স্ত্রী নন্দিনী ও মেয়ে সোহিনীর সঙ্গে।
শান্তিনিকেতনের বাড়ি থেকে গাড়িতে কলকাতায় ফিরছিলাম। ড্রাইভারের চোখ লেগে যাওয়ায় গাড়িটা অ্যাকসিডেন্ট করেছিল। ও (তাপস) প্রচণ্ড চোট পেয়েছিল। সেই দুর্ঘটনার পরে বাড়িতে ফিরে দু’দিন পরে আবার পা পিছলে পড়ে যায়। চোটের জায়গায় ফের চোট লাগায় সবটা লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে। রিবকেজ আর কোমরে অসহ্য যন্ত্রণা। আসলে রিব-এ ক্র্যাক হলে ব্যান্ডেজ করা যায় না। বসতে-হাঁটতেও কষ্ট। শরীরে প্রচণ্ড অস্বস্তি এবং ব্যথাটা বেশি বলে এত দিন লিকুইড ডায়েট চলেছে। হজমের সমস্যাও আছে। তবে এ বার নর্মাল ডায়েটে ফিরবে। আর ওকে ওজন অনেকটা কমাতে হয়েছে শরীরের কারণে।
গোটা জীবন ধরে ও অনেক সাফার করেছে। তার প্রভাব তো একটা রয়েছেই। ’৯৩-তে হেড ইনজুরি হয়েছিল। দীর্ঘদিন কোমায় থেকেছে। তার পরেও এত বছর কাজ করে গিয়েছে। কোমরে আঘাত লেগেছিল, স্পাইনে অপারেশন হয়েছে... তাপসের সমস্যা অনেক। তবে সুগারটা এখন কন্ট্রোলড। প্রেশারও আছে। খাবারে কড়াকড়ি মেনে চলতে হয়। লাস্ট দুটো অ্যাক্সিডেন্ট ওকে খুব কাবু করে দিয়েছে।
নিজেদের গণ্ডিটা আমরা খুব ছোট করে এনেছি। আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুরা যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা খোঁজ নেন। রাজনীতির ক্ষেত্রে ডেরেক (ও’ব্রায়েন) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। খুব হার্শ রিয়্যালিটি থেকে উঠে এসেছি তো, তাই চাইও না ওকে আর কেউ জাজ করুক। কোনও কিছুর জবাবদিহিও করতে চাই না। ওকে যে ভাবে বিচার করা হয়েছে, তাতে মনে হয় এন্টারটেনমেন্ট জগতে যেন ওর কোনও অবদান নেই! এটা অবশ্য আমার মত।
এখন ওর দিন মোটামুটি রুটিনে বাঁধা। সাধারণত সকাল সাড়ে সাতটা-আটটার মধ্যে উঠে পড়ে। তার পরে বাড়িতে ঠাকুরমশাই আসেন, তখন নীচে যায়। পুজো হয়ে যাওয়ার পরে একটু হাঁটাহাঁটি করে ব্রেকফাস্ট করে। কখনও কখনও শান্তিনিকেতনের বাড়িতে যায়, কখনও মুম্বইয়ে। ওখানে আমাদের মেয়ে (সোহিনী) থাকে। এই সময়টায় তনুদার (তরুণ মজুমদার) সঙ্গে ওর সম্পর্কটা আরও কাছের হয়েছে। উনি আসেন, নিয়মিত খবর নেন। আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। একবার সেখানে তনুদা এসে খাওয়াদাওয়া করেছেন, খেয়াল করেছিলেন, তাপসের খাবারটা খুব হালকা রান্না। ও তো খুব খেতে ভালবাসত। রাতের দিকে আমার কাছে তনুদার ফোন, ‘‘শোনো নন্দিনী, আমরা কি ডাক্তারকে বলতে পারি না, তাপসকে মাঝেমধ্যে একটু মুখরোচক খাবার খাওয়ার অনুমতি দিতে?’’ হাতে গোনা এই ভালবাসার মানুষ পাশে থাকলে আমার মনে হয়, সংখ্যা বাড়ানোর আর দরকার নেই।