প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়।— নিজস্ব চিত্র।
দফায় দফায় বৈঠকের পরেও টেলি সিরিয়ালের শুটিং নিয়ে অচলাবস্থা কাটল না। গত শনিবার থেকে টানা বন্ধ রয়েছে সিরিয়ালের শুটিং। মূলত বকেয়া পারিশ্রমিক এবং কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে আর্টিস্ট ফোরাম এবং প্রযোজকদের মধ্যে বিরোধ এখন তুঙ্গে। যার সমাধান সূত্র মঙ্গলবারেও মিলল না।
এ দিন দুপুরে নজরুল মঞ্চে আর্টিস্ট ফোরামের সাধারণ বৈঠক ছিল। সেখানে টলি-পাড়ার বারোশো-তেরোশো শিল্পী উপস্থিত ছিলেন। তার পর টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে আর্টিস্ট ফোরামের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়।সেখানে তিনি বলেন, ‘‘অদ্ভুতভাবে মানুষের কাছে বলা হচ্ছে, আর্টিস্টরা কাজ বন্ধ করেছেন। এটা ভুল তথ্য যাচ্ছে। কাজটা প্রযোজকরাই বন্ধ করেছেন। আর্টিস্টরা মেকআপ করে বসেছিলেন। প্রযোজকরা কলটাইম দিলে কাল সকালে গিয়েই কাজ শুরু করা যাবে।’’
বকেয়া পারিশ্রমিকের পাশাপাশি কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল আর্টিস্ট ফোরাম। তবে সে দাবিকে নস্যাত্ করে সোমবার সন্ধ্যায় প্রযোজকদের তরফে এক প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতিতে প্রযোজকরা দাবি করেন,গত ১৫ অগস্ট ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় কলাকুশলীদের বকেয়া বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু তা যে মিটিয়ে দেওয়া হবে এ কথা ই-মেল মারফৎ প্রত্যেককে জানানো হয়েছে। তার পরও শনিবার থেকে শুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর্টিস্ট ফোরাম। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করেছিলেন প্রযোজকেরা।
আরও পড়ুন, বন্ধ হয়ে যেতে পারে ধারাবাহিকের সম্প্রচার? ধর্মঘটে উঠছে প্রশ্ন
এই সব দাবি কতটা ঠিক? প্রসেনজিত্ বললেন, ‘‘আবারও বলছি, আর্টিস্টরা কাজ বন্ধ করেননি। জানেন, অনেক প্রযোজক এক-দেড় বছর টিডিএস জমা দেননি। এটা কোন আইনের মধ্যে পড়ে? এটা তো অন্যায়। শিল্পী তো তার বেনিফিট পাচ্ছে না। এগুলোই তো কথা বলার জায়গা। কিন্তু ওঁরা মিটিং থেকে বেরিয়ে গিয়ে সব কাজ বন্ধ করে দিলেন। আমাদের একটাই কথা, কাজটা শুরু করে দিন। আমরা তার পর দিনরাত আলোচনায় বসব।’’
যে ১০ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তা-ও অনেক শিল্পী মানেন না বলে অভিযোগ রয়েছে প্রযোজকদের। একই দিনে নাকি তিনটি সিরিয়ালেরও কাজ করেন কোনও কোনও শিল্পী। অথচ কোনও একটা সিরিয়ালে ১০ ঘণ্টা সময় না দিয়েই একদিনের পুরো পারিশ্রমিক নেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে আর্টিস্ট ফোরামের তরফে অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিনয়টা আর পাঁচটা কাজের থেকে আলাদা। যে চরিত্রের জন্য যে শিল্পীকে প্রয়োজন তাঁকে তো নিচ্ছেন প্রযোজকরাই।’’
আরও পড়ুন, ‘কবে শুটিং শুরু হবে জানি না, খুব খারাপ লাগছে’
গত ৭ জুলাই একটি চুক্তিপত্রে সই হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রসেনজিত্। যেখানে বকেয়া টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। আর্টিস্ট ফোরাম, ফেডারেশন ও প্রযোজকরা সেই চুক্তিপত্রে সই করেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সামনে। কিন্তু প্রযোজকদের দাবি, ওই চুক্তিপত্র তাঁরা মানেন না। তাঁদের যুক্তি, কোনও স্ট্যাম্প পেপারে ওই চুক্তিপত্রে সই হয়নি।
প্রসেনজিত্ বলেন, ‘‘একটা জায়গায় সই করা মানে আমরা ওটাকে মিনিটস বলি। ইন্ডাস্ট্রিতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় সে কারণে মাননীয় মন্ত্রী দুটো বডি তৈরি করেছেন। একটা সিনেমার, অন্যটা টেলিভিশনের জন্য। কোনও সমস্যার সমাধান না হলে সংশ্লিষ্ট বডি উদ্যোগী হয়। এর আগে প্রচুর মিটিং হয়েছে। মিনিটসে যখন সই করছি, আমরা ধরে নিতে পারি, পরের স্টেপটা হবে একটা এগ্রিমেন্ট। এমওইউ হবে। দু’পক্ষ মেনে নিলাম, কাজটা শুরু হোক, তার পর ফর্মালিটি হবে। কিন্তু ওঁরা তো সেটাই মানছেন না।’’
সাংবাদিকদের মুখোমুখি প্রয়েনজিত্ এবং জিত্।— নিজস্ব চিত্র।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ধারাবাহিক পুরনো এপিসোড দেখাতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি, ওয়েব প্ল্যাটফর্মে যে সব প্রযোজক কাজ করছেন, তাঁদের দাবি, শিল্পীরা নাকি ১০ ঘণ্টার বেশি কোনওভাবেই কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না। ওয়েবে শিল্পীদের পারিশ্রমিকের কোনও নির্ধারিত মাপকাঠি এখনও তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শিল্পীরা সহযোগিতা না করলে কী ভাবে কাজ করা সম্ভব, প্রশ্ন তুলছেন বিভিন্ন প্রযোজক সংস্থার কর্ণধারেরা।
আরও পড়ুন, ‘ব্যাঙ্কিং না থাকলে কী হবে? খুব ভয় লাগছে’
শেষ পর্যন্ত সমাধান সূত্র কি আদৌ বেরবে? তার জন্য আর কতদিন অপেক্ষা করবেন সকলে? সত্যিই কি যুযুধান দু’পক্ষ একসঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসবেন? প্রসেনজিত্ বললেন, ‘‘কোনও শর্ত না রেখে কাজটা শুরু করতে চাই আমরা। বাকি যেগুলো সমস্যার জায়গা সেগুলো একটা একটা করে মেটাই, তার জন্য হয়তো দু’তিন সপ্তাহ সময় নেব।আমরা এক টেবিলে বসতে রাজি, কিন্তু কোনও শর্ত না মেনে ওঁরা বসতে রাজি কি?’’
(টলিউডের প্রেম, টলিউডের বক্ল অফিস, বাংলা সিরিয়ালের মা-বউমার তরজা - বিনোদনের সব খবর আমাদের বিনোদন বিভাগে। )