আবীর চট্টোপাধ্যায় আর যিশু সেনগুপ্ত একসঙ্গে 'বর্ণপরিচয়'-এ।
দু’জনের এত মিল দেখছি। কারণ কি টেলিপ্যাথি না কি ‘বর্ণপরিচয়’?
আবীর: আমাদের অ-মিল বা বন্ধুত্ব কম ছিল এ রকম তো দেখিনি কোনও দিন!
যিশু: আমার মনে হয়, ব্যোমকেশের সময় থেকে আমরা ভাগ হয়ে গিয়েছিলাম। ট্যাগলাইন জুড়ে দেওয়া হল ‘অঞ্জন দত্তর ব্যোমকেশ’, ‘অরিন্দম শীলের ব্যোমকেশ’ এই ভাবে।
বর্ণপরিচয়ের ফ্লোরে দু’জন শক্তিশালী অভিনেতা! কখনও মনে হয়নি এক জন অন্য জনকে টেক্কা দিয়ে যাচ্ছে?
যিশু: আরে হবে না কেন? এটাই তো স্বাভাবিক। ও দেখছি একটা শট দারুণ করল। আমার সঙ্গে সঙ্গে মনে হয় আমাকে আরও ভাল করতে হবে। এই প্রতিযোগিতা স্বাস্থ্যকর, যা না থাকলে অবশেষে ছবিটা ভাল হবে না। আঙুল চুষতে চুষতে বাড়ি ফিরতে হবে। তাই বলে কি ভাবব, আবীর এত ভাল কাজ করছে ওকে শেষ করে দিতে হবে! দিনের শেষে আমরা একটাই জিনিস চাই, ছবি যাতে দর্শকদের ভাল লাগে। তবে এ বছর কিন্তু ও (আবীরের দিকে তাকিয়ে) দারুণ গোল দিয়েছে। আমি ‘দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন’-এর কথা বলছি।
আবীর: (উত্তেজিত) আরে! গোলের কী আছে? তবে একটা কথা ঠিক, ছবির ভালর জন্য এই প্রতিযোগিতা খুব জরুরি। আর এ ক্ষেত্রে আরও একটা কথা বলি, আমাদের দু’জন এ রকম কোনও পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি যে আমাদের ফ্যানেরা সব জায়গায় কে বেশি ভাল তাই নিয়ে লড়ছে। সলমন ভার্সেস শাহরুখ, এ রকম হয়নি।
যিশু: (কণ্ঠস্বর গম্ভীর করে) ভাই, অত দূর যেতে হবে না! আমরা কি আর জিৎ-দেব যে লোকে লড়বে?
যিশু, আপনার কমার্শিয়াল ছবি থেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে হাতেখড়ি।
যিশু: একেবারেই তাই। স্বপন সাহা, হরনাথ চক্রবর্তী। তখন অন্য ধারার ছবির এত ভিড় কোথায়? ঋতুপর্ণ ঘোষ একটা, অপর্ণা সেন একটা, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত আর গৌতম ঘোষ একটা করে ছবি বানাতেন।ওখান থেকেই অভিনয় শেখা। আমি তো বলব আমি, আবীর, পরম, ঋত্বিক এই ধারার ছবি থেকে উঠেছি। আমাদের ছবি দেখে কেউ মালা পরাবে, পয়সা ছুঁড়বে— এটা হয় না।
আবীর: কিন্তু এখানে একটা কথা আছে। পরশুই আমি একটা মলে গিয়েছিলাম, এক পঞ্জাবি মহিলা এসে সেলফি তুললেন। দেখলাম, তিনি আমার ছবি দেখছেন। আর প্রায় নিয়মিত বাংলা ছবি দেখছেন।
যিশু: এখন বহু অবাঙালি দর্শক নিয়মিত বাংলা ছবি দেখছেন। এটা খুব বড় পাওয়া। জানেন, মেদিনীপুরে গেছি, এক জন দর্শক একটানা ‘চিত্রাঙ্গদা’-র কথা বলছেন ভাবা যায়? তখন সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। ‘চৈতন্য মহাপ্রভু’ ধারাবাহিক দেখে লা মার্টিনিয়ারের মেয়েরা ফোন করত আমায়।
আবীর: আমাদের আগে ভুল বোঝানো হত। তোমার ছবি এই অঞ্চল অবধি চলে। এটা ভুল। নৈহাটির মতো জায়গায় গিয়ে দেখেছি নিউ এজ বাংলা ছবিকে নিয়ে মানুষের কী উৎসাহ! যিশু বা পরমের মতো আমি হিন্দিতে কাজ করিনি। যিশুকে সারেগামাপা-য় রোজ দেখছে লোকে। কিন্তু আমি যখন মুম্বই গেছি ফেস্টিভ্যালে তখন আমাকে ঘিরে ধরে লোকে বাংলা ছবি নিয়ে কথা বলছে। সাবটাইটেলে প্রচুর অবাঙালি মানুষ বাংলা ছবি দেখছেন। এটা কলার তোলার বিষয় নয়।
যিশু: কেন কলার তুলব না?
আবীর: না, মানে কলারটা যাতে ধরে রাখতে পারি সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। প্রথম ছবির পোস্টারে আমার মুখ ছিল বলে শুনতে হয়েছিল যে আমার ফেসভ্যালু নেই। অথচ আমি পোস্টারে।
যিশু: শোন আমাকে এর চেয়েও অনেক খারাপ কথা শুনতে হয়েছে। তবে টেলিভিশনে হাতেখড়ি হয়ে আজ এখানে ভালই লাগে।
আপনারা দুষ্টু কে বেশি? ‘বর্ণপরিচয়’-এর ট্রেলারে আবীরকে বেশি খারাপ লাগছে!
যিশু: ও সামনে খারাপটা প্রকাশ করছে। আমি আরও সাঙ্ঘাতিক। ছবিটা দেখতে হবে।
আবীর: এই ছবিতে আমরা বা মৈনাক কেউ দাবি করছি না যে এ রকম করে এই প্রথম কোনও গল্প বলা হচ্ছে। মৈনাকের অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল থ্রিলার করার। ও প্রচুর থ্রিলার দেখে। আর মণি শ্রীকান্ত এগিয়ে এসেছিল।
যিশু: ‘বর্ণপরিচয়’ সাদা-কালোর বাইরে গিয়ে মানুষের ‘গ্রে ম্যাটার’ তুলে ধরছে। একেবারে বাস্তব জীবনের গল্প। পর পর খুন হয়ে চলেছে। কে খুন করছে? কেন? তাকে কে দেখছে? ‘বর্ণপরিচয়’ আমার আর আবিরের সম্পর্কের গল্প। প্রিয়ঙ্কা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছে।
আবীর: কত দিন সম্পর্কের প্রেমের ছবিতে অভিনয় করিনি। এটা অন্যায় নয় বলুন তো?
ঠিক কী বলতে চাইছেন?
আবীর: এ বছর দেখুন। প্রথম ছবি রিলিজ ‘বিজয়া’ কৌশিকবাবু নিয়ে চলে গেলেন! ‘শাহজাহান রিজেন্সি’-তে কচি একটা মেয়েকে পেলাম। ব্যস, মরেই গেল। ‘তৃতীয় অধ্যায়’-এ আমি ও পাওলি, দু’জনেই মরে গেলাম। এ বার ‘বর্ণপরিচয়’ কার সঙ্গে? যিশু! উফফফ!
যিশু: আহা রে, ছেলেটার কী কষ্ট! (আবীরের দিকে তাকিয়ে) এখন এ সব ভেবো না। ছোটবেলায় যা যা করেছি, সব ফেরত আসবে। মেয়েরা বড় হচ্ছে! এক জনকে নিয়ে আমি দিব্য আছি। নিজেদের প্রেম ভাবব কী করে? এখন মেয়েদের সময় তো! খুব সাবধান!
আরও পড়ুন: উপযুক্ত ভূমিকায় কাজের খোঁজে ক্যানসারজয়ী প্রবীণ অভিনেত্রী