Sreelekha Mitra

Sreelekha Mitra: ক্ষমা করে দিস আমার মেয়ে, তোকে আদর্শ ছেলেবেলা দিতে পারলাম না: শ্রীলেখা

"আমার এবং শিলাদিত্য সান্যালের যখন বিচ্ছেদ হয় মাইয়্যা তখন মাত্র ৮! কিছু বুঝে ওঠার আগেই মা-বাবাকে আলাদা বাড়িতে দেখতে শুরু করেছে। বিভেদ থেকে দূরে রাখব বলেই ঝগড়া করতাম দরজা বন্ধ করে।"

Advertisement

শ্রীলেখা মিত্র

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২২ ১৫:০৬
Share:

মাইয়্যাকে নিয়ে অকপট শ্রীলেখা।

আমায় কোনও দিন মেয়ে মাইয়্যা সান্যালকে নিয়ে কখনও লিখতে দেখেছেন? ছবিও দিতে দেখেননি। কারণ, মাইয়্যা পছন্দ করে না। বিশ্বাস করুন, মঙ্গলবার ওকে দেখার পরে লোভ সামলাতে পারিনি। বন্ধুর জন্মদিনে আমার পোশাক, জুতো, গয়নায় সেজে মেয়ে উদযাপনে সামিল! সেই ছবি আমায় দিয়েছিল। সাজলে এত সুন্দর দেখায় মাইয়্যাকে? আরও এক বার যেন অনুভব করলাম। সেই জায়গা থেকেই ওকে না জানিয়ে ছবিটি ভা্গ করেছি। কিছু কথাও লিখেছি। গর্ব করেছি মেয়েকে নিয়ে। আফশোস করেছি, ‘‘ক্ষমা করে দিস মা! তোকে আমি আদর্শ ছেলেবেলা দিতে পারিনি।’’

Advertisement

কেন এত দিন পরে এই উপলব্ধি? তা হলে বলি, এটা কিন্তু এক দিনের নয়। আমার এবং শিলাদিত্য সান্যালের যখন বিচ্ছেদ হয় মাইয়্যা তখন মাত্র ৮! কিছু বুঝে ওঠার আগেই মা-বাবাকে আলাদা বাড়িতে দেখতে শুরু করেছে। মাইয়্যাকে আমাদের বিভেদ থেকে দূরে রাখব বলেই ঝগড়া করতাম দরজা বন্ধ করে। আলাদা হওয়ার এক দম শুরুতে এটুকুই বলতে পেরেছিলাম, ‘‘মা, তোমার যখন যার কাছে থাকতে ইচ্ছে করবে, থেকো। মা-বাবার দরজা তোমার জন্য সব সময় খোলা।’’ সত্যিই তো আমরা ওকে সুস্থ ছেলেবেলা দিতে পারিনি! সেদিনও ওর কোনও অনুযোগ ছিল না। চুপচাপ মেনে নিয়েছে সব। বদলে, সপ্তাহের মাঝে হয়তো ব্যাগ গুছিয়ে বাবার কাছে থাকতে গিয়েছে। নিজেই নিজের ভারী ব্যাগ টেনে নিয়ে যেত। তাতে বাড়তি পিটি ক্লাসের পোশাক, জুতো ভরা।

আমাদের বাড়িতে আমিই প্রথম বিবাহ-বিচ্ছিন্ন। ফলে, ‘একা মা’ হওয়ার অভিজ্ঞতা দেখে শিখিনি। ঠেকে শিখেছি। একা হাতে ঘর-বার সামলাতে গিয়ে নাকের জলে চোখের জলে হয়েছি। সব সময়েই যে মেয়ের সব কিছু পূরণ করে উঠতে পেরেছি, এমনও নয়। মাইয়্যা কিন্তু তাই নিয়েও নালিশ করেনি। আমার ট্যাব চাই, নোট প্যাড চাই, অমুক তমুক.... বলতেই শুনলাম না! ক্রিম মাখো রে, চুল বাঁধো রে বললে তবে সে সব হয়। বদলে ভাল ছবি দেখার পিছনে সময় খরচ করতে রাজি। বা পড়াশোনা কিংবা আরও অন্য কিছু। ওর পোশাক অঢেল। জুতো থেকে গয়না, সাজার জিনিসও যথেষ্ট রয়েছে। তার পরেও ওর আমারটাই লাগবে। পড়তে পড়তে উঠে আমার কাছে বায়না, ‘‘কিচ্ছু নেই আমার! তোমার যা আছে দাও। পরে যাব।’’ ওর ছেলেমানুষ মন দেখে হেসে ফেলি। ওকে সাজিয়েও দিয়েছি। বাবার সঙ্গে মেয়ে চলে গিয়েছে বন্ধুর বাড়ি।

Advertisement

তখনই মনে হল, এই মেয়েই বাকি সময় কত পরিণতমনস্ক! ‘একা মা’-কে সামলেছে। প্রয়োজনে পরামর্শও দিয়েছে। নিজেই নিজেকে সামলে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। তখনই মনে পড়েছে অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ের কথা। এই প্রজন্মকে আমরা কত দোষারোপ করি! এই প্রজন্ম কিন্তু অনুভূতিপ্রবণ। নইলে সদ্য প্রয়াত বাবার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মাকে ও ভাবে সামলাতে পারে? আমার মেয়েও তো সে রকমই। দামি কিছু কিনতে রাজি নয়। কুকুরদের জন্য নিরামিষ খায় নিজে।পথপশুদের ভালবাসতে ওর থেকেই শিখেছি। একটু চাপা। অনেকটা ভেবেচিন্তে কাজ করে। চট করে মুখে প্রকাশ করতে চায় না কিছু।

যে নীরবে ১৬ বছর ধরে ‘আমার’ হয়ে রয়ে গেল, তাকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলে যে কোনও মানুষের চোখ তো ভিজবেই। সেখানে আমি তো মাইয়্যার মা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement