ঋতুপর্ণা
মানুষ যদি ফিনিক্স পাখির মতো হতো? একটা জীবন থেকে আর একটা জীবনে ফিনিক্সের মতো উত্তীর্ণ হতে পারত। কিছু মানুষের জীবন-কাহিনি সে রকমই। শেষ কিনারায় দাঁড়িয়েও আবার মূলস্রোতে ফিরে আসে। নবনীতা দেব সেনের কলম তেমনই এক নারী চরিত্রকে ধরেছিল। যেটা পরদায় ফুটিয়ে তুলবেন পরিচালক অরিন্দম দে। ছবির নাম ‘ফিনিক্স’ই রেখেছেন পরিচালক।
নারীকেন্দ্রিক ছবি হলে চরিত্রর জন্য প্রথমে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর কথাই মাথায় আসে। পরিচালক জানালেন, গল্পটা ভাবার সময় ঋতুপর্ণা ছাড়া আর কারও কথা তিনি ভাবেননি। নায়িকাও এককথায় রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
ঋতুপর্ণার চরিত্রের নাম বিপাশা। সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ে দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত গল্পের পরিধি। নকশাল আন্দোলন থেকে বামেদের সরকার গঠনের রেফারেন্স থাকবে ছবিতে। বিপাশা বিদুষী মহিলা। জড়িয়ে পড়ে নকশাল আন্দোলনে। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়েও যায়। ঠিকানা হয় ইংল্যান্ড। প্রেম, বিয়ে, বিচ্ছেদ আবার প্রেম...ঘুরে ফিরে আসে তার জীবনে। লেখিকা তাঁর নারী চরিত্রকে বেশ অন্য রকম ছাঁচে গড়েছেন। যে কোথাও থিতু হতে পারে না।
ছবির গল্পও অতীত থেকে বর্তমানে ছুটে বেরোয়। বিপাশা বাংলায় লিখতে চায়। শিকড়ের টানে কলকাতায় চলে আসে। যেখানে তার জীবন আবার বাঁক নেয়। অরিন্দম বলছেন, ‘‘গল্পের মধ্যে একটা গতি রয়েছে, সেটাই সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে। নারী চরিত্রগুলো খুব জোরালো।’’ এখানে মা-মেয়ের সম্পর্কেরও একটা দিক আছে। বিপাশার সঙ্গে তার মেয়ে রোহিনীর কোথাও দ্বন্দ্ব চলে। কোথাও তারা আবার ভীষণ কাছাকাছি।
নবনীতা দেব সেন
বিপাশার চরিত্রটার প্রতি আকৃষ্ট হয়েই ছবিটা বেছেছেন ঋতুপর্ণা। ‘‘নবনীতাদি ভীষণ ইন্টারেস্টিং স্টাইলে গল্পটা বলেছেন, সেটাই আমাদের ছবির সবচেয়ে বড় ইউএসপি,’’ সিঙ্গাপুর থেকে ফোনে বললেন ঋতুপর্ণা।
অরিন্দম জানালেন, ছবিতে বাংলা সাহিত্যের সেই সময়ের দিকপালদের কথাও আসবে। সাগরময় ঘোষ, রমাপদ চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রেফারেন্স রয়েছে ছবিতে। এখনকার অভিনেতাদের দিয়েই চরিত্রগুলো সাজাবেন বলে ভেবেছেন পরিচালক। শঙ্কর চক্রবর্তীকে দিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চরিত্রটা করানোর ইচ্ছে রয়েছে অরিন্দমের। জানালেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়কেও একটি বিশেষ চরিত্রে নেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে তাঁর।
নবনীতার লেখা গল্প থেকে এই প্রথম ছবি তৈরি হচ্ছে। অরিন্দম যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরই ছাত্র ছিলেন। বললেন, ‘‘আমার ছাত্র আমার গল্প থেকে ছবি করতে চাইছে, তাই রাজি হয়ে গেলাম। এর আগে তো েকউ কখনও আগ্রহ দেখায়নি। দেখালে হয়তো রাজি হতাম,’’ নবনীতা এখনও চিত্রনাট্য পড়েননি।
অনেক সময় সিনেমার খাতিরে গল্পে রদবদল ঘটানো হয়। তাতে কি খারাপ লাগবে?
‘‘কী করে বলি বলুন তো! বদলের জন্য যদি গল্পের ক্ষতি হয় তা হলে একটু খারাপ লাগবেই। আবার বদলটা ভালও লাগতে পারে। ছবিটা আসলে নির্ভর করবে অভিনেতার দক্ষতার উপর। পুরোটাই পারফরম্যান্স নির্ভর,’’ জবাব লেখিকার।
নবনীতার আস্থা রয়েছে ঋতুপর্ণার উপর। সেটা শুনে নায়িকা বললেন, ‘‘এত ভাল একটা চরিত্র দেওয়ার জন্য ওঁর কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ। নবনীতাদির গল্প থেকে এটা প্রথম ছবি। প্রযোজক ব্রিক এন্টারটেনমেন্টও একদম নতুন। আশা করি, আমাদের এই পদক্ষেপ সফল হবে।’’
লন্ডন, কলকাতা জুড়ে ছবির শ্যুটিং হবে। সুন্দরবনের একটি অংশও ছবির গুরুত্বপূর্ণ স্থান জুড়ে রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই শ্যুটিংয়ের পরিকল্পনা নির্মাতাদের।