চিরতরে দূরে ফিরোজা

প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগম। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। কিছু দিন ধরে তিনি লিভার ও কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। নজরুলগীতির অবিস্মরণীয় শিল্পী ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০-এ, ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে। ইসলামি গান দিয়ে তাঁর সঙ্গীত জীবনের শুরু। পরে তাঁর নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায় নজরুলগীতি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

প্রয়াত হলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ফিরোজা বেগম। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। কিছু দিন ধরে তিনি লিভার ও কিডনির অসুখে ভুগছিলেন।

Advertisement

নজরুলগীতির অবিস্মরণীয় শিল্পী ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০-এ, ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে। ইসলামি গান দিয়ে তাঁর সঙ্গীত জীবনের শুরু। পরে তাঁর নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে যায় নজরুলগীতি। স্বয়ং কাজী নজরুল ইসলামের কাছে তাঁর গান শিখেছিলেন ফিরোজা। তাঁর কণ্ঠে নজরুলগীতির আদি, বিশুদ্ধ সুরটি ধরা থাকত।

১৯৪২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ইসলামি গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বেরোয়। পরে চিত্ত রায়ের তত্ত্বাবধানে ওই বয়সেই প্রকাশিত হয় আরও একটি রেকর্ড। এর পরে কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড। সেই সূত্রেই বিশিষ্ট ওই সুরকারের সঙ্গে পরিচয়। পরে কমলবাবুকে বিয়ে করেছিলেন ফিরোজা।

Advertisement

এই সময়েই পরিবারের সঙ্গে স্থায়ী ভাবে কলকাতায় চলে এসেছিলেন শিল্পী। পরে ফিরে যান ফরিদপুরে। দেশভাগের পরেও তাঁর নজরুলগীতি ও আধুনিক গান দুই বাংলায় সমান জনপ্রিয় থাকে। জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে সম্মানিত করেন। এ মাসে আরও একবার সরকারি সম্মান নিতে কলকাতায় আসার কথা ছিল। হল না। সে কথা ফেসবুকে লিখেছেন মমতা।

হৈমন্তী শুক্লর সংযোজন: সেই কোন ছোটবেলা থেকে ওঁকে চিনি। স্নেহে-ভালবাসায়, শ্রদ্ধায়।

আমার বাবা হরিহর শুক্লর সঙ্গে বহু দিনের যোগাযোগ ছিল ফিরোজা বেগমের। আসলে বাবার সঙ্গীত জীবনের প্রথম দিকের বেশির ভাগ গানই কমল দাশগুপ্তের সুরে। ফিরোজা বেগমের সঙ্গে কমলবাবুর বিয়ের পরে ওঁরা জোড়ায় আসতেন শ্যামবাজারে বাবার গানের স্কুলে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে যেত গল্পে-গানে।

আমি তখন খুব ছোট। তবু তার মধ্যেই মনে করতে পারি ফিরোজা বেগম নামে বড্ড শৌখিন এক মানুষকে। সোনার কাজ করা শাড়ি পরে এসে বসতেন। ওঁরা চলে যাওয়ার পরে গানের স্কুলের সকলে মিলে বসার জায়গাটা ঝেড়েঝুড়ে দেখত। ওঁর শাড়ি থেকে ঝরে পড়া সোনার কুচি পড়ে নেই তো! আর কমল দাশগুপ্ত ছিলেন খুব সাদাসিধে। আমাদের সঙ্গে গল্প করে যেতেন খোলা মনে।

বড় হয়েও ওঁর স্নেহ থেকে বঞ্চিত হইনি একটুও। বাংলাদেশে ওঁর ভাইয়ের সুরে আমায় গান গাইতে বলা কিংবা নিজের অনুষ্ঠানে গাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, সব সময়েই দু’হাত ভরে দিয়ে গিয়েছেন।

আর ওঁর গান? মনে হত গানের কথাগুলো যেন ওঁর নিজেরই কথা। বড্ড ভিতর থেকে গাইতেন। ডুবে যেতেন সুরে। শিল্পী মানুষ ঠিক যতটা সৌরভ ছড়িয়ে দেন চার পাশে, ভিড়ের মধ্যে ঠিক যে ভাবে আলাদা করে চেনা যায়, ফিরোজা বেগম ঠিক তেমনই। আজকালকার শিল্পীদের মধ্যে সেটাই যেন আর খুঁজে পাই না সে ভাবে। কমল দাশগুপ্তের সুরে ওঁর অমর গানগুলো মনে থাকবে। মনে পড়ে আজ সে কোন জনমে বিদায় সন্ধ্যাবেলা, আজও কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া, দূর দ্বীপবাসিনী, রুমঝুম রুমঝুম কত যে গান মনের মধ্যে গেঁথে আছে। থাকবে চিরকাল।

সবাই এক দিন চলে যান। পড়ে থাকে শূন্যতা। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, উস্তাদ আল্লারাখা, নৌশাদজি, ফিরোজা বেগম কত বড় বড় শিল্পীর সান্নিধ্যে এসেছি। সবাই একে একে চলে যাচ্ছেন। মাথার উপর ছাদটা কেমন যেন ফুটো ফুটো হয়ে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement