বিনোদন জগতে আপনার পঞ্চাশ বছর পার হল গত বছর। পঞ্চাশ বছরের এই জার্নিটা ঠিক কী রকম?
নাইস জার্নি। সলিল চৌধুরী, মদন মোহন, শঙ্কর জয়কিষেণ থেকে আর ডি বর্মন, ভূপেন হাজরিকা, সুধীন দাশগুপ্ত হয়ে জিৎ-প্রীতম সবার সুরে গান গেয়েছি। আরও অনেকে আছেন। সবার নাম আর বললাম না।
কিন্তু এখনকার সুরকারেরা তো আপনাকে দিয়ে গান গাওয়াচ্ছেন না।
আমার বয়স বাষট্টি। নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতে হবেই। এটা আমাকে বাবা সব সময় বলতেন।
আজকের বলিউডের দিকে তাকালে কেমন লাগে এখনকার গান?
এখনকার হিন্দি গানের আয়ু এক সপ্তাহ। খুব বাড়িয়ে বললে এক মাস। আমি আজকালকার গান শুনিই না। এখনকার গান শোনাটা এক ধরনের সেল্ফ টর্চার। যেটা আমি আমার ওপর করতে পারি না।
অরিজিৎ সিংহ কী হানি সিংহের গান শোনেন?
না, শুনি না। টেকনিক্যালি এখনকার রেকর্ডিং প্রসেস উন্নত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু গান সে ভাবে শ্রুতিমধুর হয়নি। আগে আমাদের সময়ে রিহার্সাল বেশি হত। মিউজিশিয়ানদের ভুল হত, গায়কগায়িকাদের ভুল হত। আবার রিহার্সাল করতে করতে তা ঠিকও হয়ে যেত। এখন রেকর্ডিংয়ের সব ব্যাপারটাই খুব সোজা হয়ে গিয়েছে। সোজা হয়ে গিয়েছে বলেই গানগুলো মনে দাগ কাটে না।
পয়লা বৈশাখে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম বেরোচ্ছে। শোনা যায় আজ থেকে তিরিশ বছর আগেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম বেরোনোর কথা ছিল। তখন হয়নি কেন?
হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। তিরিশ বছর বয়সে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম বেরোনোর কথা ছিল। কিন্তু আমি তখন সেই রকম ইন্টারেস্ট পাইনি। আসল কথা যখন যেটা হওয়ার সময় তখনই তো সেটা হবে। এত বছর পর তাই হচ্ছে। বেটার লেট দ্যান নেভার।
রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে তখন ইন্টারেস্ট পেলেন না কেন? আপনার বাবা কিশোরকুমারের তো দুটো বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম আছে। তা দেখেও ইচ্ছে হয়নি?
এটা অনেকটাই মানসিক প্রস্তুতির ব্যাপার। ছোটবেলায় আমার পরিবেশটাই ছিল রাবীন্দ্রিক। আমার মা রুমা গুহ ঠাকুরতা, বাপি অরূপ গুহ ঠাকুরতা, আমার দিদা সতী দেবী ঘোষ, সকলেই রাবীন্দ্রিক পরিবেশের মানুষ। রবীন্দ্রনাথ আমার মজ্জায়। দেবব্রত বিশ্বাসকে দেখেছি মাকে গান শেখাতে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও নিজে গাইবার আগ্রহ পাইনি। পরে আমি রবীন্দ্রনাথের প্রচুর গান শুনি, ছোটগল্প পড়ি, সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ থেকে বিমল রায়ের ‘কাবুলিওয়ালা’ সবই দেখেছি। ক্রমাগত রবীন্দ্র চর্চা করতে করতেই আবার মনে হল রবীন্দ্রনাথের গান গাইব। এই প্রস্তুতি বলতে পারেন তিরিশ বছরের। আমার যেটা মনে হয় রবীন্দ্রনাথকে না জেনে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া উচিত নয়।
আপনার বোন শ্রমণা চক্রবর্তীও খুব ভাল রবীন্দ্রসঙ্গীত গান। ওঁর থেকে কোনও পরামর্শ নিয়েছেন?
না। তাও নিইনি। আমি এক মাস ধরে গান প্র্যাকটিস করেছি, তার পর গেয়েছি। রবীন্দ্রসঙ্গীত প্র্যাকটিস না করে চট করে গেয়ে দেওয়া যায় না এটা আমি বুঝেছি। অ্যালবামটি প্রকাশিত হচ্ছে সাগরিকা মিউজিক থেকে। রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ডিং করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হল সেটা সারা জীবন মনে থাকবে। অ্যালবামের নাম ‘এ বার আমায় ডাকলে দূরে’। যাঁরা গানগুলো শুনেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই প্রশংসা করছেন। এখন বাঙালি শ্রোতাদের পছন্দ হবে কি না এটাই দেখার।
আপনার বাবা এবং আপনি একই সময়ে গান গেয়েছেন। একই নায়কের লিপেও গান গেয়েছেন। কখনও বাবাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয়েছে?
না, কখনও মনে হয়নি। ওঁর জন্য হাতে মাইক ধরতে শিখেছি। কী করে ওঁকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হবে? বাবা আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন এমন কথা কি লোকে বলছে নাকি? একেবারেই কোনও চাপ অনুভব করিনি। বাবার মতো মানুষ পাশে ছিলেন বলে গানটা গাইতে সুবিধে হয়েছে। জীবনে যা পেয়েছি তা নিয়ে আমি তৃপ্ত। এত দিন ধরে যে শ্রোতারা আমাকে সহ্য করে আসছেন তার জন্য আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই।