বলিউডে বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসে নকল গয়না যোগান দেওয়ার পারিবারিক ব্যবসা ছিল। সেই পরিবারের ছেলে একদিন ম্যাটিনি আইডল হয়ে গেলেন। পাশাপাশি, সহনায়িকাদের হার্টথ্রব। বহু সম্পর্ক, প্রেমের গুঞ্জন পেরিয়ে আজও অটুট জিতেন্দ্র-শোভা দাম্পত্য।
পঞ্জাবের অমৃতসরে জিতেন্দ্রর জন্ম ১৯৪২-এর ৭ এপ্রিল। তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল রবি। মুম্বইয়ের সেন্ট সেবাস্টিয়ান গোয়ান হাই স্কুলের পরে জিতেন্দ্রর পড়াশোনা সিদ্ধার্থ কলেজে। রাজেশ খন্না ছিলেন জিতেন্দ্রর স্কুলের সহপাঠী।
ভি শান্তারামের কাছে একবার শুটিংয়ের প্রয়োজনীয় জিনিস যোগান দিতে গিয়েছিলেন জিতেন্দ্র। তখনই তাঁকে অভিনয়ের সুযোগ দেন শান্তারাম। ১৯৫৯ সালে ‘নবরং’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি।
জিতেন্দ্রর কেরিয়ারে প্রথম বড় ব্রেক ১৯৬৪ সালের ছবি ‘গীত গায়া পাত্থরোঁ নে’ ছবিতে। চার বছর পরে ‘ফর্জ’ ছবি তাঁর চলার পথে আরও একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। এই ছবিতে ‘মস্ত বাহারোঁ কা ম্যায়ঁ আশিক’ গানের কস্টিউম হিসেবে জিতেন্দ্র মুম্বইয়ের একটি সাধারণ দোকান থেকে সাদা জামা আর সাদা জুতো কেনেন। তাঁর সেই স্টাইল পরে আইকনিক হয়ে যায়।
জিতেন্দ্রর ছবিতে নাচ একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। ‘কারবাঁ’, ‘হামজোলি’ ছবিতে অনবদ্য নাচের সুবাদে তাঁকে বলা হত ‘জাম্পিং জ্যাক অফ বলিউড’। ছয় থেকে নয়ের দশক অবধি তাঁরে দীর্ঘ কেরিয়ারের একটি বড় অংশ দক্ষিণী ছবির রিমেক। দক্ষিণী ছবির রিমেক হলেই আগে ভাবা হত জিতেন্দ্রর কথা। প্রায় ৮০টি রিমেকে অভিনয় করেছেন তিনি। তার মধ্যে বেশির ভাগই সুপারহিট।
জিতেন্দ্রর সঙ্গে শ্রীদেবী, জয়াপ্রদার অনস্ক্রিন রসায়ন ছিল বক্স অফিসে চূড়ান্ত সফল। পাশাপাশি, রীনা রয়, নীতু সিংহ, হেমা মালিনী, সুলক্ষণা পণ্ডিত, বিন্দিয়া গোস্বামী, রেখা, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধেও তিনি সফল ছবি উপহার দিয়েছেন।
জিতেন্দ্রর কেরিয়ারে উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল ‘পরিবার’, ‘সুহাগ রাত’, ‘মেরে হুজুর’, ‘অনমোল মোতি’, ‘কাঠপুতলি’, ‘পরিচয়’, ‘বিদাই’, ‘নাগিন’, ‘স্বর্গ নরক’, ‘পরিচয়’, ‘জাস্টিস চৌধুরি’, ‘তোফা’, ‘সংযোগ’ এবং ‘হিম্মতওয়ালা’। ষাটের দশকে শতাধিক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন জিতেন্দ্র। জিতেন্দ্র আর এক পরিচয় হল তিনি গীতিকার। ‘পরিচয়’, ‘খুশবু’, ‘কিনারা’ ছবিতে তিনি কাজ করেছেন গুলজারের সহকারী হিসেবে।
খ্যাতির আলোয় আসার অনেক আগেই জিতেন্দ্রর পরিচয় তাঁর ভবিষ্যেতর জীবনসঙ্গিনীর সঙ্গে। ষোলো বছরের জিতেন্দ্র সঙ্গে আলাপ হয় চোদ্দ বছরের কিশোরী শোভার। সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিণত হয় কৈশোর-প্রেম। কিন্তু দু’জনেই নিজেদের কেরিয়ারকে সময় দেন।
পড়াশোনা শেষ করে জিতেন্দ্র পা রাখেন ইন্ডাস্ট্রিতে। আর শোভা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানসেবিকা হন। বহু ওঠানামা পেরিয়েও দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক বজায় থাকে। কিন্তু বিয়ের সিদ্ধান্তে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না জিতেন্দ্র। তাঁর মনে হয়েছিল, কেরিয়ারকে আরও একটু সময় দিতে হবে।
এ দিকে জিতেন্দ্রর জীবনে ইন্ডাস্ট্রিতে আরও অনেক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হেমা মালিনীর সঙ্গে তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব ছিল। ধর্মেন্দ্র বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছিলেন না। আবার শোভা-জিতেন্দ্র সম্পর্কেও টানাপড়েন ছিল। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে জিতেন্দ্র-হেমা বিয়ে নাকি প্রায় হয়েই যাচ্ছিল।
জিতেন্দ্র-হেমা সম্পর্কে দুই পরিবারেরই সম্মতি ছিল। কিন্তু বিয়ের আসরে গিয়ে বাধা দেন ধর্মেন্দ্র। শেষ অবধি ধর্মেন্দ্রর ঘরনি হন হেমা। শ্রীদেবীর সঙ্গেও জিতেন্দ্রর সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা যায়।
এ রকম এক পরিস্থিতিতে শোভা চাকরি ছেড়ে দেন বিয়ে করার জন্য। শেষে জিতেন্দ্র তাঁকে কথা দেন যদি ‘বিদাই’ ছবি হিট হয়, তবে তিনি বিয়ে করবেন। সে ছবি সুপারহিট হওয়ায় কথা রাখেন জিতেন্দ্র। ১৯৭৪ সালের ৩১ অক্টোবর বিয়ে হয় তাঁদের।
একান্ত ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ঘনিষ্ঠ কয়েকজন আমন্ত্রিত। এত তাড়াতাড়ি বিয়ের আয়োজন হয়েছিল, শোভার মা-ও সে সময় জাপানে ছিলেন। বিয়ের পরেও শ্রীদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে টালমাটাল হয়েছিল জিতেন্দ্রর জীবন।
শোনা যায়, শোভা হুমকি দিয়েছিলেন শ্রীদেবীর সঙ্গে জিতেন্দ্র সম্পর্ক শেষ না করলে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন। স্ত্রীর চাপে জিতেন্দ্র বাধ্য হন শ্রীদেবীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ভেঙে দিতে।
পরে জয়াপ্রদার সঙ্গেও জিতেন্দ্রর সম্পর্ক নিয়ে গসিপ গুঞ্জরিত হয়। শোনা যায়, শ্রীদেবীকে দেখানোর জন্য জয়াপ্রদাকে নায়িকা হিসেবে তুলে ধরেছিলেন জিতেন্দ্র। তিনি নিজে জয়াপ্রদাকে বেশি গুরুত্ব না দিলেও জয়াপ্রদা নাকি মরিয়া ছিলেন জিতেন্দ্রকে পেতে।
এত ওঠাপড়া সত্ত্বেও জিতেন্দ্র-শোভা দাম্পত্য অটুট। তাঁদের ছেলে তুষার এবং একতা তুলে নিয়েছেন বাবার রেখে দেওয়া ব্যাটন। প্রযোজনার ক্ষেত্রে একতা নিজেই এখন প্রতিষ্ঠান। বাবার মতো সফল না হয়েও তুষার ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন নিজের মতো করেই।