‘হীরামন্ডি’ ওয়েব সিরিজ়ে অধ্যয়ন সুমন। ছবি: সংগৃহীত।
দ্বিতীয় ফিল্ম ‘রাজ়-২’-এর সাফল্য অভিনেতা অধ্যয়ন সুমনকে রাতারাতি তারকার খেতাব দিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে কেবল পেশা নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও খুব উত্থান-পতন দেখেছেন অধ্যয়ন। প্রকাশ ঝায়ের ‘আশ্রম’ ওয়েব সিরিজ়ে সবার নজরে আসেন অধ্যয়ন। খুব শীঘ্রই, সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘হীরামন্ডি’ ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে আবার দেখা যাবে অধ্যয়নকে। এই প্রসঙ্গে মুম্বই শহরতলিতে অবস্থিত নিজের বিলাসবহুল পেন্টহাউসে বসে তিনি কথা বললেন আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে।
প্রশ্ন: সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ‘হীরামন্ডি’ ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ কী ভাবে এল?
অধ্যয়ন: ‘আশ্রম’-এর মতো ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করার পরেও আমি দু’বছর ঘরে বসেছিলাম। আমি পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম সেই সময়ে। সেই সময়ে ‘হীরামন্ডি’র ‘কাস্টিং ডিরেক্টর’ শ্রুতি মহাজনের অফিস থেকে ডাক আসে। সত্যি কথা বলি, কেবল ডাক আসাতেই আমি খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু হাতে সময় কম ছিল, তাই গাড়িতে বসেই নিজে নিজে অডিশন দিই। প্রথম অডিশনের পর আমি নাকচ হয়ে গিয়েছিলাম। আমার সঙ্গে সঙ্গে আমার মা-বাবাও খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু দু’মাস পরেই আমি আবার ডাক পাই. আর এ বার প্রত্যাখ্যানের নয়, মনোনয়নের।
প্রশ্ন: প্রথম বার প্রত্যাখ্যানের কারণ জিজ্ঞাসা করেননি?
অধ্যয়ন: না, করিনি। আর কোনও দিন করবও না। জীবনে এত কিছু দেখেছি, এখন আর কিছুতেই ভয় পাই না আমি। এখন কেবল একটাই প্রার্থনা, যে সুযোগ আমি পেয়েছি সেটার গুরুত্ব যেন ইন্ডাস্ট্রি আমাকে দেয়, আমাকে যেন ‘সিরিয়াসলি’ দেখা শুরু করে।
অধ্যয়ন সুমন। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: কঠিন সময়ে আপনার সব থেকে বড় ভরসা কী বা কে ছিল?
অধ্যয়ন: আমার মা এবং বাবা। আমার মা রোজ প্রার্থনা করতেন, যেন আমি খুব তাড়াতাড়ি কাজে ফিরি। মা-বাবা দু’জনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব আলাদা। বাবা কম কথা বলেন আর মা আমাকে প্রতিনিয়ত উপদেশ দেন; আমার জামাকাপড়, হেয়ারস্টাইল সব কিছু খুঁটিনাটি নিয়ে। ‘হীরামন্ডি’তে সুযোগের পিছনে আমার মায়ের প্রার্থনার অবদান অনেক।
প্রশ্ন: এই চরিত্রের জন্য নতুন ভাবে কী শিখতে হল?
অধ্যয়ন: আমার চরিত্রের নাম জরওয়ার আলি। এক বিগড়ে যাওয়া নবাব, যার প্রধান দুর্বলতা হল মহিলা। কিন্তু পৃথিবীতে সে সব থেকে বেশি ভালবাসে নিজেকে। লজ্জোর (রিচা চড্ডা) সঙ্গে নবাব জরওয়ারের সম্পর্কে লজ্জো খুবই আবেগপ্রবণ, এবং সে নবাবকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু জরওয়ারের তাতে বিন্দুমাত্র মত নেই। আমার চরিত্রের মূল চাহিদা ছিল পরিষ্কার উর্দু বলতে পারা আর তার জন্য আমি বিশেষ ট্রেনিং নিয়েছি। তবে আপনি যতই আপনার শরীর বানান আর ভাষা শিখুন, যখন সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর সঙ্গে কাজ করবেন সব কিছু খুবই অনিশ্চিত। কারণ সেটে আসার পর উনি অনেক কিছু বদলে দেন, একই দৃশ্যকে চার রকম ভাবে শুট করেন। এক জন অভিনেতাকে উনি কাজ করার পুরো স্বাধীনতা দেন, ১-১০ নম্বর পর্যন্ত উনি আপনাকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আসল পরীক্ষাটা হল তার উপর আপনি কতটা যেতে পারবেন। সেটা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার দায়িত্ব।
প্রশ্ন: আপনার কেরিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত কোনটা?
অধ্যয়ন: সম্প্রতি ‘হীরামন্ডি’র সেটে আমাকে সাত মিনিটের একটি লম্বা দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছিল। এক ‘টেক’-এই দৃশ্যটা আমি করে ফেলি। আর শট শেষ হওয়ার পর দেখি, সঞ্জয় স্যরের চোখে জল। এর থেকে বড় স্মরণীয় মুহূর্ত আর কী-ই বা হতে পারে।
প্রশ্ন: ৩৬ বছর বয়সে পৌঁছে জীবনে কোনও সঙ্গীর অভাব বোধ করেন?
অধ্যয়ন: আমার কাছে এই মুহূর্তে অভিনয় পেশার সঙ্গে নিজের জীবনের স্থায়িত্ব খুব জরুরি। বিয়ে এবং সন্তান দুই-ই আমার কাছে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমার প্রথম প্রেমের সম্পর্ক (কঙ্গনা রানাউত) ভেঙে যাওয়ার পর কিন্তু আরও কিছু সম্পর্ক এসেছিল। কোনওটাই টেকেনি। কিন্তু তার জন্য প্রেমের প্রতি আমার কোনও তিক্ততা নেই। আজকাল সবাই ‘রিলেশনশিপ’-এর পরিবর্তে ‘সিচুয়েশনশিপ’ শব্দের ব্যবহার করেন, আর তার সঙ্গে আমরা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ এবং ‘গ্রিন ফ্ল্যাগ’-এর কথাও শুনে থাকি। এই সব নতুন শব্দকোষ আমার মাথায় ঢোকে না।
প্রশ্ন: আগামী সময়ে আমরা আপনাকে কোন মাধ্যমে বেশি দেখতে পাব?
অধ্যয়ন: এই বছর আমি ‘এ আজনবি’ নামে একটি ছবি পরিচালনা করব। এই মুহূর্তে তার চিত্রনাট্য লেখালিখির কাজ চলছে। ছবিতে আমিই নায়ক। ‘লাভ স্টোরি অফ ৯০’ নামে একটি ছবির কাজ শেষ করেছি, সঙ্গে আছেন বিশ্বসুন্দরী দিভিতা রাই। ‘বহম’ নামে একটি ছবি মুক্তি পাবে, যেখানে আমাকে এক নেতিবাচক চরিত্রে দেখা যাবে। এ ছাড়া আমার সাতটা গান মুক্তি পাবে। স্বপ্ন, লক্ষ্য এখন একটাই। বাবা-মাকে গর্বিত বোধ করানো। জীবনে একটা সময় দেখেছি, যখন বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করত না, আত্মহত্যার খেয়ালও এসেছিল। কিন্তু সেই সময়টাকে পেরিয়ে এসেছি। এখন শুধু সামনের দিকে দেখতে চাই।