অম্বরীশ ভট্টাচার্য, অভিনেতা।
আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে দাবি ‘পটকা’ অম্বরীশ ভট্টাচার্যের। কী ভাবে? ‘খড়কুটো’র সেটে ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’। এক ফ্লোরে বাম, গেরুয়া, শাসকদলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। চন্দন সেন, বাদশা মৈত্র, কৌশিক রায়, তৃণা সাহা এক সঙ্গেই। তার পরেও রাজনৈতিক মতবিরোধ নেই!
প্রশ্ন: সৌজন্যর পর গুনগুনও রাজনীতিতে। ‘পটকা’র প্রতিক্রিয়া কী?
অম্বরীশ: সৌজন্য ওরফে কৌশিক রায়ের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের আলাপ। এক সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। কৌশিক অনেক দিন ধরেই রাজনীতিতে আসব আসব করছিল। ফলে, ওর রাজনীতিতে আসা নিয়ে আমি বিস্মিত নই। হ্যাঁ, আমাদের রাজনৈতিক মতপার্থক্য আছে। তবে কৌশিক প্রচণ্ড মানবদরদি। যে দলেই আসুক, মানুষের হয়ে কাজ করবে। যাঁরাই মানুষের জন্য কাজ করবেন, তাঁদের প্রতিই আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। একই ভাবে গুনগুন ওরফে তৃণা সাহা দীর্ঘদিন শাসকদলের সমর্থক। এত দিন প্রচ্ছন্নে ছিল। এ বার প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দিল। এ ক্ষেত্রেও আমি বলব, নীল-তৃণাকে দলে নেওয়া আখেরে তৃণমূলের লাভ। কারণ, ওরা দুটো বিখ্যাত ধারাবাহিকের নায়ক-নায়িকা। খুবই দর্শকপ্রিয়।
প্রশ্ন: ওঁরা কতটা রাজনীতিমনস্ক?
অম্বরীশ: তৃণার রাজনীতিমনস্কতা নিয়ে সত্যিই কিছু বলতে পারব না। আমি সে ভাবে ওকে চিনি না। তবে গ্যারান্টি, তৃণা বুদ্ধিমান, পরিশ্রমী। এই দুটো গুণ যাদের থাকে, তারা কখনও ব্যর্থ হয় না। আর কৌশিক রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে। বাবা বহরমপুরের শাসকদলের প্রথম সারির নেতা। এক মেকআপ রুম শেয়ার করি বলে অনেকটাই জানি। দীর্ঘদিন ধরে প্রচ্ছন্ন ভাবে রাজনীতি করত। মানুষের অসময়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। ইদানীং হয়তো মনে করেছে, যে দলে যোগ দিয়েছে সে দলে আরও বেশি কাজ করতে পারবে। তাই ও গেরুয়া শিবিরে।
প্রশ্ন: পটকা রাজনীতিতে আসবে না?
অম্বরীশ: সবাই কি সব পারে! আমি দূর থেকে সবাইকে দেখছি। সবাইকে সমর্থন জানাচ্ছি। দলমত নির্বিশেষে। পক্ষ-বিপক্ষ যে শিবিরেই থাকুন, জয়ী হোন। জয়ী হোক আপনাদের দল। আমার আন্তরিক শুভ কামনা রইল।
প্রশ্ন: কৌশিক-তৃণা এক শিবিরে যোগ দিলে ‘সৌগুন’ রসায়ন আরও গাঢ় হত?
অম্বরীশ: তা কী করে সম্ভব? পর্দাতেই সৌজন্য আর গুনগুন ভিন্ন মেরুর। তাই দর্শক ওদের এত পছন্দ করে। ওদের রসায়নও এই কারণেই জীবন্ত। বাস্তবেও ওরা দু'জনে আলাদা ব্যক্তিত্বের। বেড়ে ওঠা, ভাবাদর্শ-- সবই আলাদা। ফলে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। ওরা নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী দল বেছেছে। এক মতবাদে বিশ্বাসী হলে নিশ্চয়ই এক শিবিরেই দেখা যেত ওদের।
প্রশ্ন: রাজনীতিতে আসার আগে-পরের তৃণা, কৌশিককে দেখেছেন। ওঁরা বদলেছেন?
অম্বরীশ: কোনও বদল ঘটেনি। সৌজন্য-তৃণা রাজনীতিতে আসার আগেও যেমন ছিলেন এখনও তেমনই আছেন। অভিনয়েও কোনও ছাপ পড়েনি।
প্রশ্ন: অবসরে সৌজন্য, গুনগুন, পটকা রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন?
অম্বরীশ: ওদের মুখ থেকে রাজনীতির কোনও কথা আজ পর্যন্ত শুনিনি। অন্তত আমাদের ‘খড়কুটো’র সেটে এই নিয়ে কোনও কথা হয় না। সব থেকে মজার ব্যাপার, সম্ভবত এক মাত্র এই সেটেই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ এক সঙ্গে কাজ করেন। চন্দন সেন, বাদশা মৈত্র বাম সমর্থক। কৌশিক বিজেপিতে যোগ দিয়েছে। তৃণা তৃণমূলে। ফলে, মতবিরোধ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। হয়নি অভিনেতাদের জন্যই। বাদশাদার কৌশিককে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য থাকলে তাঁরা অনায়াসে সেটা করেন। সেখানে কোনও কপটতা, ছলনা, অনীহা কাজ করে না। কারণ, রাজনৈতিক সত্তা বাইরে রেখে ওঁরা স্টুডিয়োয় ঢোকেন। নেতাদের বলব, আপনারা অভিনেতাদের দেখে শিখুন! ওঁরা কাজের জায়গায় রাজনীতি করেন না।
প্রশ্ন: এক জন অভিনেতার গায়ে রাজনৈতিক রং লাগা মানেই কি তাঁর ভাবমূর্তি নষ্ট?
অম্বরীশ: তাঁরা রাজনীতি থেকে কোনও সুযোগ না নিলেই ভাবমূর্তি স্বচ্ছ্ব। নিলে কী হতে পারে সেটাও সবার দেখা বা জানা আছে।
প্রশ্ন: প্রচার, অভিনয়-- এক সঙ্গে। মাল্টিটাস্কিং করতে গিয়ে নিশ্চয়ই অভিনয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
অম্বরীশ: মাল্টিটাস্কিং কৌশিক আর তৃণার অভিনয়ে কোনও বাধা তৈরি করেনি। দু'জনেই প্রচণ্ড পরিশ্রমী। দু'জনেই তুখোড় মাল্টিটাস্কার। ফলে, অভিনয়ে ১০০ শতাংশ দিয়েই তার পর রাজনীতি করছে। আরও একটা কারণ, ওরা ভীষণ প্রফেশনাল। শুধুই রাজনীতি করলে চ্যানেল ওদের বরদাস্ত করত না।
প্রশ্ন: দুই দলের দুই সদস্যের কাছে অম্বরীশের কোনও প্রত্যাশা?
অম্বরীশ: শুধু কৌশিক-তৃণা নয়, সমস্ত দলের সমস্ত তারকা-রাজনীতিবিদদের বলব, আন্তরিক ভাবে রাজনীতিটাও করবেন। ঠিক এত দিন যে ভাবে অভিনয় দিয়ে দর্শকমন জয় করেছেন। অভিনয়ে টিকে থাকা যেমন কঠিন, প্রতি দিন লড়তে হয়, এই ক্ষেত্রেও তাই-ই। দিনের শেষে মানুষের কথা ভাববেন। সবার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। সবার ভাল চাইবেন, করবেনও। শেষ দিন পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকবেন।