স্বেচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। বলিউড নায়কদের নাম জড়িয়েই যায় নায়িকাদের সঙ্গে। স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল, অথচ অন্য নায়িকার সঙ্গে জড়িয়ে রঙিন কথা শোনা গিয়েছে, এমন নায়কও বিরল নন ইন্ডাস্ট্রিতে। সে রকমই এক জন, জিতেন্দ্র।
স্ত্রী শোভার সঙ্গে জিতেন্দ্রর সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত। কিন্তু তাঁর নামের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে জড়িয়ে গিয়েছে একাধিক নায়িকার নাম।
শোভার সঙ্গে জিতেন্দ্রর কৈশোর প্রেম। প্রথম দেখা মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভে। শোভা তখন চতুর্দশী। জিতেন্দ্র ষোলো বছরের কিশোর। যোগাযোগের সূত্রপাত সেখানে। তখন অবশ্য তিনি ‘জিতেন্দ্র’ হননি। শোভার সঙ্গে আলাপ ‘রবি’ নামেই।
সিরিয়াস প্রেম শুরু শোভার কলেজজীবনে। তখন জিতেন্দ্র ধীরে ধীরে পরিচিতি পেতে শুরু করেছেন। ‘রবি’ পরিচয় মুছে গিয়ে সে জায়গায় আসছে ‘জিতেন্দ্র’-র নাম।
শোভাও কিন্তু নিজের কেরিয়ারে যথেষ্ট সফল ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানসেবিকা। বছরের বেশির ভাগ সময় কাটত দেশান্তরের আকাশে।
যত বার দেশের মাটিতে নামতেন শোভা, প্রতি বার জিতেন্দ্রর সঙ্গে কোনও না কোনও নায়িকার সম্পর্ক কানে আসত। শেষে প্রেয়সীর মান ভাঙাতে জিতেন্দ্র তাঁকে নিয়ে যেতেন লং ড্রাইভে।
কিন্তু লং ড্রাইভে সব সময় সমস্যা মিটত না। জিতেন্দ্র-শোভা সম্পর্কে টানাপড়েন লেগেই থাকত। এ সময় হেমা মালিনীর খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন জিতেন্দ্র। এমনিতেই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিলই।
ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে হেমা মালিনীর সম্পর্কও তখন ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছিল। জীবনের এ রকম এক পরিস্থিতিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন জিতেন্দ্র ও হেমা মালিনী।
বিবাহিত ধর্মেন্দ্রর তুলনায় পাত্র হিসেবে অবিবাহিত জিতেন্দ্রকেই পছন্দ ছিল হেমার মায়ের। শোনা যায়, ছাদনাতলাতেও পৌঁছে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র ও হেমা। কিন্তু সে সময়ে আসরে হাজির হন ধর্মেন্দ্র। তিনি সেই বিয়ে বাতিল করে দেন।
শেষ অবধি শোভার কাছেই ফিরে আসেন জিতেন্দ্র। দু’জনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। দিন ঠিক হয় ১৯৭৩-এর ১৩ এপ্রিল। কিন্তু তার দু’দিন আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন জিতেন্দ্রর বাবা। ফলে শেষ মুহূর্তে বাতিল হয় বিয়ের পরিকল্পনা।
এর পর শোভা চরম অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কারণ তিনি তত দিনে বিমানসেবিকার চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শ্রীমতি জিতেন্দ্র হবেন বলে। এ দিকে, সে সময় আবার জিতেন্দ্রর সিনেমা পর পর ফ্লপ করতে থাকে।
ফলে জিতেন্দ্র ও শোভা দু’জনেই হতাশ হয়ে পড়েন। কিন্তু এক সময় সিদ্ধান্ত নেন, জীবনে যা-ই আসুক না কেন, বিয়ে তাঁরা করবেনই। জিতেন্দ্র প্রতিশ্রুতি দেন শোভাকে। যদি ‘বিদাই’ হিট হয় বক্স অফিসে, তিনি শোভাকে বিয়ে করবেন।
সুপারডুপার হিট হয় ‘বিদাই’। জিতেন্দ্র বাড়িতে জানান, তিনি শোভাকে বিয়ে করবেন ৩১ অক্টোবর। বাড়ির লোক আরও এক সপ্তাহ সময় চান। যাতে আয়োজন ভালমতো করা যায়। কিন্তু জিতেন্দ্র অনড়। ওই দিনেই বিয়ে করবেন।
এ দিকে শোভার মা তখন জাপানে। কিন্তু জিতেন্দ্র আর দিন বদলাতে রাজি হলেন না। ১৯৭৪-এর ৩১ অক্টোবর সাতপাকে বাঁধা পড়লেন জিতেন্দ্র-শোভা।
তাঁদের দাম্পত্য কিছুটা টলমল হয় শ্রীদেবীর জন্য। দক্ষিণী সিনেমা থেকে বলিউডে শ্রীদেবীর প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নেপথ্যে জিতেন্দ্র ছিলেন অন্যতম কারিগর। তাঁর সঙ্গে শ্রীদেবীর সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন ছড়ায় বলিউডে।
জিতেন্দ্র বার বার সব গুঞ্জন অস্বীকার করলেও দাম্পত্য বিবাদ চরমে পৌঁছয় যখন তিনি শ্রীদেবীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ফোটোসেশন করেন। শোনা যায়, দুই সন্তান একতা ও তুষারকে নিয়ে নাকি শোভা বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন।
শেষে সংসারের স্বার্থে শ্রীদেবীর সঙ্গে বন্ধুত্বে ইতি টানেন জিতেন্দ্র। তাঁদের নিয়ে গুঞ্জনেরও সেখানেই ইতি। এই বিচ্ছেদ নাকি মেনে নিতে পারেননি শ্রীদেবী।
এর পর জয়াপ্রদাকেও দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি থেকে বলিউডে আনেন জিতেন্দ্র। তিনি নাকি শ্রীদেবীকে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, তাঁর পরেও অন্য কাউকে তারকা বানাতে পারেন জিতেন্দ্র।
ইন্ডাস্ট্রিতে কান পাতলে শোনা যায়, জিতেন্দ্রর জন্য পাগল ছিলেন জয়াপ্রদা। কিন্তু তাঁকে নিয়ে জিতেন্দ্র আদৌ সিরিয়াস ছিলেন না। ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মাওয়ালি’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেন শ্রীদেবী-জিতেন্দ্র-জয়াপ্রদা।
ছবিটি সুপারহিট হয়েছিল বক্স অফিসে। কিন্তু ছবির শুটিংয়ে নাকি চরমে উঠেছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকার রেষারেষি।
এ ভাবেই সুপারস্টারের স্ত্রী হওয়ার সব দিক দেখেছেন শোভা। টলমল করলেও তাঁর এবং জিতেন্দ্রর দাম্পত্যের তরী ডুবে যায়নি। কৈশোরের প্রেম থেকে সাড়ে চার দশকের দাম্পত্যে একে অন্যের প্রতি দায়বদ্ধ এই জুটি।