কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকের মৃত্যুর পর এত দিন যেন ধুলো জমছিল তাঁর প্রোফাইলে। স্মৃতি হাতড়াতে সেই প্রোফাইলগুলোই ঘেঁটে আসছিলেন ভক্তরা। চিরতরে হারিয়ে যাওয়া শিল্পী আবার সকলের মাঝে হাজির! কী ভাবে?
শুক্রবার কেকের প্রোফাইল পিকচার বদলে দিয়েছে পরিবার। তাঁরাও যে চান, কেকে তাঁর প্রিয় ভক্তদের মাঝে সব সময় বেঁচে থাকুন। তিনি যে আনন্দের প্রতিভূ! ধীরে ধীরে শোক সামলে উঠছেন প্রয়াত বলিউড গায়ক কেকে-র পরিবার। প্রোফাইল পিকচার বদলের পাশাপাশি শুক্রবার একটি দীর্ঘ বার্তায় জানানো হয়েছে, ঠিক আছেন তাঁরা। আকস্মিক ভাবে প্রিয়জনকে হারানোর ব্যথা, সেই যন্ত্রণার অভিঘাতে এত দিন যেগুলো গুছিয়ে বলতে পারেননি, সে সব কথাও ভাগ করে নিয়েছেন তাঁরা। তার সঙ্গে রয়েছে কেকে-র ভক্তদের মাঝেই গায়ককে বাঁচিয়ে রাখার আর্জিও। কেকের অ্যাকাউন্টে ওই দীর্ঘ বার্তায় লেখা হয়েছে, ‘কেকে চেয়েছিলেন, তাঁর প্রোফাইল ছবি বদলে এটা করা হোক, তাই আমরা করলাম। ভেবেছিলাম, সমস্ত ভক্তদের উদ্দেশে লিখব যে, আমরা প্রতি দিন একটু একটু করে ভাল হচ্ছি, শোক সামলে উঠছি।
‘তিনি খুব অন্য রকম মানুষ ছিলেন। আপনাদের কাছে কেকে কেবল এক জন পারফর্মার হতে পারেন, কিন্তু আমাদের কাছে তিনি কারও বাবা, কারও স্বামী। আত্মত্যাগ এবং মানবতার মিশেলে গোটা জীবন কী ভাবে ভারসাম্য রেখে চলা যায়, তা আমাদের শিখিয়েছেন কেকে। তাঁর নিঃস্বার্থ ভালবাসা আমাদের শিখিয়েছে, কী ভাবে সত্যিই এবং সত্যিকারের ভালবাসতে হয়। তিনি আর নেই, তবু এত কিছু রেখে গিয়েছেন যে তাঁকে পৌরাণিক চরিত্রের মতো অনন্য সাধারণ এবং জীবন্ত মনে হয়।আমরা সকলেই তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। তবে যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে ওঠে তাঁদের পক্ষে, যাঁরা সেই মানুষটার ঘরের লোক। পরিবার হিসেবে তাই আমরা ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেলাম। এবং যাচ্ছি। তাঁকে ছাড়া আমরা কী ভাবে জীবন কাটাচ্ছি, সেটা দেখেও নিজেরাই আশ্চর্য হচ্ছি।
‘কেকে বলতেন, নিজেকে বিশ্বাস করতেই হবে। যা-ই করো না কেন, তাতে নিজের ১০০ শতাংশ দাও। সেই জোরেই আমরা আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছি। আমরা জানি, তিনি আমাদের ভেঙে পড়তে দেখতে চাইছেন না। তিনি চাইবেন, আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাই, নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছই। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নিজে যা পছন্দ করতেন, তা-ই নিয়েই থাকতে পেরেছেন কেকে। এমন সুযোগ ক’জন পান! মঞ্চে ঠাসাঠাসি দর্শক তো সব শিল্পীই দেখতে চান। যা কেকে-ও তাঁর শেষ অনুষ্ঠানে পেয়েছিলেন। সেখানেই নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। তাঁর নিঃশর্ত ভালবাসা সঞ্চারিত হয়েছিল উপস্থিত সকলের হৃদয়ে।যদি তাঁকে আপনারা সত্যিই ভালবেসে থাকেন, তবে আমাদের অনুরোধ, আপনারা সদয় হোন, একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন, আনন্দ ছড়িয়ে দিন চারপাশে। এই মূল্যবোধগুলোই আপনাদের মধ্যে কেকে-কে বাঁচিয়ে রাখবে।’
কেকে-র স্ত্রী জ্যোতিও এ দিন নিজের আঁকা একটি ছবি ভাগ করে করে নিয়েছেন। পুরনো দিনের রঙিন স্মৃতিতে জড়ানো সেই ছবিতে তিনি আর কেকে হাত ধরাধরি করে দাঁড়িয়ে। সেই মুহূর্তটাকে বুকে আগলেই যে এখন ভাল থাকতে চাইছেন প্রয়াত শিল্পীর স্ত্রী!
৩১ মে, কলকাতায় নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান শেষে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন বলিউডের জনপ্রিয় নেপথ্য গায়ক কেকে। হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। চিকিৎসারও সুযোগ মেলেনি।