গার্গী রায়চৌধুরী কম, ‘মহানন্দা’ বেশি!
আমি যেন এখন গার্গী রায়চৌধুরী কম, ‘মহানন্দা’ বেশি! পুরোটাই পরিচালক অরিন্দম শীলের সৌজন্য। ওঁর কারণে সবার প্রশংসা কুড়োচ্ছি। তারকা বন্ধু থেকে সাধারণ মানুষ। কোনও পুরস্কার অনুষ্ঠানে গেলে ইন্ডাস্ট্রির সবাই হইহই করে উঠছেন, ‘‘ওই যে মহানন্দা! খুব ভাল কাজ করেছ গার্গী।’’ জন্মদিনের আগে না চাইতেই আমার জীবনের বড় উপহার। এই জন্যেই বোধহয় বলে, ঈশ্বর করুণাময়। আগে থেকে সবার প্রাপ্য গুছিয়ে রাখেন নিজের হাতে।
২৩ এপ্রিল প্রতি বছর আমার আমি। ৩৬৪ দিন সবার জন্য তুলে রাখি। এই একটা দিন নিজের জন্য। যদিও জন্মদিনের আগের রাত থেকেই বন্ধুদের আনাগোনা চলছে। কেউ রেঁধে আনছেন। কেউ পছন্দের শাড়ি উপহার দিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে পরিবার। সব মিলিয়ে বেশ কাটে কিন্তু দিনটা। কারওর হাতের পায়েস তো কারওর বেছে দেওয়া শাড়ি। জন্মদিন মানেই সোহাগে-আদরে ভেসে যাওয়ার দিন। সারা বছরই অভিনয়ের কারণে কমবেশি আয়নায় নিজেকে দেখতে হয়। এ দিন যেন খুঁটিয়ে দেখি। অনেকে জানতে চান, চুলের ফাঁকে একটাও বাড়তি রুপোলি ঝিলিক চোখে পড়লে মনটা উদাস হয়ে যায়? যতই হোক, অভিনয় দুনিয়ায় আছি। নায়িকা বলে কথা!
আমি কিন্তু আমার সাদা চুল দারুণ উপভোগ করি। সংখ্যায় বাড়লে উপরওয়ালাকে মনে মনে কুর্নিশ করি, যাক এত দিনের অভিজ্ঞতার দাম পাচ্ছি। অরিন্দমদার ছবিতে আমি ৩০ থেকে ৭৫ বছর বয়সী। অভিনেত্রী হিসেবে কালো চুল, লাল চুল, সাদা চুল আর ন্যাড়া মাথা--- আমার কাছে খুব জরুরি। চরিত্রের প্রয়োজনে। তাই আলাদা করে সাদা চুল নিয়ে ভাবার কথা মনেই আসে না। বরং, যা ঘটবে তাকে মেনে নেওয়াই ভাল। এই দিনটায় পিছন ফিরেও দেখি। নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি, আমি কি অভিনেত্রী হতেই জন্মেছি?
নিজের ভিতর থেকে উত্তর আসে, এক দম তাই। ছেলেবেলায় সবাই যখন মাথায় গামছা জড়িয়ে শিক্ষিকা সাজে আমি তখন নাচ, গান, আবৃত্তিতে মগ্ন। রান্নাবাটি বা শিক্ষিকা হওয়ার শখ জাগেনি কোনও দিন। পেশা বাছার সময় এসেছে যখন অভিনয়কেই বেছে নিয়েছি অনায়াসে। আস্তে আস্তে কাজ করতে করতে বুঝেছি, কত ভালবাসি এই পেশাকে! কত গভীর প্রেম। এই পেশার কারণেই আমি সবার থেকে প্রশংসিত। অনেকে আমায় চিনতে পারেন। আমার কাজ দেখতে পছন্দ করেন। ভাগ্যিস, অভিনয়কে আপন করেছিলাম।
এ বারের জন্মদিনে ঈশ্বর আমায় চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। ‘মহানন্দা’ চরিত্র দিয়ে। আমি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আর তাঁর কাছেই প্রার্থনা জানিয়েছি, আগামী জন্মদিনে যেন এর থেকেও এতটা শক্ত চরিত্র পাই। যা করতে গিয়ে নিজেকে নিংড়ে দিতে হবে। অভিনয়ের শেষে রোজ ক্লান্ত হব। রোজ ঘুম থেকে জেগে উঠব নতুন উদ্যমে।