নতুন ছবি নিয়ে অকপট মীর।
প্রশ্ন: চার বছর পরে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়-মীর আফসার আলি আবার এক ফ্রেমে। নায়িকা পর্দায় আরও ধারালো হয়েছেন?
মীর: স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ধারালো বরাবরই। তাঁকে মাপার স্পর্ধা আমার নেই। এবং শুধু যে মুম্বইয়ে গিয়ে কাজ করছেন বলে নয়। তিনি যখন এখানে ছিলেন, তখনও তাঁর কাজের দাপট সবাই দেখেছেন। যে কোনও ছবিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে স্বস্তিকা একাই যথেষ্ট। এতটাই শক্তিশালী তিনি। ওঁর অন্তত নায়কের প্রয়োজন পড়ে না। স্বস্তিকা হিরো-হীন হয়েও সব দিক থেকেই হিরোইন!
প্রশ্ন: হিরোইনের দুষ্টুমিটাও কি বেড়েছে?
মীর: স্বস্তিকা সাধারণত দুষ্টুমি করে না। ওটা আমিই বেশি করি। নানা ভাবে পিছনে লাগি, মজা করি। স্বস্তিকা ডিমের আঁশটে গন্ধ একেবারে সহ্য করতে পারে না। আর আমি ভ্যানিটি ভ্যানে ওর পাশে বসে দুটো ডিমের পোচ খেয়েছি! “চোখ বন্ধ করো, তোমায় একটা জিনিস দেখাব” বলে চোখের সামনে বাটিটা ধরতেই স্বস্তিকা যেন ছিটকে উঠেছে। ও দৃশ্যটাও সহ্য করতে পারে না। তা হলেই বুঝুন, দুষ্টুমি কে করে! আরও একটি কারণে এ সব করি। এই ছবিতে আমার মুখে সংলাপ ভীষণ কম। শুধু আমার উপলব্ধি, অনুভূতি প্রকাশের ভঙ্গিতেই যেন চলছে ছবিটা। আমাকেও তো কিছু করতে হবে! (গম্ভীর মুখে রসিকতার ছাপ স্পষ্ট)
প্রশ্ন: তা হলে ‘বিজয়ার পরে’ ছবির ‘মিজানুর’ চরিত্রের জন্য রাজি হলেন কেন?
মীর: আসলে, চরিত্রটিকে আলাদা করে দেখিনি। গল্পের জন্য ‘মিজানুর’ কতখানি উপযুক্ত, তা অনুভব করেই রাজি হয়েছি।
প্রশ্ন: এটাও কি মনে হয়েছে, ধর্ম নিয়ে কটাক্ষের শিকার হওয়া মীরের হয়ে বার্তা দেবে ‘মিজানুর’?
মীর: এ রকম একেবারেই ভাবছি না। মিজানুর আখতার অভিজিৎ শ্রী দাসের ‘বিজয়ার পরে’ ছবির একটি চরিত্র মাত্র। অভিনয়ের কারণে এই চরিত্র না হয়ে ‘রতন ভট্টাচার্য’ও হতেও পারতাম। চরিত্রের মাধ্যমে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করিনি, ভাবিওনি। অনেকেই বলেন, এই ছবিতে একটি সামাজিক বার্তা রয়েছে। আমি মানি না। যখনই কোনও ইস্যু তৈরি হয়েছে, স্বাধীন বিশ্বের স্বাধীন নাগরিক মীর আফসার আলি মুখ খুলেছে। আগামী দিনেও খুলবে। মনে যদি জল জমে, তা পরিষ্কার করা সবার আগে দরকার। ওটা বেনো জল।
প্রশ্ন: ‘মাইকেল’-এর পরিচালক সত্রাজিৎ সেনের মতোই অভিজিৎ-ও নতুন। কাজ করে কেমন লাগছে?
মীর: ভাল লাগছে। নতুন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার লাভ-লোকসান দুই-ই রয়েছে। লোকসানের দিকটিই সবাই আগে দেখেন। দর্শক এই পরিচালকের ছবি দেখবেন তো? বাণিজ্যসফল হবে তো? কেউ হয়তো জানতেই পারবেন না, ছবিটা কখন এল আর গেল... ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বলব, লাভও অনেকখানি। নতুন পরিচালকের মন, দেখার ভঙ্গি তাজা থাকে। ফলে, নতুন কিছু পাওয়া যায়। কাজ করতে ভাল লাগে। এঁরাও নতুন ভাবে ভাবতে পারেন। তাঁর ঘাড়ে তখনও সাফল্য-ব্যর্থতার বোঝা চাপে না। আবার, প্রথম পরিচালনাতেই সফল বহু পরিচালক। অনীক দত্তের প্রথম ছবি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এও আমি ছিলাম। অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম ছবি ‘চ্যাপলিন’-এ কাজ করেছিলাম। বাণিজ্য, জনপ্রিয়তা বলছে, তাঁরা কিন্তু সফল।
প্রশ্ন: মমতাশঙ্করের সঙ্গে প্রথম কাজ। দীপঙ্কর দে-র সঙ্গে অনেক দিন পরে আবার আপনি...
মীর: দীপঙ্করদার কথাই আগে বলি। ৮০ পেরিয়েও নিয়মিত অভিনয় করছেন। শ্যুটের দিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে শট দেন। দেখে শেখার মতো। মাঝেমাঝে যদিও দাদা মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। খিটখিট করেন। আমি কিন্তু উপভোগ করি। মম মাসি প্রতিটি শট দেওয়ার পরে নিজের অভিনয় নিয়ে এখনও খুঁতখুঁতে! আমাদের থেকে জানতে চান, “শটটা ঠিক হল না, তাই না? তা হলে আরেকটি শট দিই।” আমরা থামাই তাঁকে। তখন বলেন, আমাদের পাশে অভিনয়ে উনি নাকি ম্লান! সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয় করা অভিনেত্রীর মুখেই বোধ হয় এই কথা মানায়। উনি কিন্তু কোনও দিন বাবা উদয় শঙ্করের ঘরানা নিয়ে অহঙ্কারও দেখাননি।
কোনও গুঞ্জনকে তোয়াক্কা করেন না মীর।
প্রশ্ন: ছবির গল্প কি প্রজন্মের দূরত্ব, তার থেকে তৈরি ফাঁকের কথা বলবে?
মীর: গল্পের কিছুই এখনই বলা যাবে না। উৎসবকে ঘিরে পরিবারের সদস্যদের বাড়ি ফেরার গল্প নতুন নয়। বিষয়টি নিয়ে একাধিক ছবি হয়েছে। এখানে চরিত্রদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দ্বন্দ্ব, গল্প বলার ভঙ্গি বাকিদের থেকে এই ছবিকে আলাদা করেছে। তবে প্রজন্মের দূরত্ব বা ফাঁক তৈরি হওয়ার কোনও ব্যাপার এখানে নেই।
প্রশ্ন: দুই প্রজন্মের এই দ্বন্দ্ব কি আপনার আর আপনার মেয়ে মুসকানের মধ্যে রয়েছে?
মীর: একেবারেই না। বরং ওর থেকে আমি অনেক কিছু শিখি। গুগলে কিছু খোঁজার বদলে মুসকানের সঙ্গে দু’মিনিট কথা বললেই মুশকিল আসান। সব বুঝিয়ে বলে দেয়। প্রায়ই আমায় এই নিয়ে বলে, ‘‘তুমি বড্ড প্রাচীনপন্থী! তুমি এখনও ‘ইয়েস্টারডে’-তে রয়ে গিয়েছ!’’ কিংবা যখন বলে, ‘‘তুমি এটাও জান না!’’ খুব মজা পাই। আমিও মজা করে বলি, ‘‘তা হলে আমায় ‘টুডে’ করে দে।’’ শুধু মেয়ে নয়, এই প্রজন্মের রেডিয়ো সঞ্চালকদের বলা কথাগুলোও আমায় খুব টানে। আমি গোপনে ওদের শুভেচ্ছা জানাই। মনে মনে ভাবি, আমিও যদি ওদের মতো করে বলতে পারতাম! একই সঙ্গে সজাগ থাকতে হয়, সঞ্চালনার সময়ে আমিও যেন সমসাময়িক থাকতে পারি।
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে আপনি আর স্বস্তিকা চর্চায়। খাবারের প্রচার, বিয়েবাড়ি হয়ে ছবিতে জুটি। উপভোগ করেন, না দম আটকে আসে?
মীর: চুটিয়ে উপভোগ করি। আরও বেশি করে চর্চায় থাকব ছবি মুক্তির সময়ে বা তার আগে। ছবি তাতেই হিট হয়ে যাবে (হাসি)। এই করে তো প্রচারে থাকতে পারছি! মন্দ কী?
প্রশ্ন: এত ভাল রসায়নের নেপথ্য রহস্য কী?
মীর: বন্ধুত্ব। স্বস্তিকা আর আমি খুব ভাল বন্ধু। স্বস্তিকা অনেকগুলো মাস কলকাতায় ছিল না। দেখা তো হতই না। কথাও হয়েছে হাতে গুনে। কখনও সখনও একটা হোয়াটসঅ্যাপ, ব্যস। গোটা লকডাউনে দেখা-কথা নেই। আমফানের ত্রাণ তহবিলের জন্য আমরা একটি লাইভ শো করেছিলাম। ব্যাপারটি ওই পর্যন্তই। সন্তু মুখোপাধ্যায় চলে গিয়েছেন মার্চ মাসে। আমি কিন্তু তার পরেও ফোন করিনি। বরং আগে নিয়মিত খবর নিতাম। স্বস্তিকা তাতেও রাগ করেনি! দিব্যি এখন আমার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: বলিউডে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন? মায়ানগরীও কি বাংলার শিল্পীদের সমীহ করে?
মীর: মাত্র একটি সিরিজে কাজ করলাম, ‘ডি-কাপল’। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে। মুখ্য চরিত্রে আর মাধবন, সুরভিন চাওলা। আমি পার্শ্ব চরিত্রাভিনেতা। এটুকু বিশ্বাস করি, তাতেও যদি ভাল অভিনয় করি, ঠিকই আমার কানে এসে পৌঁছবে। শ্রদ্ধা, সমীহ দুই-ই পাব।
প্রশ্ন: এত জনপ্রিয়, অথচ মীর কোনও রাজনৈতিক দলে নেই! কেন? যে কোনও দলের হয়ে দাঁড়ালেই জয় অনিবার্য...
মীর: আমার নিজের মাথার মধ্যেই নীতিগুলো স্পষ্ট নয়। আমি রাজনীতি কী করে করব?
প্রশ্ন: ছোট পর্দার বহু অভিনেতা বড় পর্দায়, ধারাবাহিকে সুযোগ পেলে আপনি ছোট পর্দায় যাবেন?
মীর: মেগায় অভিনয় করার মতো সময় হাতে আমার নেই। সঞ্চালনা, শো সব মিলিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত। দিনের ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিন দিয়ে দিলে সেই কাজগুলো করব কী করে?
প্রশ্ন: বড়দিনে ‘সান্তাক্লজ’ হলে মেয়েকে কী উপহার দেবেন?
মীর: একটা টাইম মেশিন উপহার দিতে চাই। যাকে পিছনে ঘুরিয়ে পুরনো সময় ফিরিয়ে আনা যাবে। ৮ জানুয়ারি থেকে মেয়ে কলেজে চলে যাবে। ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর ওকে দেখতে পাব না। মিস করব। দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে। টাইম মেশিন থাকলে আবার মুসকানের নার্সারিতে পড়ার সময়টাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম!