এক দশক আগেও সন্ধে হলেই বেশির ভাগ ড্রয়িং রুমে জাঁকিয়ে বসত মেগা সাগা। রাত সাড়ে এগারোটা-বারোটা অবধি চলত তুলসী, কুমকুম, পার্বতী, কাশিশ, প্রেরণাদের রাজত্ব। সৌজন্যে একতা কপূর। বলা ভাল, তিনি প্রায় একাই বদলে দিয়েছিলেন ভারতীয় টেলিভিশনের সিরিয়ালের যাত্রাপথ। একটা সময়ে যখন টিভির দুনিয়ায় রীতিমতো ভাঁটা চলছে, তখন একতার নয়া মন্ত্রেই প্রাণ ফিরে পেয়েছিল টেলি-দুনিয়া। সেই সময়টায় যখন একের পর এক নতুন মুখ হয়ে উঠেছে দর্শকদের কাছের, তেমনই খলনায়কদের প্রতি জন্মেছে প্রায় গণরোষ। মেগার মূল অভিনেতাদের কেউ কেউ যেমন নিজের প্রতিভার জোরে টিকে থেকেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে, তেমনই কেউ কেউ আবার হারিয়ে গিয়েছেন মূলস্রোত থেকে। আনন্দ প্লাস খোঁজ করল তেমনই কিছু ছিন্নমূলের।
মোনা সিংহ : ব্রেস পরা উঁচু দাঁত, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা, অদ্ভুত হেয়ার কাট আর পরনে প্রায় গলাবন্ধ চুড়িদার... এ হেন জসমিত ওয়ালিয়া ওরফে জস্সি চাকরিসূত্রে যোগ দেয় এক ফ্যাশন হাউসে। তার পর পুরনো দিনের মানসিকতা নিয়ে ঠোক্কর খেতে খেতে উঠে আসা ‘জস্সি’ মোনা সিংহ হয়ে উঠেছিলেন সকলের প্রিয়। এর পর ‘কেয়া হুয়া তেরা ওয়াদা’ বা ‘পেয়ার কো হো জানে দো’র মতো কয়েকটি ধারাবাহিকে অভিনয় করেন মোনা। বেশ কিছু রিয়্যালিটি শো উপস্থাপনাও করেন। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এও ছিলেন মোনা। তবে মোনাকে শেষ দেখা যায় ‘কবচ... কালীশক্তি সে’তে।
শ্বেতা তিওয়ারি: প্রেরণার আসল প্রেমিক কে— অনুরাগ না কি মিস্টার বাজাজ? এ ধন্দে যেমন প্রেরণা নিজে পড়েছিল, তেমনই দর্শকদেরও রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছিল। একই সঙ্গে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’র প্রেরণা ওরফে শ্বেতা তিওয়ারি। তার পর কিছু রিয়্যালিটি শোয়ের হোস্ট করেন শ্বেতা। ‘নাচ বলিয়ে’, ‘ঝলক দিখলা যা’র প্রতিযোগীও ছিলেন। ‘বিগ বস’ জিতে শ্বেতা ফের পায়ের নীচের জমি ফিরে পান। এ সবের সঙ্গেই চলছিল স্বামী রাজা চৌধুরীর সঙ্গে অশান্তি, ডিভোর্স। শ্বেতা হিন্দির পাশাপাশি কিছু আঞ্চলিক ছবিতেও অভিনয় করেন। রাজার সঙ্গে ডিভোর্সের পর শ্বেতা বিয়ে করেছেন অভিনেতা অভিনব কোহালিকে। শ্বেতাকে শেষ দেখা গিয়েছে ‘বেগুসরাই’ ধারাবাহিকে।
আমনা শরিফ: রাত এগারোটা বাজলেই দর্শকদের মনে তুমুল প্রেমের জোয়ার তুলত ‘কহি তো হোগা’র সুজল-কাশিশ-পীযূষ। ত্রিকোণ প্রেমের এই গল্পের সঙ্গে সঙ্গে নতুন মুখের আমনা শরিফও মন জয় করেছিলেন সকলের। চার বছর ধরে রমরমিয়ে চলার পরে শেষ হয় কাশিশের গল্প। তার পর আমনা বলিউডে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করলেও সফল হননি। আফতাব শিবদাসানির সঙ্গে ‘আলু চাট’-এ ডেবিউ করেছিলেন আমনা। হাতেগোনা চারটি ছবিতে কাজ করেন। কয়েকটি মিউজিক ভিডিয়ো ও দু’টি ধারাবাহিকে তাঁকে দেখা গেলেও কাশিশের জনপ্রিয়তা আর পাননি আমনা। তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছে ‘এক ভিলেন’-এ, সুলোচনার চরিত্রে। দীর্ঘ দিনের প্রেমিক প্রযোজক অমিত কপূরকে বিয়ে করেছেন অভিনেত্রী। আরাইন নামে তাঁদের একটি ছেলেও রয়েছে।
জুহি পরমার: ১৯৯৮ সাল থেকে অভিনয় করলেও ‘কুমকুম— এক পেয়ারা সা বন্ধন’-এ নামভূমিকায় অভিনয় করে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন জুহি পরমার। তার পর কোনও ধারাবাহিকই তাঁকে ‘কুমকুম...’-এর মতো খ্যাতি দিতে পারেনি। ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বেশ কিছু রিয়্যালিটি শোয়ে জুহি কখনও প্রতিযোগী, তো কখনও উপস্থাপকের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে সেগুলো তেমন নজর কাড়েনি। অভিনেতা শচীন শ্রফকে বিয়ে করেন জুহি। মেয়ে সামাইরার জন্মের পর মারাত্মক ওজন বেড়ে গেলেও প্রায় ১৮ কিলো কমিয়ে জুহি ফিরেছিলেন অভিনয়ের টানে। শেষ তাঁকে দেখা গিয়েছে ‘সন্তোষী মা’, ‘শনি’ ধারাবাহিকে। জুহি ফের খবরে এসেছেন শচীনের সঙ্গে ডিভোর্সের কারণে।
সেজান খান: ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’র প্রেরণার পাশাপাশি দর্শক প্রেমে পড়েছিল অন্য মূল চরিত্র অনুরাগ বসুর। সেজান খানের পরিচিতি অনুরাগের মাধ্যমে হলেও তিনি অভিনয় শুরু করেন ১৯৯৭ সাল নাগাদ। সকলেই যখন সেজানের প্রায় ‘অদৃশ্য’ হয়ে যাওয়ার কথা আলোচনা করছেন, তখন অভিনেতা নিজেই জানান তাঁর ব্যস্ততা নিয়ে। সেজানকে হিন্দি জনপ্রিয় ধারাবাহিকে সে ভাবে আর দেখতে না পাওয়া গেলেও অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি টিভি সিরিজে।