Kolkata International Film Festival

অন্তিম সন্ধ্যায় ঐক্যের সুতো গেঁথেই যবনিকা সিনে-উদ্‌যাপনের

সমাপ্তি উৎসবে এই সব বলা নিয়ম। কিন্তু দর্শকের শরীরী উপস্থিতির কথাই সকলে বিশেষ ভাবে বলছেন।

Advertisement

গৌতম চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:২০
Share:

নন্দন চত্বরের মুক্তমঞ্চে পাশাপাশি ফিরহাদ হাকিম ও নুসরত জাহান। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে গেরুয়া ও বাসন্তী রঙের ছড়াছড়ি। খোল বাজাতে বাজাতে গেরুয়া পাঞ্জাবি ও বাসন্তী শাড়িতে ‘হরি হরায় নমঃ কৃষ্ণ যাদবায় নমঃ’ গাইছেন হরেকৃষ্ণ হালদার ও সম্প্রদায়। দর্শকাসনে কীর্তনের তালে হাত তুলছেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পাশে সাংসদ ও নায়িকা নুসরত জাহান। নন্দন চত্বরের মুক্তমঞ্চে ২৬তম চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি সন্ধ্যার আসল ছবি এটাই।

Advertisement

তার আগে নানা কথা। নন্দন অধিকর্তা মিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তী— তাঁরা জানালেন, মুম্বই, দিল্লি থেকে অনেকে খবরাখবর নিচ্ছেন, অতিমারিতে কী ভাবে দর্শকদের নিয়ে এই উৎসব করা গেল! ‘‘অতিমারিতে এটাই দেশের প্রথম বাস্তব ফিজিক্যাল ফেস্টিভ্যাল,’’ বলছিলেন নন্দন-অধিকর্তা। শেষ দিনে দর্শকদের অভিনন্দনও জানালেন রাজ, ‘‘আপনারাই এই উৎসবকে সফল করেছেন। লাইন দিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছেন, কিন্তু যখন বলা হয়েছে আর জায়গা নেই, আপনারা শান্ত ভাবে পরের ছবিতে লাইন দিয়েছেন। এই সহযোগিতায় আমরা আপ্লুত।’’

সমাপ্তি উৎসবে এই সব বলা নিয়ম। কিন্তু দর্শকের শরীরী উপস্থিতির কথাই সকলে বিশেষ ভাবে বলছেন। পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘সিনেমা হল করোনা ছড়ায় না। ফেস্টিভ্যাল প্রমাণ করল, স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করলে ও স্বাস্থ্য-বিধি মেনে চললে লোকে বড়পর্দায় ছবি দেখতে চান।’’

Advertisement

কমিটির সদস্য, সিনেমাটোগ্রাফার প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী জানালেন, এ ভাবেই তাঁরা নন্দন খুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন। গত কয়েক মাসে অনেক বাংলা ছবি বাণিজ্যিক ভাবে মুক্তির জন্য লাইন দিয়েছে। সিনেমা শিল্পের রুটি-রুজির জন্যই এই মুক্তি জরুরি।

শেষ দিনে এ বারেও পুরস্কার বিতরণ। অতিমারি পরিস্থিতিতে ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ে যোগাযোগ করা হল বিজেতাদের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক বিভাগে বিশেষ জুরি পুরস্কার পেল

ইউক্রেনের ‘ব্লাইন্ডফোল্ড’। যুদ্ধের আবহে এক মহিলা বক্সারের গল্প। তাঁর বয়ফ্রেন্ড নিখোঁজ। বয়ফ্রেন্ডের বন্ধু এক দিন রেগে বলেই ফেললেন, ‘‘যুদ্ধের কী জানো? শুধু বীরত্ব আর মৃত্যু? না, যুদ্ধে অনেক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তারা নিখোঁজ থেকে যায়, এটাই বাস্তব।’’

সেরা ছবিও এক মহিলার। ইরানের পরিচালক মনজি হিকমতের তৈরি ‘বান্দারব্যান্ড’। ইরানের মফস্সল থেকে এক তরুণী ও দুই তরুণের রক ব্যান্ড ভ্যানে করে চলেছে রাজধানী তেহরানের দিকে। সেখানে তাঁদের প্রথম অনুষ্ঠান। মাঝে বহু জায়গায় রাস্তা বন্যায় ভেসে গিয়েছে। লোকজন ত্রাণের জন্য সার বেঁধে দাঁড়িয়ে। গানের দলটি নিজেদের গাড়িতে ওষুধ ও ত্রিপল তুলে নেয়। তার পরে কারও শরীর খারাপ এবং বহু সমস্যা। শেষ দৃশ্যে হতভম্ব দর্শক নীরব। পর্দায় শুধু গাড়িটা, গাড়ির পিছনে শূন্য সিট। অসুস্থ গায়ক একটু আগে স্বপ্ন দেখছিলেন নিউ ইয়র্ক, লন্ডনে তাঁর অনুষ্ঠান হবে। এখন কেউ নেই। যা এত ক্ষণ ‘রোড মুভি’ বলে মনে হচ্ছিল, শেষ দৃশ্যে সেটি ঠারেঠোরে জানায়, জাতির জীবনে বন্যা, বিপর্যয় অনেক কিছু আসে। তখন কখনও এই রাস্তা, ওই রাস্তায় ঘুরতে হয়। কিন্তু সামগ্রিক স্বপ্নটা থেকে যায়।

এই রকম স্বপ্নের কথাই বলেছে কিরঘিজস্তানের সম্মানিত ছবি ‘শাম্বালা’। লোকে জঙ্গল কেটে শহরের স্বপ্ন দেখে, আর দূরে এক বল্গা হরিণ দাঁড়িয়ে থাকে। শুধু ছোট্ট ছেলে শাম্বালা এই হরিণটিকে দেখতে পায়। দাদুর কাছে সে এই হরিণের গল্প শুনেছে। তাদের উপজাতির জননী এই হরিণী। এক দিকে উপজাতি সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাওয়া, আর এক দিকে সেই উপকথার রোম্যান্স। এটাই কিরঘিজ ছবিটির বৈশিষ্ট।

পুরস্কৃত হয়েছে বাংলা ছবিও। বাংলাদেশের উপকূল এলাকার মৎস্যজীবীদের জীবন নিয়ে ‘নোনা জলের কাব্য’ই এ বার এশীয় বাছাইয়ে সেরা ছবি। মাজুলি দ্বীপের পটভূমিতে অসমের পরিচালক বিশ্বজিৎ বরার তৈরি ‘ব্যালকনিতে ভগবান’ সেরা ভারতীয় ছবি। সিনেমায় কোনও বিভাজন থাকে না। সেখানে পুরস্কার-সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্রের বৃহত্তম নদী-দ্বীপ মাজুলি আর চট্টগ্রামের মৎস্যজীবীরা একাকার হয়ে যান।

এটাই সিনেমার ধর্ম!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement