‘মহানন্দা’ রূপে গার্গী।
চুল খানিক পাতলা। মুখ-গলার চামড়ায় ভাঁজ। বার্ধক্যের ভারে ঈষৎ ঝুলে পড়েছে। চোখে ঘিয়ে ফ্রেমের চশমা। সাদার উপরে কালো ছাপা শাড়ি। নেপথ্যে শাল-মহুয়ার বন। বসন্তের ফুলে নয়, সাঁওতাল বিদ্রোহের আঁচে লালচে! ১৪ জানুয়ারি ৯০ তম জন্মদিনের বিকেলে এ ভাবেই দেখা দিলেন মহাশ্বেতা দেবী। ‘মহানন্দা’ হয়ে। ছবির প্রথম মোশন পোস্টারে। তাঁর নতুন রূপের স্রষ্টা পরিচালক অরিন্দম শীল। সৌজন্যে প্রযোজক ফিরদৌস হাসান। কালজয়ী লেখিকাকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন গার্গী রায়চৌধুরী। তাঁকে ‘মহানন্দা’ হয়ে উঠতে সাহায্য করেছেন রূপসজ্জা শিল্পী সোমনাথ কুণ্ডু।
পর্দায় অরিন্দমের পছন্দের ‘মহাশ্বেতা’ গার্গী রায়চৌধুরী। প্রযোজক ফিরদৌস হাসান কতটা ভরসা করতে পেরেছিলেন? আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নে প্রযোজকের বক্তব্য, ‘‘পরিচালকের উপরে চোখ-কান বুজে ভরসা করেছিলাম। সেই ভরসা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গার্গী। ওঁর অভিনয় আর পরিশ্রম দেখে আমার এক এক সময়ে তাক লেগে যেত। অরিন্দমের স্বপ্ন কী ভাবে যেন অভিনেত্রীর মধ্যেও চারিয়ে গিয়েছিল। সেই স্বপ্ন গার্গী ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত নিজের মধ্যে লালন করেছেন! সহজ কথা নয়।’’ প্রযোজকের দাবি, এই ছবিটি পরিচালক এবং অভিনেত্রী উভয়ের জীবনেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
বয়সের ভারে ইষৎ নুব্জ, শিথিল চামড়ার মহাশ্বেতা ওরফে ‘মহানন্দা’কে যত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন সোমনাথ কুণ্ডু। তাঁর বিখ্যাত প্রস্থেটিক রূপটানের জাদুতে। আনন্দবাজার অনলাইনকে সোমনাথ বলেন, ‘‘প্রচণ্ড গরমে রাঙামাটির দেশ রামপুরহাট তখন ফুটছে। ওই গরমে আড়াই ঘণ্টা ধরে রোজ রূপটান চলত। তাই নিয়ে টানা ১১ ঘণ্টা শ্যুট করতেন গার্গী। তার পরে দেড় ঘণ্টা ধরে সেই রূপটান তোলার হ্যাপা! তবু ওঁর কোনও আপত্তি বা ক্ষোভ ছিল না!’’ তিনি জানান, অরিন্দম বলেই দিয়েছিলেন গার্গীর চেহারায় মহাশ্বেতা দেবীর আদল কম। তাই হুবহু ফুটিয়ে তোলার বদলে অল্প অনুসরণই শ্রেয়। সেই পরামর্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন সোমনাথ। গরমে রূপটান অবিকল রাখার বাড়তি ঝক্কিও সামলাতে হয়েছে। তার পরেও মুখ, ঘাড়, গলা, হাতের সাজ শেষে গার্গী যখন সাদা-কালো শাড়ি জড়িয়ে এসে দাঁড়াতেন সোমনাথের সামনে, শিল্পীর আশা জাগত— ‘‘এ বারেও বোধ হয় দর্শকের বিচারে সসম্মানেই উত্তীর্ণ হব।’’
যাঁর জন্মদিন, তাঁকেই নতুন আধারে সামনে আনা হয়তো অনেকের চোখেই গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর সামিল। পরিচালকের মতে, এর থেকে ভাল দিন আর হতেই পারে না। অরিন্দম আরও জানিয়েছেন, মহাশ্বেতা দেবীর অনুকরণে নয়, তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবি। তাঁর আদর্শকে তুলে ধরতেই ২০১৯ থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে ‘মহানন্দা’ ছবির দল। তাঁদের আশা, এই ছবি আগামী প্রজন্মকেও একই ভাবে অনুপ্রাণিত করবে।
পণ্ডিত বিক্রম ঘোষের পরিচালনায় ছবিতে দুটি গান গেয়েছেন সাহানা বাজপেয়ী। প্রযোজনায় ফ্রেন্ডস কমিউনিকেসন্স।