‘বাবা, বেবি ও...’ নিয়ে কলম ধরলেন জয়া।
ফুলে লাল রং খেলছে। লাল, কমল আরও কত! ফাল্গুন আসার সময়। প্রেমের সময়। প্রেম, সে যে রকমই হোক না কেন। পরকীয়া, আপনকীয়া। যে যে ভাবে নেয়। এই ফাল্গুনের প্রেমেই আবার ফেব্রুয়ারি মাসের 'ভ্যালেন্টাইনস ডে'। প্রেমের নানা নাম। আর এক নাম খুঁজে পেলাম, 'বাবা বেবি ও'। সব প্রেম এসে হাজির। সব ধরনের। হাসি–কান্না–আনন্দ–বেদনার মমতাভরা এক উপভোগ্য পারিবারিক আবহে মনটাকে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রেম।
উইন্ডোজ থেকে অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের ‘বাবা বেবি ও’ ছবির খবর শুনে, গান দেখে, প্রেম দেখতে ছবিটা দেখতে বসলাম। আর শেষ অবধি এক প্রেমের তৃপ্তি উপভোগ করা গেল। ছবির সৃজনশীল প্রযোজক নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁদের ঘর থেকে তৈরি আগের সব ছবিতেই দর্শক দেখেছেন, সাধারণ পারিবারিক সব মুহূর্ত থেকে আকর্ষণীয় গল্প গড়ে তুলতে তাঁরা কেমন ওস্তাদ। এই ছবির গল্পও লতিয়ে ওঠে বাঙালির চিরচেনা পারিবারিক পরিমণ্ডলে। তবে যে সংকটটাকে ঘিরে এ ছবির গল্প দ্বিধাদ্বন্দ্বময় আঁকাবাঁকা পথ ধরে ছোটে, তার মূল উৎস আধুনিক সময়ের জীবননাট্য।
মেঘ ওরফে হালুমের বয়স চল্লিশের আশেপাশে। বিয়ে করেনি। করার ইচ্ছেও নেই। কিন্তু ওর বাৎসল্যের শেষ নেই। ফলে বাবা হওয়ার শখ ওর ষোলআনা। ফলে সারোগেসি করে যমজ দুই শিশু পটল আর পোস্তকে নিয়ে বাড়িতে তোলে সে।
ছবির দৃশ্যে যিশু এবং শোলাঙ্কি।
মেঘের বাবা–মা আধুনিক কালেরই মানুষ। সচ্ছ্বল। মমতার পাশাপাশি একটা সহজ উদারতাও তাঁদের আছে। দুই নাতিকে নিয়ে সহজ আনন্দে তাঁদের জীবন পূর্ণ হয়ে ওঠে। আত্মীয়–বন্ধুদের নিন্দেমন্দের তাঁরা থোড়াই কেয়ার করেন। তাঁদের মনের অতৃপ্তি শুধু একটাই। যদি বিয়ে করে ছেলেটা একটু থিতু হতো। তাঁদের ছেলেটা কি তাহলে সমপ্রেমী? ও যদি একটি ছেলেকেই এনে ঘরে তোলে, আনুক না। তা–ই সই। এ নিয়ে বাবা–মায়ের সঙ্গে ছবির নানা পরতে টক–ঝাল–মিষ্টি বেশ কিছু মুহূর্ত উপভোগ্য মুহূর্ত এ ছবিতে তৈরি করা হয়েছে।
এই আইবুড়ো মেঘের সঙ্গেই বাচ্চাদের খেলনার দোকানে পরিচয় হয়ে যায় বৃষ্টি নামে এক তরুণীর। এই তরুণীর সূত্রে ছবিটির গল্পে এসে ঢোকে দ্বিতীয় একটি পরিবার। বৃষ্টির মায়ের একান্ত জীবনে একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি আছে। সেই ট্র্যাজেডির ছায়া গাঢ় হয়ে বৃষ্টির জীবনকেও মেঘাচ্ছন্ন করে রাখে। এই টানাপড়েন ‘বাবা বেবি ও’ ছবিটির দ্বিতীয় সাব–প্লট।
বৃষ্টির সঙ্গে মেঘের বন্ধুত্ব হতে সময় লাগে না। তবে মেঘ যে বৃষ্টির মধ্যে খুঁজে পায় প্রেম, সেই মেঘের মধ্যে বৃষ্টি অনুভব করে পিতৃস্নেহে ভরা একজন মানুষকে। সন্তানের যেহেতু পিতা, মেঘ নিশ্চয়ই সংসারীও। বৃষ্টির নিজেরও আছে এক ব্যক্তিগত জীবন।
বৃষ্টি আর মেঘের সম্পর্ক কি আদৌ কোনো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে? যে ট্র্যাজিক ছায়ার রজ্জুতে বৃষ্টি আর ওর মায়ের জীবন অদৃশ্য শেকলে বাঁধা, সেটা কি ছিন্ন হবে? সে প্রশ্নটুকু নিয়েই এ ছবির শেষ এগিয়ে যেতে হবে।
এ ছবিতে হো হো হাসির একাধিক মুহূর্ত রচনা করেছেন অরিত্র। আছে চাপা বেদনারও মুহূর্ত। সব মিলিয়ে ছবিটি তরতর করে এগিয়ে যায়। দ্বিতীয় ছবিতেই অরিত্র রমকম ঘরানায় নিজের অবস্থান শক্ত করে নিলেন। উইন্ডোজের ছবির একটা আলাদা অভিনয়রীতি রয়েছে। যিশু সেনগুপ্ত আর সোলাঙ্কি রায়সহ সবাই সেটি পূর্ণ করেছেন।
পারিবারিক উপভোগ্য কাহিনির ছকটি জিনিয়া সেন এঁকেছেন ভাল। সবার ওপরে নন্দিতা রায় আর শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের হাতের তুক তো রয়েইছে।
থিয়েটারে দলেবলে যাব। মজা করে ছবি দেখব। যত ক্ষণ দেখব, তত ক্ষণ মনটাকে পালকের মতো হালকা করে রাখব। বেরিয়ে আসব নির্ভার মনে। সেরিব্রাল অভিজ্ঞতা দেওয়া এ ছবির উদ্দেশ্য নয়। এ ছবির উদ্দেশ্য নিটোল বিনোদন। এক কথায় বলতে পারি, ‘বাবা বেবি ও’ ছবিটি উইন্ডোজের পিকচার পারফেক্ট পোস্টার মুভি।
অতিমারির বিষণ্ন দিনে এই ছবি অনেকেরই হয়তো মনের মেঘ মুছিয়ে দিতে পারবে। এই ছবি যদি এ সময়ে থিয়েটারগুলোকে আবার মানুষের কলগুঞ্জনে ভরিয়ে তুলতে পারে, তার চেয়ে বেশি আর কী চাওয়ার থাকতে পারে?
আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলাম। আর যে প্রেমই ফাল্গুনের গুণ, তাঁর কথা লুকিয়ে রাখলাম। ছবি দেখলে আপনারা অবশ্য ধরে ফেলতে পারবেন।