কিশোর কুমারকে নিয়ে মনের কথা লিখলেন কুমার শানু।
কিশোর কুমারের জন্মদিন। আমার গুরুর জন্মদিন। অনেক কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কেমন যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। খুব কাছের কাউকে নিয়ে লিখতে গেলে বোধ হয় এমনই হয়।
বহু বছর আগের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তখন চোখে গায়ক হওয়ার স্বপ্ন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিশোরদার গান গাইতাম। অনেকেই বলতেন, তাঁর সঙ্গে আমার গলা মিলে যায়। সেটা শুনে বেশ লাগত তখন। এর পর সময় গড়িয়েছে। মঞ্চ থেকে প্লে ব্যাকের স্টুডিয়োতে গিয়েছি। জীবনের প্রত্যেকটি ধাপে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে কিশোরদা।
আগাগোড়াই কিশোর কুমারের ক্লোন বলা হত আমায়। এই তুলনা আমার কখনও খারাপ লাগেনি। লাগবেই বা কেন? আমরা তো জীবনে কাউকে না কাউকে অনুসরণ করেই চলি। ছাত্ররা শিক্ষককে করে, যারা গান ভালবাসে, তারা গানের শিক্ষককে অনুসরণ করে। আমি ঠিক সে ভাবেই কিশোরদার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। তাঁর সঙ্গে তুলনা আমাকে অনেকটা এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। জীবনে যত বার ভেঙেছি, ওই মানুষটাই যেন এক বুক সাহস নিয়ে এসেছেন আমার সামনে।
সেই সাহসকে সম্বল করেই আজ থেকে অনেক বছর আগে এসেছিলাম মুম্বইতে। গানের বিশেষ কোনও প্রশিক্ষণ না পেয়েও স্বপ্ন দেখেছিলাম গায়ক হওয়ার। মনে কিশোরদা ছিলেন বলেই হয়তো স্বপ্ন দেখার সাহসটুকু করেছিলাম।
অথচ যে মানুষটা স্বপ্ন দেখতে শেখালেন, তাঁর সঙ্গেই সাক্ষাতের সুযোগ হল না কখনও। জীবনের বহু সাফল্য এই আফসোস মুছে দিতে পারেনি। পারবেও না।
কিশোরদা থাকলে বর্তমান সময়ের গান নিয়ে কী বলতেন? আজ এই প্রশ্নটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। হয়তো বলতেন, গানের চেয়ে এখন আওয়াজ অনেক বেশি। নিত্যনতুন বাজনার আড়ম্বরে ঢাকা পড়ে গিয়েছে সুর। হয়তো আবার বর্তমান প্রজন্মের গুণী শিল্পীদের প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করতেন। নিজের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতেন তাঁদের মধ্যে।
আমার কাছে কিশোর কুমার এক বিস্ময়ের নাম। যাঁর আভাস পাওয়া গিয়েছিল ছোটবেলার আভাসেই।