নিজের নামের পাশে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ শুনলেই গর্জে ওঠেন আমির খান। বরং পাপারাৎজিরা তাঁকে ‘মিস্টার প্যাশনেট’ বললে বেশি খুশি হন এই অভিনেতা। ৫৪ বছরে পা দিলেন আজই, কিন্তু এখনও যেন তিনি সুইট সিক্সটিন। আমিরের জন্মদিনে তাঁকে ঘিরে অজানা কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
লন টেনিস খেলায় তীব্র ঝোঁক ছিল আমির খানের। খেলতেনও ভাল। রাজ্যস্তরের নানান চ্যাম্পিয়নশিপে স্কুলের হয়ে খেলে একাধিক পুরস্কারও ঘরে নিয়ে এসেছিলেন আমির। রজার ফেডেরার আমির খানের প্রিয় টেনিস তারকা। আর বোর্ড গেমসের দিকেও তাঁর নজর ছিল। ‘সেটলার্স অব কাটান’ আমিরের প্রিয় বোর্ড গেম।
১৬ বছর বয়সে বন্ধু আদিত্য ভট্টাচার্যের (পরিচালক বাসু ভট্টাচার্যের পুত্র) সঙ্গে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের নির্বাক চলচ্চিত্রও তৈরি করেছিলেন আমির। ছবির নাম ‘প্যারানয়া’(Paranior)। ছবির নির্মাণের অধিকাংশ টাকাটাই দিয়েছিলেন ডক্টর শ্রীরাম লাগু। জীবনে একটি মাত্র মিউজিত ভিডিওতে কাজ করেছেন আমির। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই মিউজিক ভিডিওতে গান গেয়েছিলেন রূপ কুমার রাঠৌর।
দুই বছরের জন্য ‘অবান্তর’ বলে একটি নাটকের দলেও কাজ করতেন আমির। সেই দলে অভিনেতা হিসেবে নয়, ব্যাকস্টেজের সহযোগী হিসেবেই কাজ করেছিলেন। আর তারপরই ধীরে ধীরে জন্মাতে থাকে অভিনয়ের প্রতি আমিরের আগ্রহ। কিছুটা বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই নিজের ইচ্ছের গাছটিতে আস্তে আস্তে জল দিতে শুরু করেন আমির।
শুরু হয় হিন্দি ছবিতে আমির খানের অভিনয়ের সফর। শুরুটা হয় কেতন মেহতার হাত ধরে। ছবির নাম হোলি(১৯৮৪)। এই ছবিতে আমিরকে একটি চুম্বন দৃশ্যেও অভিনয় করতে হয়েছিল। আমির ছাড়াও এই ছবিতে ছিলেন তাঁর প্রিয় দুই বন্ধু আশুতোষ গোয়ারিকর এবং রাজ যুৎশি। ওম পুরি এবং নাসিরুদ্দিন শাহও ‘হোলি’তে অভিনয় করেছিলেন। তবে ছবির এন্ড ক্রেডিটসে আমিরের পুরো নামটি অর্থাৎ আমির হুসেন খান নামটিই ছিল। যদিও প্রথমে শিশু অভিনেতা হিসেবেই বলিউডে হাতেখড়ি হয়েছিল আমিরের।
১৯৮৪ সালে ‘হোলি’র মুক্তির আগেই আমিরের সঙ্গে রীনা বক্সির দেখা হয়ে যায়। প্রেমে পড়েন দুজনে। আর সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে বিয়ে। আর তারপরই ১৯৮৮ সালে আমিরের জীবনে আসে প্রথম সুপারহিট ছবি ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’। সেই ছবিতে রীনার এক ঝলক দেখাও মিলেছিল। ছবির বাজেট এতটাই কম ছিল যে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবির বাণিজ্যিক দিকের খুঁটিনাটিও দেখতে হয়েছিল আমির খানকে। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বাস আর অটোতে এই ছবির পোস্টার লাগাতেন আমির ও রাজ যুৎশি।
‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ ছবিটি থেকেই আমির খান আর জুহি চাওলার মধ্যে পরম বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়। কিন্তু ‘ইশ্ক’ ছবির সেটে জুহিকে নিয়ে ঠাট্টা করেন আমির। তার পর থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত দুজনের মধ্যে। পরস্পরকে এড়িয়ে গিয়েছেন বহুবার, একসঙ্গে কোনও ছবিও করেননি দুজনে। ‘ইশ্ক’ এর আগে পর্যন্ত দুজনে মোট সাতটি ছবি করেছিলেন। যার মধ্যে পাঁচটি ফ্লপ আর দুটি হিট। যদিও পরবর্তী কালে নিজেদের মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে নিয়েছিলেন দুই তারকাই।
কোনও অ্যাওয়ার্ড শো-তে সচরাচর দেখা মেলে না আমির খানের। কোনও দিনই অ্যাওয়ার্ড শো নিয়ে খুব একটা অ্যালার্জি আমিরের ছিল না। একই বছর ফিল্মফেয়ারে ‘দিল’ ছবিটির জন্য মনোনীত হয়েছিলেন আমির আর সানি ‘ঘায়ল’ এর জন্য। কিন্তু সানি দেওল ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডের সেরা অভিনেতা পুরস্কারটি জিতে নেওয়ার পরই পুরস্কারের প্রতি বিরক্তি শুরু হয় আমিরের। ‘লগান’, ‘তারে জমিন পর’ আর ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিটির জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন আমির। ২০০৩ সালে পদ্মশ্রী আর ২০১০ সালে পদ্মভূষণের মতো বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন আমির খান।
‘দিল চাহতা হ্যয়’ ছবিতে সিডের চরিত্রে অভিনয়ের কথা ছিল আমিরের। কিন্তু আমিরের পছন্দ ছিল আকাশের চরিত্রটি। আর তার পরেই চরিত্রটি আসে তাঁর কাছে। শাহরুখের সঙ্গে একবারই স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন আমির। আশুতোষ গোয়ারিকর পরিচালিত ‘পহেলা নশা’ ছবিটিতে একটি ক্যামিও চরিত্রে শাহরুখ ও আমির দুজনকেই দেখা গিয়েছিল। ‘ওম শান্তি ওম’ ছবিতে যে গানে প্রায় গোটা বলিউডকেই দেখা গিয়েছিল, সেই গানে অতিথি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রিত ছিলেন আমিরও। কিন্তু আমির ফারহা খানের সেই ডাকে সাড়া দেননি।
আমির খানের পরিবারের এক একজন ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। কেবল তাঁর বাবাই সরাসরি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামী মৌলানা কালাম আজাদ ছিলেন আমিরের বাবার কাকা। আমিরের বাবা তাহির হুসেন ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রোডিউসার। আর ভাই ফয়জলও বলিউডে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
বিদেশে আমিরের প্রচুর ফ্যান ফলোয়ার । বিশেষ করে চিনে এই সংখ্যাটা অনেক। আমিরের যে ছবিই চিনে মুক্তি পায় সেই ছবিই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার ব্যবসা করে। আন্তর্জাতিক তারকা জ্যাকি চ্যানও আমিরের ভক্ত। এ দিকে মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে নিজের মূর্তি গড়তে তাঁর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি না করে দেন।
খাওয়া-দাওয়া নিয়ে নাকি বিস্তর ঝামেলা করে থাকেন আমির। স্নান করতেও নাকি গায়ে জ্বর আসে এই অভিনেতার। আমিরের নামে এমন অভিযোগটি তাঁর বর্তমান স্ত্রী কিরণ রাওয়ের। তবে তাঁরে ছেলে আজাদকে চোখে হারান আমির। এক সময় তো ঘুম পাড়ানো থেকে খাওয়ানো সবই প্রায় নিজের হাতেই করতেন আমির।