‘জওয়ান’-এর অগ্রিম বুকিং শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রথম কয়েক দিনের শো-এর টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। —নিজস্ব চিত্র।
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। বৃষ্টি ভেজা শহরের রাস্তা প্রায় খালি। ঘড়ির কাঁটা বলছে সওয়া চারটে। বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু নিউটাউনের একটি মাল্টিপ্লেক্সের সামনে পৌঁছে দেখা গেল চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। দলে দলে মানুষ সারিবদ্ধ ভাবে প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। তাঁদের মুখে একটাই স্লোগান- ‘শাহরুখ! শাহরুখ!’ এই চিত্র তো অপরিচিত নয়। কিন্তু ভোর ৫টায় শহরের কোনও প্রেক্ষাগৃহে এই দৃশ্য নিঃসন্দেহে বিরল।
৭ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার দেশ জুড়ে মুক্তি পেল শাহরুখের নতুন ছবি ‘জওয়ান’। মাঝে অতিক্রান্ত ঠিক ২২৫টি দিন। ‘পাঠান’ মুক্তির পর আরও এক বার এই ভিড় প্রমাণ করল, শাহরুখের প্রতি শহর কলকাতার নিঃশর্ত ভালবাসা এবং সমর্থনকে।
প্রথম শো দেখতে হাজির নীল এবং তৃণা। —নিজস্ব চিত্র।
ছবি শুরুর আগে প্রেক্ষাগৃহের বাইরে কী দেখা গেল? দর্শকদের মধ্যে কারও চোখে ঘুমের রেশ কাটেনি। কেউ আবার আগেভাগে নিজের টিকিট দেখে নিতে ব্যস্ত। তবে সকলের মুখেই হাসির রেখা। সেটাই তো স্বাভাবিক। আগামী ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট যে জগতে তাঁরা প্রবেশ করবেন, সেখানে তো শুধুই অনুরাগী এবং তাঁর আবেগের জয়গান। কলকাতায় ‘পাঠান’ -এর প্রথম শো ছিল সকল ৬টা ৪৫ মিনিটে। ভক্তের ঈশ্বর দর্শনের সময় এ বার এগিয়ে এসেছে প্রায় ২ ঘণ্টা। মেটিয়াবুরুজ থেকে আসা এক অনুরাগী বললেন, “এটা কোনও সমস্যাই নয়। মাঝ রাতে শো থাকলে আরও ভাল হত। প্রয়োজনে সারা রাত এখানেই থাকতাম। কিন্তু শাহরুখকে সবার আগে পর্দায় দেখতে চাই।” দমদম থেকে আসা এক অনুরাগী জানালেন প্রথম দিনেই তাঁর দু'বার ‘জওয়ান’ দেখার পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু সাধারণ সিনেপ্রেমীরা নন, কাক ভোরে শাহরুখ দর্শনের সাক্ষী হতে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত হয়েছিলেন তারকাদের একাংশ। স্বামী নীল ভট্টাচার্যকে সঙ্গে করে এসেছিলেন তৃণা সাহা। অভিনেত্রী বললেন, “আসতেই হত। আমরা দু’জনেই শাহরুখের ফ্যান। এ রকম একটা অভিজ্ঞতা হাতছাড়া করতে চাইনি।”
অবশেষে সেই প্রতীক্ষিত মুহূর্ত উপস্থিত। নির্ধারিত সময়ে সিনেমা শুরু হল। ব্যান্ডেজের ফাঁকে ফুটে উঠল একটি চোখ। শাহরুখ খানের প্রথম ঝলকে প্রেক্ষাগৃহে কান পাতা দায়। দর্শকদের চিৎকারে ভোরের প্রেক্ষাগৃহে তখন অন্য শহরের ছোঁয়া। ‘জিন্দা বান্দা’ গানে একাংশ আসন ছেড়ে উঠে পা মেলালেন। নয়নতারাকে দেখে যেমন হাততালি পড়ল, বিজয় সেতুপতিও সেখানে কোনও অংশে কম নন। দীপিকা পাডুকোনের এন্ট্রিতেও দর্শকরা একই রকম পাগলামো করলেন। বড় পর্দায় সিনেমার যে কোনও বিকল্প নেই, সেটাই প্রমাণ করল দর্শকদের বাঁধ ভাঙা আবেগ।
‘জওয়ান’-এর পোস্টারে মালা পরাচ্ছেন ভক্তরা। —নিজস্ব চিত্র।
‘জওয়ান’-এর অগ্রিম বুকিং শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রথম কয়েক দিনের শো-এর টিকিট বিক্রি প্রায় শেষের দিকে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে তা ‘পাঠান’ এর অগ্রিম টিকিট বিক্রিকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি জানা যায়, নিউটাউনের মিরাজ সিনেমাজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় ‘জওয়ান’- এর শোয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই প্রসঙ্গে সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিত শর্মা আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, “‘জওয়ান’-এর প্রথম দিনে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় আমাদের প্রেক্ষাগৃহে সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। তাই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।”
বৃহস্পতিবার সারা দিনটা হিন্দি ছবির ইতিহাসে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, তার ইঙ্গিত দিল শহর কলকাতা। চলতি সপ্তাহে শাহরুখের ছবি বক্স অফিসে কী কী নজির গড়বে, তার দিকে নজর থাকবে।