Anik Dutta

ছবির বিষয় নির্বাচনে অনীক কি ‘সেফ’ খেলছেন? আনন্দবাজার অনলাইনে উত্তর দিলেন পরিচালক

‘অপরাজিত’র সাফল্যের পর ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’। সত্যজিৎ রায়ের ‘অনুপ্রেরণা’ থেকে বেরোতে পারছেন না কেন অনীক?

Advertisement

অভিনন্দন দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২২ ১৩:০৭
Share:

পরিচালক অনীক কি এখন ‘সেফ’ খেলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

কালজয়ী ছবি ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির নেপথ্যকাহিনি নিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘অপরাজিত’। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে ছবিটি ছিল প্রয়াত পরিচালকের প্রতি অনীক দত্তের শ্রদ্ধার্ঘ্য। ঝুঁকি নিয়েছেন। সাফল্যও এসেছে। সম্প্রতি আবির চট্টোপাধ্যাকে নিয়ে নতুন একটি ছবির ঘোষণা করেছেন অনীক। এই ছবির নাম ও গল্প বলার ধরনেও রয়েছে ফেলুদা তথা সত্যজিতের নির্ভুল ছাপ। ছবির নাম ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’। সেলিব্রেট করা হবে বাঙালির প্রিয় গোয়েন্দার ‘মগজাস্ত্র’কে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে অনীকের কাছে প্রশ্ন ছিল— পর পর দুটো ছবিতে সত্যজিৎ কেন? ‘‘প্রায় সাত বছর ধরে আমি এই ছবিটা তৈরির পরিকল্পনা করছি। তার চেয়েও বড় কথা, কী কী কাঠখড় পুড়িয়ে এই ছবিটা এখন ফ্লোরে যাচ্ছে, সেটা মনে হয় পাঠকের আগে জানা উচিত,’’ বললেন অনীক।

‘অপরাজিত’ ছবির একটি দৃশ্যে অভিনেতা জীতু কমল। ছবি: সংগৃহীত।

ছবিটি প্রথমে ইংরেজিতে তৈরি করতে চেয়েছিলেন অনীক। প্রস্তাব এসেছিল ‘বিগ সিনার্জি’র কর্ণধার তথা ‘কওন বনেগা ক্রোড়পতি’র স্রষ্টা সিদ্ধার্থ বসুর তরফে। কিন্তু সেই সময় ছবিতে ফেলুদার সরাসরি কোনও ‘রেফারেন্স’ ছিল না। এর পর ছবিটি ভাবা হয়েছিল হিন্দিতে। অনীকের কথায়, ‘‘সিদ্ধার্থ নাকি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ দেখার পর ৪০টা ডিভিডি কিনে পরিচিতদের ছবিটা দেখতে অনুরোধ করেন। তার মধ্যে অমিতাভ বচ্চন ও জয়া বচ্চনের নামও ছিল। তার পর থেকেই ওঁরা আমার সঙ্গে একটা ছবি করতে চাইছিলেন।’’ কিন্তু ছবিটা করতে ছ-সাত মাস সময় চেয়েছিলেন সিদ্ধার্থ। ‘‘এর পরেই প্রযোজনা সংস্থার মালিকানা বদলে যায়। তার পর প্রযোজনা সংস্থা ‘পেন’- এর কর্ণধার জয়ন্তীলাল গাড়া আমাকে হিন্দিতে ছবিটা করতে বলেন। কথাবার্তা এগোলেও ওঁরা যা কাস্টিং চাইছিলেন, সেটা আমার পছন্দ হয়নি। তাই সে বারেও ছবিটা আর হল না।’’

Advertisement

এর পর কলকাতার পালা। প্রকল্পকে বাস্তবের পর্দায় তুলে ধরতে অনীক তখন বদ্ধপরিকর। এক রিয়েল এস্টেট সংস্থা ছবিটা প্রযোজনা করতে রাজি হল। গল্প সাজানো হল বাংলার প্রেক্ষাপটেই। বাজেটও তৈরি। ছবির প্রস্তুতি সারা। অনীকের কথায়, ‘‘কিন্তু হঠাৎ ওরা আমার সঙ্গে যাবতীয় যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন! ফোন ধরলেন না! মেসেজের উত্তরও দিলেন না। বুঝলাম, ছবিটা আর ওঁরা করবেন না।’’ এর পর আরও এক প্রযোজকের (যাঁরা অতীতে পরিচালকের অন্য একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন) সঙ্গে একই রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন অনীক। ফলে অপেক্ষার পালা শুরু। শেষে প্রযোজক ফিরদৌসুল হাসান এগিয়ে এলেন। অনীকের কথায়, ‘‘এতগুলো কথা বললাম, কারণ আমি এই ধরনের অশিক্ষা এবং অসভ্যতা বরদাস্ত করতে রাজি নই। দ্বিতীয়ত, আশা করি এটাও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ‘অপরাজিত’র বেশ কিছু বছর আগে থেকেই এমন একটা ছবি তৈরির পরিকল্পনা আমার ছিল।’’

কিন্তু অনীকের নতুন ছবির ঘোষণার পর থেকে ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন মহলে এমনও শোনা যাচ্ছে যে, ‘অপরাজিত’র সাফল্যের কথা মাথায় রেখেই ‘যত কাণ্ড কলকাতায়’ ছবিটির ভাবনা। যা নিয়ে অনীকের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘বিষয়টা নেহাতই কাকতালীয়। একটা ছবি করেছি বলে অন্য ছবিটা তো বাতিল করে দিতে পারি না!’’ তা হলে কি ছবি তৈরির ক্ষেত্রে পরিচালক অনীক এখন ‘সেফ’ খেলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন? পরিচালকের জবাব, ‘‘লোকে হয়তো বলছে, ‘সত্যজিৎকে ভাঙিয়ে করে খাচ্ছে!’ কিন্তু এত দিনে মানুষের বোঝা উচিত যে, আমি প্রথম ছবি থেকেই ‘আনসেফ’ খেলি। তা ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও আমি ‘সেফটি’র তোয়াক্কা করি না! আর কেউ যদি মনে করেন আমি ‘সেফ’ খেলি, তো বেশ করি!’’

অনীক পরিচালিত ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবির একটি দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত।

‘অপরাজিত’ যে খুব একটা ‘সহজ’ সিদ্ধান্ত ছিল না, সে কথাও মনে করিয়ে দিতে চাইছেন পরিচালক। ‘‘পান থেকে চুল খসলে সমালোচনার ঝড় উঠত। মানুষ আমাকে রাস্তায় ধরে মারধরও করতে পারতেন। এগুলোও তো ভেবে দেখা উচিত,’’ বললেন তিনি। সেই প্রসঙ্গেই তাঁর দৃষ্টিকোণ ফিরল টলিপাড়ার দিকে, ‘‘সেফ খেলেও তো অনেকে কিছুই করতে পারছেন না। তামিল ছবির রিমেক করেও তো শেষরক্ষা হচ্ছে না! নিজেদের দল তৈরি করে আর কত দিন চলবে?’’

এমনও বলা হয়, অনীকের ছবিতে সত্যজিতের প্রচ্ছন্ন রেফারেন্স থাকে। অনীকের জবাব, ‘‘ভূতের ভবিষ্যৎ বা আশ্চর্য প্রদীপ— উদাহরণ অনেক। আর সেটাই তো স্বাভাবিক। কারণ, আমি খুব বেশি সিনেমা দেখি না। যেটুকু দেখেছি, তার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছেন সত্যজিৎ রায়। তাই অনুপ্রেরণা থাকাটাই স্বাভাবিক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পর্যন্ত তাঁর পরবর্তী জীবনে বলেছিলেন যে, রবীন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। সেখানে আমি তো নগণ্য।’’

অনীক বরাবরই স্পষ্টবক্তা। সে জন্য তাঁকে যেমন সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তেমনই ইন্ডাস্ট্রিতে শত্রুর সংখ্যাও বেড়েছে। অনীক বলছিলেন, ‘‘আমি কোনও বীরপুরুষ নই। আমার কোনও নির্দিষ্ট মতবাদ নেই। নিজেকে সমাজ সংস্কারক বলেও মনে করি না। যখন যেটা মনে হয়, তখন সেটাই বলি। যদি মিথ্যা বলি, বা সত্য গোপন করি, তা হলে তো সেটা আমার ছবির মধ্যেও প্রতিফলিত হবে!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement