পাটায়া থেকে এক্সক্লুসিভ কভারেজ

পাটায়ার কীর্তি

কে ফর কেলো। পি ফর পাটায়া। বাছ-বিচারহীন যৌনতার শহর। সেখানে হাজির টুকরো টালিগঞ্জ। আর স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ছোট্ট একটা রাস্তা। কিন্তু পুরুষ-নারী সকলের যৌন চাহিদা মেটানোর হাজার উপকরণ। বডি ম্যাসাজ পার্লার, গো গো শো, বিয়ার বার। ক্যাবারে থেকে নগ্ন পোল ডান্স কিংবা মেল স্ট্রিপ বার। যার যা মন চায়…

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৬ ০০:০০
Share:

ওয়াকিং স্ট্রিট।

Advertisement

গোটা পৃথিবীর অধিকাংশ রসিক টুরিস্টদের যৌন খিদের ডেস্টিনেশন। ওয়াকিং স্ট্রিটের নিশিরাত টেক্কা দিতে পারে আমস্টারডম বা লাস ভেগাসকে।

ছোট্ট একটা রাস্তা। কিন্তু পুরুষ-নারী সকলের যৌন চাহিদা মেটানোর হাজার উপকরণ। বডি ম্যাসাজ পার্লার, গো গো শো, বিয়ার বার। ক্যাবারে থেকে নগ্ন পোল ডান্স কিংবা মেল স্ট্রিপ বার। যার যা মন চায়…

Advertisement

রাস্তায় অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের উপচে পড়া ভিড়। কেউ স্ট্রিট ডান্সিংয়ে মত্ত, তো কেউ গে বারে স্ট্রিপ শোয়ে কাবু। পথের ধারে জুলিয়া রবার্টসের লাল ঠোঁটের মতো ঠোঁট রাঙিয়ে মেয়েরা। কখনও তাঁদের পেলব বিভাজিকায় গোঁজা ভাটের (তাইল্যান্ডের মুদ্রা) তোড়া, কখনও বা হলদে গোলাপ… হাতে সম্ভোগের ছবি আঁকা কার্ড। শিল্প আর সম্ভোগ মিলেমিশে একাকার। মেয়েদের সারি পেরিয়ে রাস্তার এক কোণে ট্যাটু করার পার্লার।

পুরোটাই ‘কেলোর কীর্তি’ ।

হান্ড্রেড মিটার রেসের মতো দৌড়চ্ছে রাজা চন্দের টিম। তাদের নতুন ছবি ‘কেলোর কীর্তি’ নিয়ে। মুক্তি জুলাইয়ে।

ছবির শ্যুট করতে এসে এক বাছ-বিচারহীন সম্ভোগের সড়কে হঠাৎই দেখা গেল দেবকে। আজ তিনি নায়ক নন। মধ্যরাতে হেঁটে বেড়াচ্ছেন দুষ্টুমির খেয়ালে। সঙ্গে কলকাতা থেকে আসা বান্ধবী। হঠাৎই একটা গলির বাঁকে হারিয়ে গেলেন তাঁরা…

মায়াবী রাতে আলোর মতো ঝলমলিয়ে উঠলেন কৌশানী আর অঙ্কুশ। রাতের পাটায়ার টানে তাঁরাও বেরিয়ে পড়েছেন। কলকাতায় মাঝরাতে তাঁরা দু’জনে কি এ ভাবে হাঁটতে সাহস পাবেন?

কাট টু পরের দিন সকাল। হোটেলের রুমে কৌশানী আর অঙ্কুশ। কৌশানী খাটে শোয়া। ‘‘বেবি আমার হনিমুন পাচ্ছে... আমি কিন্তু বিছানায় দারুণ,’’ শ্যুটিং শুরু হওয়ার মাঝে স্ক্রিপ্টের বাইরে বেরিয়ে হঠাৎ নিজেই সংলাপ বলে উঠলেন অঙ্কুশ! এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত তিনি। পাটায়ার ওয়াকিং স্ট্রিটের চেয়ে কৌশানীর মনে ইদানীং তিনি নাকি বেশি ওয়াক করছেন? মুচকি হেসে ম্যানেজ করলেন অঙ্কুশ, ‘‘না ছবিতে আমরা আসলে তো নিউলি ম্যারেড কাপল। তাই কেমিস্ট্রিটা ঠিক করে নিচ্ছি।’’ অঙ্কুশ যাই বলুন কৌশানীর লাজুক হাসিতে কিন্তু পুরোটাই মিস্ট্রি! শট দিতে যাচ্ছেন অঙ্কুশের হাত ধরে। নেল পালিশের রং ঘেঁটে গেলে সেটা অঙ্কুশকে প্রথম জানাচ্ছেন। অঙ্কুশ এয়ারপোর্টে কৌশানীর ভারী লাগেজ বইছেন একগাল হেসে। ন’ বছর পরে আবার কমার্শিয়াল ছবিতে যিশু সেনগুপ্ত। ‘ব্যোমকেশ’-র কালো ফ্রেমের চশমা ছেড়ে পুরোদস্তুর হিরোগিরি আর মিমির সঙ্গে খুনসুটিতে মেতেছেন তিনি। শট দিতে দিতে বললেন, ‘‘দেব আসার পর মিমি কিন্তু সংলাপ বলতে বলতে দেবের দিকে চলে যাচ্ছে, রাজাদা (রাজা চন্দ) ওর বোধহয় দেবকে বেশি পছন্দ!’’

আরও দেখুন, পাটায়ায় ‘কেলোর কীর্তি’

ফুট ম্যাসাজ, মেয়েদের জন্য শপিং আর সিঙ্গল মল্ট-য়েই ইতি টেনেছেন যিশু। এমনই তাঁর দাবি! শ্যুটিংয়ের ফাঁকে দেখাচ্ছেন দুই মেয়ের দারুণ সব ভিডিয়ো! “ব্যবসা থেকে সংসার সবটা একা হাতে নীলাঞ্জনা যে ভাবে সামলায়, যা ডেডিকেটেড ও…” যিশুর কথা শেষ হতে না হতেই নীলাঞ্জনার ফোন।

সাদা হট প্যান্ট আর ব্লু শার্টে সায়ন্তিকা মেক আপ নিতে নিতে বললেন, ‘‘নীলাঞ্জনাদিকে খুব পছন্দ আমার।” সায়ান্তিকা দেবের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন এই ছবিতে।

‘‘উফ তোর চেয়ে হট তোর শার্টটা রে..,’’ মুচকি হেসে ব্রেকফাস্ট টেবিলে আওয়াজ দিলেন দেব। কফি আর অমলেট নিয়ে বসেছেন দেব। উল্টো দিকে মিমিকে জোর করে চিজ অমলেট টেস্ট করাচ্ছেন সায়ন্তিকা। ডায়েটের তো বালাই নেই! উল্টে রাতে গিয়ে চকোলেট আর কলা দিয়ে তৈরি দারুণ সব সুইট ডিশ, তাই ফুড খেয়ে বেড়াচ্ছেন মিমি। ‘‘নুসরত তো চলে গেল। ও আর আমি খাবারের পার্টনার ছিলাম। আর টিকা (সায়ন্তিকা) তো আমাকে কিছুতেই খেতে দেয় না,’’ সানস্ক্রিন মাখতে মাখতে বললেন মিমি। সানস্ক্রিন লাগালেও পাটায়ার বিচে-র ট্যান নাকি কিছুতেই যেতে চায় না—চিন্তায় মিমি। পাটায়ার ট্যান-য়ের মতোই যেমন কিছুতে যেতে চায় না মিমি আর অঙ্কুশের ছদ্ম মারামারি! শ্যুট ছাড়া পুরো সময় অকারণে হাসি- ঠাট্টা, ইয়ার্কি। ‘‘জানেন তো ওর বয়স সাঁইতিরিশ। ও লুকিয়ে রাখে (পড়ুন মেনটেনড)’’ বলেই চুল ধরে টানতে আরম্ভ করলেন অঙ্কুশ।

কম যান না দেবও। ফস করে বলে বসলেন, ‘‘রাজ জানে মিমির বয়স ঠিক কত!’’ মিমি ততক্ষণে প্রচণ্ড রেগে দেব আর অঙ্কুশকে পেটাচ্ছেন! কিছুক্ষণ সংলাপটা এই রকম চলল—

দেব: আমার পাড়ায় একজন লোক আছে, তার নাম রাজ চক্রবর্তী, আমি তার কথা বললাম, তুই রিঅ্যাক্ট করছিস কেন?

মিমি: মিডিয়ার সামনে ব্যক্তিগত কথা বলছিস কেন? আমি কি তোর পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কিছু বলছি?

দেব: দেখ দেখ তুই বলে ফেললি, রাজ চক্রবর্তী মানেই ব্যক্তিগত। কেন রে!

মিমি এ বার সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘আপনি চলে যান তো, প্লিজ এই রুম থেকে চলে যান, এরা যা খুশি বানিয়ে বানিয়ে বলছে। আর আপনি সত্যি ভেবে সেগুলো লিখবেন! দয়া করে এই সব লিখবেন না। উফফ্।’’ ততক্ষণে পরিচালক রাজা চন্দের ডাক এসে গিয়েছে। শট রেডি।‘‘এখন তো ইন্ডাস্ট্রিতে একটা অ্যান্টি রিমেক ছবির লবি তৈরি হয়েছে। জোর করে একটা মেরুকরণ হয়েছে। রিমেক মানেই বাজে। কেন বলুন তো? আরে তিরিশ কোটির ছবি আমরা চার কোটিতে করছি! এটা লোকে একবার ভাবে না?’’ হতাশ লাগল পরিচালক রাজা চন্দকে। তবে মজার গল্প বলে ইউনিটকে চাঙ্গা করে রাখছিলেন তিনি।

৪৫ ডিগ্রির চাঁদিফাটা রোদ্দুরে সকাল সাতটা থেকে রাত ন’টা অবধি বিভিন্ন লোকেশনে ঘুরে বেড়িয়েছে তাঁর ৪২ জনের ইউনিট। থেকে থেকেই ফ্রুট জুস, ডাবের জল, তাইল্যান্ডের বাহারি ফলে তরতাজা গোটা ইউনিট। দুপুরে আর রাতে লম্বা মেনু। কোথাও কার্পণ্য করেনি ভেঙ্কটেশ ফিল্মস আর সুরিন্দর ফিল্মস। মাঝেমধ্যেই এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসারের মোবাইলে ফোন করে খোঁজ নিচ্ছেন প্রো়ডাকশন হাউসের কর্তারা।

মিমি, সায়ন্তিকা, কৌশানী গ্রিন কারি, রেড কারির টানে ভাত খেয়ে ফেলছেন মাঝে মাঝে। দেব কিন্তু চিকেন তন্দুরিতেই আটকে। বললেন, ‘‘কলকাতা ফিরে ‘চাঁদের পাহাড় টু’য়ের শ্যুট। আমার অভিনয় জীবনে এই ছবিটা খুবই ইম্পর্ট্যান্ট। তাই ওজন বাড়াতে চাই না। এই বছর ‘জুলফিকর’, ‘ধূমকেতু’তে দর্শক অন্য দেবকে দেখে চমকে যাবে বলেই আশা করি। দুটো ছবিই অসাধারণ।’’ তা হলে আবার কমার্শিয়াল ছবি করতে গেলেন কেন? তাও আবার এতজনের সঙ্গে?

গত বছর পুজোর বক্স অফিসের হিসেবটা মনে করিয়ে দিয়ে দেব বললেন, “‘রাজকাহিনী’, ‘কাটমুন্ডু’ ‘ক্রস কানেকশন টু’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’-র চেয়ে লাভ করেছিল ‘শুধু তোমারই জন্য’। কমার্শিয়াল ছবি থেকে তো আমার পরিচিতি। সেটা ভুলি কী করে?”

এর মধ্যেই দেখলাম সায়ন্তিকার চুড়ি থেকে লিপস্টিক বেছে দিচ্ছেন মিমি। যতই শ্যুটের ক্লান্তি থাক পাটায়ার রাতে পার্টি না করে রোজই ইন্সট্রাক্টরকে নিয়ে জিমে যাচ্ছেন সায়ন্তিকা। পাটায়া গিয়েও ওয়ার্ক আউট থেকে ছুটি নেই।

যত খাটুনিই হোক, ইউনিটের অনেকে মধ্যরাতে বেরিয়ে পড়ছে বেলি ডান্স বা রাশিয়ান ক্যাবারে দেখতে। যত ক্লান্তি থাক ওটা মিস করা যাবে না। ইউনিটের মধ্যে কানাঘুষো শোনা গেল, ‘‘স্যান্ডউইচ ম্যাসাজটাই সব থেকে ভাল।’’

হোটেলে স্মোক করলেই তিন হাজার ভাট ফাইন। যিশু তাই হোটেলের বাইরে। আড্ডা মারতে এলেন দেব। ‘‘ছবিতে সকলে বন্ধু। মনে হচ্ছে না শ্যুটে এসেছি। যা সব ইয়ার্কি-ঠাট্টা হচ্ছে ! ফাটিয়ে এনজয় করছি,’’ বলেই আবার মিমিকে খ্যাপাতে শুরু করে দিলেন দেব। যোগ দিলেন অঙ্কুশ।

অঙ্কুশ: তুই মাথার ওপরে ক্লিপ লাগিয়ে ঘুরছিস কেন?

মিমি: আরে চুলগুলো মুখে পড়ে। অস্বস্তি হয়।

অঙ্কুশ: ও তোর যা কিছু অস্বস্তিকর লাগে, তাই ক্লিপ দিয়ে বন্ধ করে দিস! মানে রাজদা...

কথা শেষ না হতেই অঙ্কুশের পিঠে দুমদাম কিল মারতে লাগলেন মিমি। দেব আরও উস্কে দিয়ে বললেন, ‘‘কী যে হবে রাজের!’’

মিমি ততক্ষণে রণমূর্তি ধারণ করে বললেন ‘‘আমিও বলি রুক্মিণীর কথা?’’

দেব: ধুর, কী যে বলিস..যে মেয়েকেই বিয়ে করব ভাবি সেই তো আমার জীবন থেকে পালিয়ে যায়।

রাত আরও গভীর, মায়াবী আলোয় ঢাকা পড়ল ওয়াকিং স্ট্রিট…দেব সে রাতে আর হোটেলে ফিরলেন না! ফিরবেনই বা কী করে? কলকাতার বান্ধবীর সঙ্গে তিনি তখন মধ্যরাতের ওয়াকিং স্ট্রিটে মাতোয়ারা…নায়করাও আসলে পাটায়ার যৌনভূমিতে রক্তমাংসের মানুষ হয়ে যান।

কাট থ্রি কলকাতা। শ্যুট প্রায় শেষ। জুলাইতে দেখা যাবে যিশু-দেব-অঙ্কুশ আর মিমি-নুসরত-সায়ন্তিকা-কৌশানীর নানা কীর্তিকলাপ।

তবে ‘কেলোর কীর্তি’র আসল খেলা জমে উঠল নারায়ণী স্টুডিয়োতে। ডিস্কের চোখধাঁধানো আলোয় ঝলমলে নুসরত। তাঁর সি থ্রু গাউনে একটু একটু করে মাতাল হচ্ছেন যিশু।
ডান্স ফ্লোরে একসঙ্গে যিশু-নুসরত-দেব...

শুরু হল গান। ‘এসেছি এসেছি আমি আইটেম বম্ব’। অন্যদিকে জমে উঠেছে অঙ্কুশ-কৌশানীর মাখোমাখো প্রেম!

অফস্ক্রিন নাকি অনস্ক্রিন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement