট্যান্ডার্ড’ একেবারেই মেলেনা। নায়িকার নাম এড়িয়ে গেলেও কোন প্রসঙ্গে কার কথা উনি বলছেন তা বুঝতে কোথাও অসুবিধে হয় না। কারণ সত্যজিৎ-মাধবীর পারস্পরিক সম্পর্কের কথা লোক মুখে ফিরত। বিজয়া রায় লিখেছিলেন, ‘‘এই গুঞ্জন তাঁকে কষ্ট দিয়েছিল’’।
তিনি এই গুঞ্জন থামিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেই উদ্যোগী হন। বিজয়ার আপত্তিতেই সত্যজিৎ রায়ের ছবি থেকে বাদ পড়েছিলেন মাধবী।
সত্যজিৎ-মাধবীর পারস্পরিক সম্পর্কের কথা লোক মুখে ফিরত।
পরপর ২টি সিনেমা করেন সত্যজিৎ রায় ও মাধবী মুখোপাধ্যায় - ‘মহানগর’ (১৯৬৩) এবং ‘চারুলতা’ (১৯৬৪)। দুটো ছবি বক্স অফিসে সফল। আর তার ঠিক পরের বছরই মুক্তি পায় মাধবী মুখোপাধ্যায় অভিনীত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘কাপুরুষ’ (১৯৬৫)। এর পরে মাধবীকে সত্যজিতের ছবিতে দেখা যায়নি। বিজয়া রায়ের আপত্তিতেই সত্যজিৎ রায় মাধবীর সঙ্গে আর কাজ করেননি।
অন্য দিকে মাধবী অবশ্য বলেছেন, সত্যজিৎ তাঁকে ‘নায়ক’-এর সময় অভিনয়ের জন্য ডাকলেও তিনিই পরিচালককে ফিরিয়ে দেন। মাধবী এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমার অভিনয় করা নিয়ে সে সময় এক ধরনের নোংরামো শুরু হয়েছিল। ‘অশনি সংকেত’এ ডেকেছিলেন। যাইনি। ‘নায়কে’ না বলেছি। 'ঘরে বাইরে'-র সময় এক সাংবাদিককে দিয়ে ডাক পাঠিয়েছিলেন। যাইনি। একবার না বললে আর তা হ্যাঁ হয় না আমার।’’
এই ভীষণ মনের জোর নিয়েই আজও কাজের মধ্যে একলা আলো হয়ে আছেন তিনি।