Tollywood

করোনার গুঁতোয় আপাতত কারাগারেই ‘নেতাজি’, মিমের ঠ্যালায় জেরবার ‘বাবা লোকনাথ’

কাজের দুনিয়ায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল ‘জয় বাবা লোকনাথ’ ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২০ ১৫:১১
Share:

জয় বাবা লোকনাথ। ছবি: সংগৃহীত।

করোনার করুণায় বদলে যাচ্ছে চিত্রনাট্য, একাধিক চরিত্র। বয়সের কারণে যাঁরা শুটিংয়ে আসতে চাইছেন না বা পারছেন না, তাঁদের বিকল্প তো আনা হচ্ছেই। আগামী দিনে আরও কিছু বদল হয়ত দেখা যাবে প্রধান চরিত্রগুলোতেও।

Advertisement

কী ভাবে কতটা বদলাচ্ছে চ্যানেলগুলির মুখ্য চরিত্রেরা?

ফ্লোরের ভবতারিণী মন্দিরের সেট থেকে ‘রাসমণি’ দিতিপ্রিয়া রায় জানালেন, “মাস্ক, গ্লাভস, এ সবে একটু তো অসুবিধে হচ্ছেই। তার ওপর লম্বা লম্বা সংলাপ বলতে হচ্ছে। চিত্রনাট্য পড়ার অভ্যেস প্রায় চলেই গিয়েছিল। সকলের মানিয়ে নিতে তাই একটু সময় লাগছে। তবে শুটিং চলছে জোরকদমে।”

Advertisement

আগামী কাল ১৫ জুন থেকে করোনা সতর্কতায় রানিমার সংলাপ বা চিত্রনাট্যে কোনও বদল দেখবে কি দর্শক? ‘‘কোনও বদল নেই’’— আশ্বস্ত করলেন দিতিপ্রিয়া। বললেন, ‘‘রানি রাসমণি পিরিয়ড ড্রামা। করোনার কোনও প্রভাব সেই সময় ছিল না। এবং ইতিহাস মেনে তা দেখানোও যাবে না। হয়ত ভক্ত সংখ্যা কম দেখানো হতে পারে। সেটাও মেকআপ করে দেবে প্রযুক্তি। ফলে, দর্শক এই সূক্ষ্ম ফাঁকটুকু ধরতে পারবে না। গবেষণা করে যে ইতিহাস আমরা পেয়েছি তাকে সামনে রেখেই এগিয়ে যাবে ধারাবাহিক।’’

‘প্রথমা কাদম্বিনী’র ঊষসী রায় আগেই জানিয়েছিলেন, ‘‘খুব শিগগিরিই নতুন ছন্দে ফিরতে চলেছে বাঙালি। আবার শুরু শুট। ৮৪ দিন ধরে সবাই জানতে চেয়েছেন, কবে তোমায় কাদম্বিনী হিসেবে পর্দায় দেখা যাবে? এখন বলছি, তার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গল্পেও আপাতত তেমন বদল নেই।’’

আরও পড়ুন: সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার, আত্মহত্যা বলে সন্দেহ

বদল নেই আরেক মেগা ‘নকশি কাঁথা’-তেও। অন্যতম চরিত্র রোহিণী চৌধুরী ওরফে স্নেহা চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শুক্রবারথেকে ফ্লোরে আসছি। এখনও কোনও বদলের কথা শুনিনি। কারণ, মুখ্য চরিত্রদের কেউই পঞ্চাশোর্ধ্ব নন। আর মাধবী আন্টিকে খুব ঘন ঘন ডাকাও হয় না। এমনিতেই একসঙ্গে প্রচুর কাস্ট নিয়ে শুট কোনও দিনই হত না। তাই এখনই হয়ত পরিবর্তনের দরকার হবে না।’’

আড়াই মাস পরে শুটিং। আগে-পরের অভিজ্ঞতা কেমন? স্নেহা বললেন, ‘‘এত দিন পর কাজে আসার আগে একটু ভয় ভয় করছিল। তবে স্টুডিওয় পা দিয়ে সে সব কেটে গিয়েছে আস্তে আস্তে।’’

বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তিনি বাড়ি থেকে নিজের মেকআপ নিজেই করে আসছেন। খাবারও খাচ্ছেন বাড়ির। স্নেহা অ্যাকিউট অ্যাজমার রোগী। সমস্যা শুরু হলে ইনহেলার নয়, ইনজেকশন নিতে হয়। জানালেন, তাই এই বাড়তি সতর্কতা। এ কথা তিনি জানিয়ে রেখেছেন প্রযোজককেও।

