তৃণা সাহা এখন, তৃণা সাহা তখন।
ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখত। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় নিয়মিত থিয়েটার, মঞ্চে অভিনয়...ঠিকই চলছিল সব কিছু। কিন্তু মধ্যিখানে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁর ৯৬ কেজির শরীর এবং নানা শারীরিক সমস্যা। তিনি সারা আলি খান। ভক্তদের হৃদয়ে হিল্লোল তোলা সইফ-কন্যার ‘ফ্যাট টু ফিট’ হওয়ার জার্নিটা সকলেরই জানা। ৩০ কেজি ওজন কমিয়ে যিনি এখন রীতিমতো সেনসেশনাল ডিভা। কিন্তু টলিপাড়াতেও যে এমন এক জন অভিনেত্রী রয়েছেন, সে খবর কি রয়েছে আপনার কাছে? ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা পাকা করতে রাতারাতি তাঁকেও ঝরিয়ে ফেলতে হয়েছিল ১৮ কেজি ওজন।
তৃণা সাহা। কখনও তিনি ‘খোকাবাবু’ ধারাবাহিকের ‘তরী’। আবার কখনও বা ‘কলের বউ’। সিনেমাতেও অভিনয় করছেন চুটিয়ে। তন্বী অভিনেত্রীকে দেখলে কে বলবে বছর তিনেক আগেও তাঁর ওজন ছিল ৭২! ভারী চেহারা নিয়ে যারা চিন্তায় থাকেন, তাঁদের কাঁছে অনুপ্রেরণা হতে পারে তৃণার এই বডি ট্রান্সফরমেশনের গল্প।
সৌজন্যে ব্যালেন্সিং ডায়েট, জিম, কঠিন অধ্যবসায়, তৃণার ফিগার এখন ঈর্ষণীয়
সহকারী পরিচালক হিসেবে নিজের কেরিয়ার শুরু করা তৃণা ভাবেননি অভিনেত্রী হবেন তিনি। সময়টা ২০১৬-র শুরুর দিক। ৭২ কেজির মেয়েটি নেহাতই ঝোঁকের বশে ‘খোকাবাবু’ ধারাবাহিকের অডিশন দিতে চলে গিয়েছিল। লিড ক্যারেক্টারের অডিশন। কিন্তু পৌঁছেই প্রযোজক স্নেহাশিস চক্রবর্তী তাঁকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, ‘‘আগে রোগা হয়ে এস, তার পর তোমায় নিয়ে ভাবব।’’ প্রথম বার নিজের ওজন নিয়ে ধাক্কা খায় মেয়েটি। কানে বাজতে থাকে, ‘‘তার পর তোমায় নিয়ে ভাবব।’’ চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নেন তৃণা। জিমে ভর্তি হন। খাবার দাবারেও রাশ টানতে হয় তাঁকে। ময়দা, কাঁচা নুন, মিষ্টি...বাদ হয়ে যায় জীবন থেকে। ১৫ দিনের মধ্যে ছয় কেজি ওজন ঝরিয়ে জীবনের প্রথম টলি ব্রেকের জন্য নির্বাচিতও হয়ে গেলেন। ৬৬ কেজির তৃণা দিয়ে ফেললেন জীবনের প্রথম ‘প্রোমো শুট’। কিন্তু টিভিতে সেই প্রোমো সম্প্রচার হতেই তাঁর মাথায় হাত! “একী! এত মোটা লাগছে আমাকে। হিরোইন মনে হচ্ছে না কোনওভাবেই।’’ চিন্তায় পড়ে যান তিনি। অগত্যা, আবারও ব্যালেন্সিং ডায়েট, জিম, কঠিন অধ্যবসায়। ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। শুধুমাত্র যে সিরিয়ালের জন্যই তাঁর এই রোগা হওয়া ফলপ্রদ হয়েছে এমনটা নয়, কাজে এনার্জি এসেছে। হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘‘যে কোনও জামাই এখন টেনশন ছাড়া পরতে পারি।’’
না, সারার মতো পলিসিস্টিক ওভারি ছিল না তাঁর। নাচটা শিখতেন ছোট থেকেই। ‘হাতি’, ‘কুমড়ো পটাশ’ নানা নামে ছাত্রজীবনে মস্করার পাত্রীও হতে হয়নি তাঁকে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। এই যেমন সারার কথাই ধরা যাক। বাড়ি ফিরে কেঁদে ফেলেছিলেন এক বার, বডি শেমিংয়ের কোপে পড়তে হয়েছিল তাঁকেই।
আরও পড়ুন:রাজ-শুভশ্রী পুজো দিলেন কোথায়?
তৃণার ফিট থাকার মূলমন্ত্র ‘ব্যালেন্স ইন রেগুলার ডায়েট’
তা হলে ব্যাপারটা কী দাঁড়াচ্ছে? বডি শেমিংয়ের মতো ঘৃণ্য প্র্যাকটিসের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতেই কি ওজন কমানো দরকার? একেবারেই নয়। বলছেন তৃণাও। ‘‘চকলেট খেতে ইচ্ছা করছে? খেয়ে নাও। পাশাপাশি ব্যালেন্স করে সেই ক্যালরি ঝরিয়েও নাও।’’ তৃণার কাছে ফিট থাকার মূলমন্ত্র ‘ব্যালেন্স ইন রেগুলার ডায়েট’। কে কী বলল সে নিয়ে ভাবিত না হয়ে, নিজের জন্য, নিজের শরীরের জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ওজন কমানো দরকার। ‘ওবেসিটি’ একটি রোগ। যেই রোগের ওষুধ রয়েছে আপানার নিজের হাতেই। সুস্থ জীবনযাপন আর সুষম আহার। ব্যস, তাহলেই কেল্লাফতে।
বহু পুরুষের হৃদয় হরণ করা তৃণা আজ ৫৪ কেজির। কী ভাবছেন? কাল থেকে আপনিও রোগা হওয়া শুরু করবেন না কি?