পর্দায় এলেই নাকি ভাঙন ধরত দর্শকের মনে, এতটাই আবেদন ওঁর। অভিনয় প্রতিভার কারণেই দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। শুধু অভিনয়ই নয়, তাঁর ক্যারিশমা রাতের ঘুম কেড়েছিল অনেকেরই। চিনতে পারছেন এই অভিনেত্রীকে?
১৯৭৩ সাল। মাত্র ১৬ বছর বয়সে 'ববি' সিনেমা দিয়ে বলিউডে ডেবিউ করেন ডিম্পল কাপাডিয়া। ঋষি কাপুরের বিপরীতে কাজ করেছিলেন অভিনেত্রী।
ববি ছবিতে তাঁর ‘রেড বিকিনি’ লুক, পোলকা ডটের পোশাক সেই সময়ের ফ্যাশন আইকন করে তুলেছিল ডিম্পলকে। পোশাকের নামই হয়ে গেল ‘ববি প্রিন্ট’।
এই ছবি থেকেই ঋষি কপূরের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব। বলিউডে গুঞ্জন, পরস্পরের প্রতি প্রেমে পড়লেও সেই ভালবাসা পরিণতি পায়নি। ‘সুপারস্টার’ রাজেশ খন্নার কাছে কার্যত হার মানতে হয়েছিল ঋষিকে।
বলিউডের ছবিতে যৌনতা নিয়ে খানিকটা রাখঢাকই ছিল বরাবর। ডিম্পলই সেই আগল ভেঙেছিলেন। ‘বোল্ড’ অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকরা তাঁকে বেশ পছন্দই করতেন।
'ববি' মুক্তি পাওয়ার ছয় মাস আগেই রাজেশ খন্নার সঙ্গে বিয়ের সময় সিনেমা থেকে সরে আসেন ডিম্পল। রাজেশ খন্নাই নাকি তাঁকে দীর্ঘ ১২ বছর অভিনয় করতে দেননি, বলিউডের একাধিক পত্র-পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল এমনই।
১৯৮৪ সাল থেকে তাঁরা আলাদাই থাকছিলেন।১৯৮৫ সালে ফের বড়পর্দায় ফেরেন ডিম্পল। সুপারহিট হয় 'সাগর' সিনেমাটিও। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পেয়েছিলেন একাধিক মঞ্চ থেকে।
'সাগর' ছবিতে অভিনয়ের জন্য বিতর্কের মুখে পড়েন অভিনেত্রী। এক ঝলকের জন্য তাঁকে ‘টপলেস’ মনে হয়েছিল একটি দৃশ্যে।
শুধুমাত্র মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি নয়, সমান্তরাল ছবিতেও ডিম্পল রাখলেন দক্ষতার ছাপ। ডিম্পলের ১৪ বছর বয়সে রাজ কপূর ঠিক চিনেছিলেন যে এই মেয়ে অভিনয় করতে পারবে।শুধু শরীরী আবেদন নয়, অভিনয়ের মাধ্যমেও ডিম্পল প্রমাণ করলেন নিজেকে।
১৯৫৭ সালে গুজরাতি পরিবারে জন্ম ডিম্পলের। মুম্বইয়ে কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। সেই মেয়েই কামব্যাকের পর ফের বলিউডের একগুচ্ছ সিনেমা 'কাশ', 'দৃষ্টি', 'লেকিন', 'রুদালি'-তে নিজের সবটা উজাড় করে দিয়েছিলেন।
স্বামী রাজেশের সঙ্গে আলাদা থাকছিলেন তিনি। যদিও দুই সন্তান টুইঙ্কল ও রিঙ্কির জন্যই নাকি ডিম্পলকে কোনও দিনই ডিভোর্স দিতে চাননি রাজেশ খন্না।