কাজের দুনিয়ায় পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল ‘জয় বাবা লোকনাথ’ ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। ‘করোনার হাত থেকে রেহাই নেই ঈশ্বরেরও’ বা ‘স্যানিটাইজারে হাত ধুতে হচ্ছে বাবা লোকনাথকেও’ গোছের মিমের ছড়াছড়ি তাঁকে নিয়ে। জানাতেই সামান্য বিব্রত ভাস্বর, ‘‘যে যা পারছে মিম বানিয়ে ছাড়ছে। চোখে পড়েছে।’’

প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন? ‘‘নো চাপ। কম লোক নিয়ে শুট হচ্ছে। পায়ে হাত দিয়ে নয়, হাত জোড় করে এখন বাবাকে প্রণাম জানাতে হবে’’— উত্তর ভাস্বরের। জানালেন, ‘‘টেলিপাড়া এখন দুর্গ। নির্দেশিকা মেনে এতটাই কড়া প্রহরা এখানে যে, করোনা তো দূর অস্ত্, মাছি গলারও সাধ্য নেই!’’

নেতাজি-র চরিত্রে অভিষেক বসু।

তবে সম্ভবত বদল আসছে জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘নেতাজি’তে। ধারাবাহিকের মূল চরিত্রাভিনেতা অভিষেক বসু জানালেন, ‘‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মারা গিয়েছেন। আমি জেলে। এই ছিল করোনার আগের দৃশ্য। তার কন্টিনিউটি ধরে রাখতে আগামী দিনেও তাই জেলের দৃশ্যই দেখানো হবে। এই ধারাবাহিকে কোনও ভাবেই করোনা, লকডাউন, ত্রাণ আনা যাবে না।’’

সামাজিক দূরত্ব মেনে জেলের কুঠুরিতেও কি একা দেখানো হবে নেতাজিকে? অভিষেকের উত্তর, ‘‘তা হবে না। তবে সংখ্যা কমে যাবে। এখন দৃশ্যে একটি কুঠুরিতে দেখা যাবে ৩-৪ জন কয়েদিকে।’’

জেল থেকে কবে ছাড়া পাবেন সুভাষচন্দ্র বসু? এ বার একটু দ্বিধা জড়ানো কণ্ঠে অভিষেক জানালেন, ‘‘নেতাজি বহু বার জেলে গিয়েছেন। এপিসোডে তাঁর তৃতীয় জেলযাত্রা দেখানো হচ্ছে। আপাতত এটাই ধরে রাখা হবে। তবে খুব শিগগিরিই জেল থেকে বাড়ি ফিরবেন নেতাজি।’’

এ দিকে এখনও বদল নিয়ে আলোচনা চলছে স্টার জলসার ‘প্রথমা কাদম্বিনী’ মেগার। ফলে, পিছিয়ে গিয়েছে শুটিংয়ের ডেট, জানালেন ‘কাদম্বিনী’ সোলাঙ্কি রায়। শনিবার, ১৩ জুন থেকে কলটাইম ছিল তাঁর। সোলাঙ্কির কথায়, ‘‘এটা জেনেছি, সোমবার থেকে শুট শুরু হবে। তবে কলটাইম এখনও পাইনি। ফলে, কী কী বদল ঘটছে কিছুই জানি না।’’

ওই চ্যানেলের আরেকটি মেগা ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এর সাধক বামাক্ষ্যাপা সব্যসাচী চৌধুরী শেয়ার করলেন এক ভিন্ন ঘটনা। জানালেন, ‘‘করোনার ঠিক আগে আমরা একটা এপিসোড করেছিলাম। সেখানে দেখানো হয়েছিল তারাপীঠে অতিমারি। সেই সময় ওলাওঠা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর ইত্যাদিতে উজাড় হয়ে যেত গ্রামের পরে গ্রাম। তখন গ্রামবাসীরা মানত করতেন বড়ো মায়ের থানে এসে। এই পর্ব শুটের সময় ইউনিটের কেউই বুঝতে পারেননি এ রকমই কিছু ভয়ানক ঘটনা ঘটতে চলেছে আমাদের সঙ্গে!’’

তবে বদল বামা-র চরিত্রেও আসছে না। কারণ, বামা বেশির ভাগ সময় মন্দিরে একা থাকেন বড় মায়ের সঙ্গে। শ্মশানে সাধনায় বসেন। আর সাষ্টাঙ্গ প্রণাম? সেটা হচ্ছে? হাসিমাখা উত্তর দিলেন সব্যসাচী, ‘‘ফ্লোর এত বার স্যানিটাইজড হচ্ছে যে, সাষ্টাঙ্গে প্রণামে কোনও অসুবিধে নেই।’’

করোনা পরবর্তী সময়ে একটি করে দিন যাবে, এ ভাবেই হয়ত আরও বদলাবে টেলিপাড়া। কী ভাবে, কোন দিক দিয়ে? উত্তর মিলবে ধীরে ধীরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement