(বাঁ দিকে) এ আর রহমান। কাজী নজরুল ইসলাম (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
সোমবার ‘পিপ্পা’ ছবির নির্মাতারা সমাজমাধ্যমে বিবৃতি প্রকাশ করে নজরুল অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে দাবি করেছেন ছবিতে ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানে যা কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে, তা চুক্তিপত্র অনুযায়ী করা হয়েছে। এ দিকে এই বিতর্কে নজরুল পরিবারের মধ্যেই বিরোধের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, গানের স্বত্ব হস্তান্তর নিয়ে কবির পরিবার আপাতত দুই শিবিরে বিভক্ত।
নজরুল-পৌত্র কাজী অরিন্দম এবং পৌত্রী খিলখিল কাজী আগামী ১৬ নভেম্বর শহরে একটি সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনকে অরিন্দম বলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে বিভিন্ন মতামত ঘুরছে। আমরা সাংবাদিক বৈঠকে পরিবারের তরফে কিছু কথা বলতে চাই। এর ফলে অনেক কিছুই স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’
ছবির নির্মাতারা তাঁদের বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, নজরুলের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী যখন চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন, তখন সেখানে সাক্ষী ছিলেন অরিন্দমের সহোদর কাজী অনির্বাণ। মূলত তাঁরই উদ্যোগে সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পন্ন হয়। কিন্তু অরিন্দম এবং খিলখিল দাবি করেছেন যে, এই চুক্তি নিয়ে তাঁরা কিছুই জানতেন না। এমনকি, অরিন্দমের বোন অনিন্দিতা কাজীও সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে একই কথা লিখে চুক্তিপত্র প্রকাশ্যে আনার দাবি জানিয়েছিলেন।
এর আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে অনির্বাণ জানিয়েছিলেন যে, ২০২১ সালে প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তাঁদের চুক্তি হয় এবং কল্যাণী সেখানে স্বাক্ষর করেন। কাজী নজরুলের ছোট ছেলে কাজী সব্যসাচীর কন্যা খিলখিল বাংলাদেশের নাগরিক। ‘লৌহ কপাট’-এর স্বত্ব হস্তান্তরের বিষয়টি খিলখিল কবে প্রথম জানতে পারেন? মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনকে খিলখিল বললেন, ‘‘আমরা কিছুই জানতাম না। আমি তো গত ১০ নভেম্বর জানতে পারি এবং পরের দিন কলকাতায় এসেছি।’’ এরই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘চুক্তিপত্রে নাকি লেখা রয়েছে কল্যাণী কাজী এবং অনির্বাণ নজরুলের একমাত্র উত্তরসূরি! তা হলে আমরা কারা?’’ খিলখিল জানালেন, আসন্ন সংবাদিক বৈঠকে তাঁর দাদুর গানের বিকৃতির প্রতিবাদ করার পাশাপাশি এই চুক্তিপত্রের সত্যতা নিয়েও কথা বলবেন তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘অনির্বাণের সঙ্গে আমরা অনেক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও আমাদের এড়িয়ে যাচ্ছে। যা ক্ষতি হয়েছে, পরিবারের তরফে ওকে তার দায় নিতেই হবে।’’
সোমবার নির্মাতারা ক্ষমা চাওয়াতেও সন্তুষ্ট হতে পারছেন না খিলখিল। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাবে তো দায় সারা যায় না। রহমানের কোনও গান নিয়ে কেউ এ রকম করলে উনি কি এত সহজে ছেড়ে দিতেন?’’ নজরুল পরিবারের তরফে ছবির নির্মাতাদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করার চেষ্টাও করা হচ্ছে। খিলখিল বললেন, ‘‘আমরা চাই, হয় গানটিকে ছবি থেকে মুছে দেওয়া হোক, আর যদি রাখতেই হয়, তা হলে মূল সুরকে অনুসরণ করে গানটিকে তৈরি করা হোক।’’
অরিন্দম এবং খিলখিল যে সাংবাদিক বৈঠক আহ্বান করেছেন, তা জানেন না অনির্বাণ। তিনি কি বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন? অনির্বাণ বললেন, ‘‘আমি শহরের বাইরে চলে যাচ্ছি। তাই উপস্থিত থাকব কি না, সেটা এখনই বলতে পারছি না।’’ নজরুল পরিবারের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ আগামী দিনে ‘লৌহ কপাট’ বিতর্কে কী মোড় হাজির করে দেখা যাক।