বলিউডের ‘খাল্লাস গার্ল’ বলা হয় এই নায়িকাকে। শুধু বলিউড নয়, পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, কন্নড় এবং মরাঠি ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। চিনতে পারছেন এই বলিউড অভিনেতাকে? ইনি ইশা কোপিকর।
মেঙ্গালুরুর একটি পরিবারের জন্ম ইশার। বাড়িতে প্রত্যেকেই শিক্ষা জগতের সঙ্গে যুক্ত। ইশা নিজেও ছিলেন মেধাবী ছাত্রী। স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করেছেন জীববিদ্যা নিয়ে।
পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ১৯৯৫ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া’ প্রতিযোগিতায় নাম লেখালেন তিনি। ‘মিস ট্যালেন্ট’-এর মুকুটও পেলেন।
ইশা বলিউডে হৃতিক রোশনের সঙ্গে প্রথম ছবিতে কাজ করেন একটি ছোট চরিত্রে। ছবির নাম ‘ফিজা’।
উচ্চতা এবং পর্দায় উপস্থিতির কারণে সহজেই দর্শকদের মন কাড়েন ইশা। এর পর প্রকাশ ঝায়ের ছবিতে আইটেম ডান্সেও চমক লাগিয়ে দেন তিনি।
তবে নায়িকা হিসেবে বলিউড ডেবিউ করেন সুনীল শেট্টির বিপরীতে ‘পেয়ার ইশক অউর মহব্বতেঁ’ ছবিতে। গোবিন্দার সঙ্গে ‘আমদানি আঠ্ঠানি খরচা রুপাইয়া’র পর সবাই ভেবেছিলেন এই মেয়ে বলিউডে পাকাপাকি জায়গা করে নিতে এসেছে।
শুরুতে একের পর এক ব্র্যান্ডের মডেলিংও করতেন ইশা। ল’রিয়েল, পন্ডস, কোক-সহ একাধিক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে কাস্টিং কাউচের মুখোমুখি হয়েছিলেন ইশা। নেপথ্যে নাকি এক নামী বলিউড অভিনেতা। তবে তাঁর নাম কখনও প্রকাশ্যে আনেননি নায়িকা।
রামগোপাল ভার্মার ছবি ‘কোম্পানি’তে অভিনয় করেন তিনি অজয় দেবগণের সঙ্গে। এই সিনেমার একটি বিশেষ গানের জন্য ‘খাল্লাস গার্ল’ বলে পরিচিত হন ইশা। ‘মোস্ট এক্সাইটিং নিউ ফেস’ পুরস্কারও মেলে বলিউডের তরফে।
এ হেন ইশা আবার বেশ কিছু বি গ্রেড ফিল্মেও অভিনয় করেন। তার মধ্যে ‘হাসিনা...’ ছবিটি বেশ সফলও হয়।
বিতর্কের সূত্রপাত কর্ণ রাজদা পরিচালিত ‘গার্লফ্রেন্ড’ ছবিটিকে কেন্দ্র করে। এই ছবিতে তিনি সমকামী এক মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেন। বেশ কিছু সাহসী দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য ইশাকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। অমৃতা অরোরা ও আশিস চৌধুরিও ছিলেন ছবিতে।
অজয় দেবগণ, অমিতাভ বচ্চন, সুনীল শেট্টির সঙ্গে কাজ করার কারণে বলিউডে ইশার দর বাড়তে থাকে। একই সঙ্গে দক্ষিণী ছবির জগতে অরবিন্দ স্বামীদের সঙ্গেও কাজ করতে থাকেন ইশা।
‘দিল কা রিশতা’, ‘ডরনা মানা হ্যায়’, ‘পিঞ্জর’-এর মতো সিনেমায় তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ‘পিঞ্জর’ ছবিটি জাতীয় পুরস্কারও পায়। জেপি দত্তর এলওসি কার্গিলেও একটি ছোট চরিত্রে দেখা গিয়েছিল ইশাকে।
মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে ‘ইন্তেকাম’, সইফ আলি খান, রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘হাম তুম’-এ দেখা গিয়েছে তাঁকে। ‘কেয়া কুল হ্যায় হাম’, ‘৩৬ চায়না টাউন’, ‘ডি-আন্ডারওয়ার্লড বাদশা’-একের পর এক ছবিতে কাজ করেন ইশা ২০০৫ সালে।
ইশার জীবনে অন্যতম ব্রেক ছিল শাহরুখ খানের বিপরীতে অভিনয়। ডনের প্রেমিকা অনিতার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। পরবর্তীতে ‘হ্যালো ‘ছবিতেও কাজ করেন। লেখক চেতন ভগতের ‘ওয়ান নাইট অ্যাট কল সেন্টার’ অবলম্বনে তৈরি হয় এই ছবি।
তবে শাহরুখের সঙ্গে অভিনয় করেও বলিউডে সেই মান ধরে রাখতে পারেননি ইশা। ব্যক্তিগত জীবনেও টালমাটাল চলছিল।
ইশার প্রথম প্রেম ছিলেন বলিউড অভিনেতা ইন্দ্র কুমার। তবে তাঁদের বিয়ে হয়নি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়ে ইন্দ্র কুমারের। তাঁর মৃত্যুর পর স্ত্রী সোনাল জানিয়েছিলেন, ‘‘ইন্দ্র কখনওই ইশাকে মন থেকে ভুলতে পারেনি। আমি বিয়ের সময়েও জানতাম।‘’
পরবর্তীতে ইশার সঙ্গে পরিচয় হয় হোটেল ব্যবসায়ী টিমি নারাংয়ের। দু’জনেরই ভাল লেগেছিল পরস্পরকে। তাঁদের আলাপ করিয়ে দেন প্রীতি জিন্টা। এর পর ২০০৯ সালে নিকট বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে গাঁটছড়া বাঁধেন ইশা।
তিনি কিন্তু ফিটনেস ফ্রিকও। জানেন তায়কোন্ডুও। নিয়মিত শরীরচর্চা ও যোগাভ্যাস করেন। অবসরে ইশা ভালবাসেন বই পড়তে, ঘুরে বেড়াতে আর প্রিয় জনদের সঙ্গে সময় কাটাতে। ইশা ও টিমির একটি মেয়ে রয়েছে নাম রিয়ানা। রিয়ানাকেও তায়কোন্ডু শেখাচ্ছেন ইশা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দিলেন অভিনেত্রী ইশা কোপিকর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকরীর উপস্থিতিতে দলে যোগ দেন তিনি। দলের পরিবহণ শাখার মহিলা বিভাগের সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে তাঁকে।
বলিউড থেকে রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছেন অনেকেই। সাফল্যও পেয়েছেন অনেকেই। বলিউডে সেই অর্থে দারুণ কিছু সাফল্য না পেলেও রাজনীতিতে টিকে থাকতেই চান ‘খাল্লাস গার্ল’।