অপরাজিতা তুমি

নিজেকে নিয়েই সন্তুষ্ট। জীবনে ক্ষোভের কোনও জায়গা নেই অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য-র। মুখোমুখি অদিতি ভাদুড়িনিজেকে নিয়েই সন্তুষ্ট। জীবনে ক্ষোভের কোনও জায়গা নেই অভিনেত্রী অপরাজিতা আঢ্য-র। মুখোমুখি অদিতি ভাদুড়ি

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৫ ০০:০১
Share:

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

বেহালা চৌরাস্তার অল্প দূরে তাঁর বাড়ির সিঁড়ি বেয়ে তিন তলা উঠতে দু’দিকের দেওয়ালে চোখে পড়ে তাঁর নানা মুহূর্তের ছবি।

Advertisement

ড্রইংরুমের আলমারিতে ভর্তি পুরস্কার। ঘরের এক কোণায় রাখা ট্রেডমিলের সামনে দু’জোড়া স্নিকার্স। কিন্তু এ বাড়ির গৃহিণী অপরাজিতা আঢ্য শরীর-সচেতন হলেও ওজন মেপে চলাতে বোধহয় বিশ্বাসী নন।

Advertisement

যদি মিনি স্কার্টটা পরতে পারতাম

কখনও মনে হয়নি ওজনটা কম হলে হালের নায়িকাদের মতো মিনি স্কার্ট, এমনকী বিকিনিটাও ক্যারি করা যেত? বা পরিচালকদের থেকে অফারটাও বেশি আসত? ‘‘ইস্, খুব লোভ লাগে। আমিও যদি মিনি স্কার্ট পরে বেরোতে পারতাম ও ভাবে। এই তো রিনাদি সে দিনই বলছিল, দশ বছর আগেও কত রোগা ছিলি রে অপা? আমিও বললাম, তুমিই বা কেন দশ বছর আগে আমায় মনে করিয়ে দিলে না ফিগারটা ও রকম রাখার কথা?’’ হাসি উপচে পড়ে গলায়।

‘বেলাশেষে’তে তো আমদর্শক মজেছিল তাঁর খোলা পিঠে। কেমন ছিল সে অভিজ্ঞতা? খুব নার্ভাস ছিলেন শ্যুটিংয়ের আগে। সেটে সবাই পেছনে লেগেছিল। কিন্তু পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায় ভরসা। এতটাই ভাল ছিল সে-অভিজ্ঞতা যে এখন চরিত্রের প্রয়োজনে স্বল্পবাসে কোনও আপত্তি নেই তাঁর।

ঠিক একটা মেগাসিরিয়াল

অফার যাই হোক, নিজের একশো ভাগ দিয়ে কাজ করেন তিনি। ‘বেলাশেষে’র জন্যও ডেট করে উঠতে পারছিলেন না। ও দিকে পরিচালকও নাছোড়বান্দা। তাঁর আর খরাজ মুখোপাধ্যায়ের কথা ভেবেই যে চরিত্র দু’টো লেখা। ‘‘জানেন, কেউ নেই যাঁরা ছবিটা দেখতে যাননি। ছবিটা ঠিক একটা মেগাসিরিয়াল। শিবুর (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) মুন্সিয়ানা, সকলকে দিয়ে এমন অভিনয় করিয়ে নিতে পেরেছে,’’ হাসেন অপরাজিতা।

উনিশ বছরের দীর্ঘ কেরিয়ার। এত জন পরিচালকের সঙ্গে কাজ। বেশিটাই অনসম্বল কাস্টে। কখনও ক্ষোভ হয়নি ভেবে যে পরিচালকেরা শুধু তাঁকে নিয়েই একটা চরিত্র ভাবতে পারতেন? ‘‘পরিচালকেরা ঠিক জানেন কাকে কোন চরিত্রে নেবেন। আর আমি যে সব চরিত্রে অভিনয় করেছি, সেগুলো পূর্ণাঙ্গ চরিত্র,’’ উত্তর তাঁর।

ফেসবুকে সময় নষ্ট

ফেসবুক, ইন্সট্যাগ্রামে প্রোফাইল নেই। ফিল্মি পার্টিতে থাকেন না। ফোনে দু’মিনিটের বেশি কথা বলেন না। কিন্তু কাজ পেতে তো শুধু পিআর নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও অ্যাক্টিভ থাকতে হবে! কিন্তু না, ফেসবুকে টাইম নষ্ট না করে ঘরের কাজ, রান্নাবান্না, আড্ডা, বই পড়তেই ঢের ভালবাসেন। কখনও নাইটক্লাবে গেলে, বাচ্চা ছেলেরা এসে বলে যায় ওদের মা-দিদিরা তো বটেই, ওদেরও দারুণ পছন্দের বেলাশেষের ‘বুড়ি’।

কিন্তু এই যে ‘রাজকাহিনি’তে সৃজিত মুখোপাধ্যায় এত জন নায়িকাকে নিয়ে কাজ করলেন। একটা চরিত্র তো তাঁরও হতে পারত? ভেবে খারাপ লাগে না? ‘‘সৃজিত আমার বহু দিনের বন্ধু। ওর যদি কখনও মনে হয় এই চরিত্রে আমাকে দরকার, ও আমাকে ঠিক খুঁজে বের করবে,’’ লাল কুর্তির ভাঁজ সামলে উত্তর ‘সেরা বৌঠান’-এর।

ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ বন্ধু হয় না

স্কুলের চার-পাঁচ জন বান্ধবী নিয়ে জমজমাট জীবন। ইন্ডাস্ট্রিতেও তো নিশ্চয়ই বন্ধুর অভাব নেই ‘বৌঠান’-এর। ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ কারও বন্ধু হয় না। একই ফ্লোরে পাশাপাশি শ্যুটিং। কিন্তু কেউ কাউকে চেনে না সেখানে। কারও বিয়েতে হৈহৈ করলাম বা আউটডোরে একসঙ্গে শ্যুটিং। ব্যস্, ওটুকুই। এটাই নিয়ম,’’ বলেন ‘জলনূপুর’-এর পারি।

ছোটপর্দায় মহিলাকেন্দ্রিক এত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়। কোনও দিন মনে হয়নি ইস্যু বেসড্ একটা টক শো করলে অনেক মেয়ের উপকার হত? ‘‘‘সেরা বৌঠান’-এ যে সব মহিলা আসতেন, তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েই কথা হত বেশি। অনেকেই বলেছেন দিদি, আপনার কথা শুনে শ্বশুরবাড়ির পরিস্থিতি অনেক ভাল হয়েছে। ‘প্রিয় বান্ধবী’ টক শো-তেও অনেক বোল্ড জিনিস আলোচনা করতাম। কেউ এ রকম শো-এর প্রস্তাব নিয়ে এলে, নিশ্চয়ই করব,’’ আত্মবিশ্বাসী তিনি।

ছেলেমেয়েদের ধৈর্য কোথায়

কিন্তু ইদানীং যে নায়ক-নায়িকারা আসছেন, তাঁরা তো এক ছবিতেই স্টার, ভুরি ভুরি এনডোর্সমেন্ট। তাঁদের কিছু বলতে ইচ্ছে করে? ভাবুক লাগে মজুমদার পরিবারের মেজ মেয়েকে। চিন্তা একটাই, ঠিকঠাক গাইডেন্স দেওয়ার লোক কোথায়? ঋতুদা (পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ) যেমন তাঁকে শিখিয়েছিলেন ১০ বা ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা এক্সপ্রেশন কী ভাবে দিতে হয়। বলতেন, কানের ভেতর থেকে যদি কথাটা অন্তরে না যায়, তা হলে তো আর শেখা হল না! রিনাদির (পরিচালক অপর্ণা সেন) কাছে তো রোজই নতুন করে শেখা। পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় শিখিয়েছিলেন, আর্টিস্ট নয়, সবাই যেন মনে রাখে মানুষ হিসেবে। হ্যাঁ নতুন পরিচালকেরাও অনেকে অনেক কিছু জানেন। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের ধৈর্য খুব কম।

পীযূষের সংসার

হঠাৎই থমকে যান ‘জলনূপুর’-এর পারি। পর্দায় স্বামী অমর্ত্যর সঙ্গে এত দিন স্ক্রিন শেয়ার। কিন্তু সেই পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ই আচমকা কোথায় হারিয়ে গেলেন!

প্রায় ১৫ বছর একসঙ্গে অভিনয় দু’জনের। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ল্যাপটপ’, অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাক্স’, অঞ্জন দত্তর ‘ম্যাডলি বাঙালি’, শেখর দাসের ‘মহুলবনীর সেরেঞ’— কত ছবি একসঙ্গে। কত টেলিফিল্ম। কত স্মৃতি! এই তো সেদিন চলে গেলেন ‘জলনূপুর’-এর তরুণ অভিনেতা রনি চক্রবর্তী। পরের পর মৃত্যুর এই ঘটনা নিছকই কাকতালীয়?

‘‘পীযূষদা খুব দুঃখ করত জানেন? বারবার বলত ও রকম উজ্জ্বল একটা ছেলে এ রকম মর্মান্তিক ভাবে চলে গেল! আর সে-ই কি না এ ভাবে...!’’ দুঃখ ভেসে ওঠে পারির গলায়। তখনও যে জানত না তার অমর্ত্যকেও চলে যেতে হবে!

তবে এটুকু তাঁর জানা যে এত সাফল্যের মধ্যেও পীযূষদা কোথাও ছুঁয়েই থাকবেন তার অপরাজিতাকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement