প্রতীকী ছবি।
খাওয়ার জন্য বাঙালির উপলক্ষের দরকার হয় না। ঘটি বাড়ির চিংড়ি মালাইকারি, না বাঙাল বাড়ির চিতল মাছের মুইঠ্যা— কোন পদ বেশি লোভনীয় ও চিত্তাকর্ষক, তা নিয়ে সারা বছর ঝগড়া চলতেই থাকে। তবে নতুন বছরের প্রথম দিনে বাঙালি বোধহয় কোনও ঝগড়া মনে রাখে না। সে দিন তার পাতে সব প্রিয় পদই সমান। ফুলকো লুচি আর বেগুন ভাজা দিয়ে বৈশাখী ভোরের শুভ সূচনা। তার পর দুপুরে শুক্তো থেকে ভেটকি, পোস্ত বাটা থেকে কচি পাঁঠার ঝোল, বাদ থাকে না কিছুই। রাতেও পিৎজা-বার্গার নয়। ভোজনরসিক বাঙালি ভিড় করে বাঙালি রেস্তরাঁয়। তবে রেস্তরাঁমুখো না হয়ে অনেক বাঙালিই সে দিন ঘরে বসেই জমিয়ে ভূরিভোজের পক্ষে। টলিউড তারকাদের অনেকেই বললেন সে কথা।
মাছে-ভাতে বাঙালি
এখনকার প্রজন্মের অনেকেই মাছে নাক সিঁটকালেও টলি-পাড়ার অভিনেত্রীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে মাছের সুস্বাদু নানা পদ। অভিনেত্রী পাওলি দাম যেমন বললেন, ‘‘আমার মাছটাই বেশি পছন্দের। ইলিশের মরসুম এখন নয়। তবে বাজারে পাওয়া গেলে, আমার জন্য আসবেই! ইলিশ ভাপাও কখনও কখনও থাকে নববর্ষের মেনুতে।’’ হাসির দমকে জয়া আহসান বললেন, ‘‘বাংলাদেশে এই সময় খুব চড়া দামে ইলিশ মাছ বিক্রি হয়। তবে বেশি দামেই আমরা সেটা কিনি। আর শুঁটকি মাছ অবশ্যই থাকবে।’’ কোয়েল মল্লিক আবার বলছেন, ‘‘আমার আর বাবার খুব প্রিয় চিংড়ির মালাইকারি। তাই ওই দিন কচুপাতা চিংড়ি, চিংড়ির মালাইকারি তো থাকবেই।’’ কোয়েলের স্বামীরও (নিসপাল সিংহ) সবচেয়ে পছন্দ কচু চিংড়ি। মুচকি হেসে গিন্নি বললেন, ‘‘বেছে দিলে কর্তা ইলিশও খায়।’’
বাড়ির খাওয়া জমজমাট
কাজের তাগিদে অঙ্কুশ এখন কলকাতাবাসী। তবে নববর্ষের কথা বলতেই তাঁর মনে পড়ল ফেলে আসা দিনগুলো। ‘‘বর্ধমানে যখন থাকতাম, মা জমিয়ে রান্না করতেন। বিশেষ করে, মায়ের হাতের বাসন্তী পোলাও আর কষা মাংস ভোলার নয়। আর প্রথম পাতে ভাত, সোনা মুগের ডাল, শুক্তো থাকবেই,’’ বললেন তিনি। পাওলিও বললেন, ‘‘নববর্ষে মায়ের উপরেই রান্নাবান্নার দায়িত্ব থাকে। অসামান্য রাঁধেন আমার মা! আর মেনুতে শুরুর দিকে সাদা ভাত, সোনা মুগের ডাল, লাউ চিংড়ি থাকবেই।’’ কোয়েলের সে দিনের খাওয়া বাঁধা তাঁদের সাবেক মল্লিক বাড়িতে। ‘‘সকালে হয়তো খেলাম নারকেল কুচি দিয়ে ছোলার ডাল আর লুচি। দুপুরে মাছ-মাংস থাকবেই। আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজোয় দশমীর দিন মেটে চচ্চড়ি হয়। সকলের প্রিয় বলে কখনও কখনও সেটা নববর্ষের মেনুতেও থাকে,’’ বললেন কোয়েল।
পান্তাভাতে নববর্ষ
জয়ার বাংলাদেশের বাড়িতেও এই দিন খাওয়াদাওয়ার এলাহি আয়োজন। তবে তাঁর নববর্ষ পান্তাভাত ছাড়া হবেই না। ‘‘সে দিন আমিই পান্তাভাত মাখি। আমার হাতের পান্তাভাত খেতে বাড়ির সকলে খুব পছন্দ করেন। এর সঙ্গে ডিম ভাজা, বেগুন ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা থাকে। সাধারণত শুকনো লঙ্কা দিয়ে পদগুলো তৈরি হয়। আর থাকে বিভিন্ন রকম বাটা। সর্ষে বাটা, পোস্ত বাটা, কালো জিরে বাটা, শাক বাটা,’’ বললেন অভিনেত্রী।
অন্য থালায়
মল্লিকবাড়িতে ওই দিন খাওয়াদাওয়া হয় কাঁসার বাসনে। ‘‘সে দিন পিতলের থালা, গ্লাস, বাটি... সব বের করা হয়। ভাত থাকে থালায়। আর বাকি সব পদ বাটিতে পাতের চার পাশে সাজিয়ে দেওয়া হয়,’’ বললেন কোয়েল। আবার জয়ার বাড়িতে সে দিনের জন্য বরাদ্দ মাটির থালা-বাসন। ‘‘ওই দিনের জন্যই সারা বছর আমরা মাটির নানা বাসন কিনি। এখানকার সব বাড়িতেই এই রীতি। আমাদের বাড়িতেও তা-ই,’’ বললেন জয়া।
আম-প্রীতি
বৈশাখ মানেই বাঙালির পাতে আমের হরেক পদ। তবে আবির চট্টোপাধ্যায়ের নববর্ষের মেনুতে আম মাস্ট। ‘‘ওই দিন বাকিরা যা খায়, তা তো খাবই। তবে আমার নজর থাকে অন্য দিকে। আমপোড়া শরবত, আম দিয়ে টকডাল, কাঁচা আমের চাটনি, আমদই... এগুলোর জন্যই তো অপেক্ষা করে থাকি,’’ বললেন আম-পাগল ‘ব্যোমকেশ’।
মিষ্টির আমি, মিষ্টির তুমি
আবিরের নজর যদি আমে, অঙ্কুশের নজরে রয়েছে মিষ্টি। ‘‘মালাই চমচম, রস মালাই, ক্ষীরের সন্দেশ... যাকে বলে অমৃত,’’ বেশ গদগদ গলায় বললেন অঙ্কুশ। পাওলির আবার মিষ্টিতে রুচি নেই। ‘‘বাড়িতে গরম গরম রসগোল্লা বা চমচমও থাকে। কিন্তু আমি মিষ্টিটা ঠিক ভালবাসি না।’’
বছরের প্রথম দিনে টলিউডের কেউই বোধহয় ডায়েটের তোয়াক্কা করেন না। আর করবেনই বা কেন! বাঙালি হয়ে এমন সব লোভনীয় পদের হাতছানি আবার উপেক্ষা করা যায় নাকি!