১৯৮৫ সালে ফের নিজের ফিল্মি কেরিয়ারে ফিরে আসেন ডিম্পল। তখনই নাকি সানি দেওলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান অভিনেত্রী। সবে অমৃতা সিংহের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙেছে সানি দেওলের। ডিম্পলও বিবাহিত হয়েও একাই থাকতেন মেয়েদের নিয়ে।
সানি যেই এলেন ডিম্পল যেন বেঁচে থাকার টাটকা অক্সিজেন পেলেন। আঁকড়েও ধরলেন নতুন প্রেমকে। যদিও পুরোটাই চলছিল গোপনে।
দুই মেয়ে টুইঙ্কল আর রিঙ্কি নাকি সানিকে ‘ছোটে পাপা’ বলেও ডাকতেন। আর সানি? তিনি পারেননি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে। বাবা ধর্মেন্দ্রর মতো নিজের ‘ড্রিমগার্ল’কে বিয়েও করতে পারেননি।
দর্শকরা উপহার পেলেন ‘অর্জুন’, ‘মঞ্জিল মঞ্জিল’, ‘আগ কা গোলা’, ‘গুনহা’, ‘নরসিমা’র মতো সুপারহিট ছবি। কাজ করেছেন ‘রাম লক্ষ্মণ’, ‘অ্যায়তবার’, ‘দৃষ্টি’, ‘ফাইন্ডিং ন্যানি’-তে। এখনও পর্যন্ত ৮ বার ফিল্মফেয়ার সম্মান পেয়েছেন ডিম্পল।
১৯৯০ সালে রাজেশ খন্নার সঙ্গে ‘শিব শঙ্কর’ ছবিতে ফের কাজ করেছিলেন ডিম্পল। রাজেশের জীবনের শেষ দিকে তাঁর সঙ্গেই আবার থাকতে শুরু করেছিলেন ডিম্পল। মৃত্যুর সময়ও রাজেশ খন্নার পাশেই ছিলেন ডিম্পল।
বারেবারে পর্দায় নতুন অভিনেত্রী হিসেবে দর্শকদের সামনে নিজেকে তুলে ধরেছেন ডিম্পল। ফারহান আখতার পরিচালিত ‘দিল চাহতা হ্যায়’-এ ডিম্পলের অভিনয় মুগ্ধ হয়েছিলেন দর্শকরা।
চার দশকেরও বেশি সময় জুড়ে শুধু বলিউডে নয়, হলিউডেও অভিনয় করছেন ডিম্পল। ইরফান অভিনীত শেষ ছবি ‘আংরেজি মিডিয়াম’-এ কাজ করেছেন তিনি। অয়ন মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ ছবিতেও কাজ করেছেন ডিম্পল।
তবে অয়নই প্রথম নন, এর আগে কিংবদন্তি বাঙালি পরিচালক মৃণাল সেনের ‘অন্তরীণ’ ছবিতে কাজ করেছেন ডিম্পল। বিপরীতে ছিলেন অঞ্জন দত্ত।
তবে সানিকে নাকি কখনওই ভোলেননি ডিম্পল। ২০০৯-এ বোন সিম্পলের মৃত্যুর পর শোক ভুলতে সানিই নাকি সাহায্য করেন ডিম্পলকে। ঘনিষ্ঠ জনদের কাছে বরাবর ডিম্পলকে প্রেমিকা হিসেবে নাকি স্বীকার করেছেন সানি।
২০১৮ সালে লন্ডনের রাস্তায় হাতে হাত রেখে প্রেম করতে দেখা গিয়েছিল সানি-ডিম্পলকে। ৩০ বছর পরেও নিজেদের ভালবাসা তাঁরা নাকি ভোলেননি। যদিও এই নিয়ে কেউ কখনও প্রকাশ্যে কথা বলেননি।
ব্যক্তিগত জীবনে মেয়ে টুইঙ্কল, জামাই অক্ষয় কুমার, নাতি, ছোট মেয়ে রিঙ্কিকে নিয়ে ভাল আছেন ডিম্পল। নিজের শর্তেই বাঁচছেন বরাবরের মতো। সানিও নিজের পরিবারকে ছেড়ে আসেননি কখনও।