Payel Ghosh

‘আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব’, অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক পায়েল ঘোষ

অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক পায়েল ঘোষ।

Advertisement

ঈপ্সিতা বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

পায়েল।

প্র: ২০১৩য় অনুরাগ কাশ্যপ তাঁর ছবিতে আপনাকে কাস্টিং করতে চেয়ে ইয়ারি রোডের ফ্ল্যাটে ডেকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা করেন, এটাই আপনার অভিযোগ। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে সাত বছর অপেক্ষা করতে হল কেন?

Advertisement

উ: বারবার কথাগুলো বলার চেষ্টা করলেও, আমার ম্যানেজার ও পরিবারের কাছ থেকে বাধা পেয়েছি। ২০১৮-য় #মিটু-র সময়ে অনুরাগের সঙ্গে অভিজ্ঞতার কথা টুইট করার কিছুক্ষণের মধ্যে ডিলিট করতে বাধ্য করেছিল আমার পরিবার। সেই ভয়াবহ দিনগুলোর কথা বলার মতো কাউকে পাশে পাইনি। এ বার একটি তেলুগু চ্যানেল পাশে দাঁড়াতে, কাউকে না জানিয়ে চ্যানেলের মাধ্যমে সমস্ত কথা তুলে ধরি। তার পর আমার বাবা-সহ আরও অনেকেই পাশে দাঁড়ানোয় অনুরাগের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পাই।

প্র: অনুরাগের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যে...

Advertisement

উ: ঘটনাটি অনেক আগের। তাই সময়ের গ্রাসে অনেক প্রমাণ নষ্ট হয়েছে। এ বার পুলিশ তদন্ত করে বার করুক কে সত্যি বলছে। মুম্বই পুলিশ অনেক বেশি সময় নিচ্ছে বলেই আমার ধারণা। তদন্ত হতে দেরি হলে, যেটুকু প্রমাণ রয়েছে, তাও নষ্ট হয়ে যাবে। মামলার শুরুতেই আমাকে হেনস্থা হতে হয়েছে। মামলার স্বার্থে একটি মেডিক্যাল টেস্ট করাতে গিয়ে, চার ঘণ্টার পরিবর্তে চার দিন সময় লেগেছিল। কিন্তু আমিও হাল ছাড়ছি না, এর শেষ দেখে ছাড়ব।

প্র: অনুরাগ বিতর্কে রিচা চড্ডার সঙ্গে আইনি মামলায় হেরে গিয়ে ট্রোলড হলেন...

উ: অনুরাগের কাছেই রিচার নাম শুনি। আলাদা কোনও প্রমাণ ছিল না। তা ছাড়া আমার অভিযোগ রিচার বিরুদ্ধে নয়। তাই ভুল স্বীকার করে মামলা মিটিয়ে নিই তাড়াতাড়ি। তবে রিচাকে বলতে চাই, পায়েল কেন তাঁর নাম নিলেন, অনুরাগের কাছে একবার জানতে চান। আমাকে মিথ্যে প্রমাণ করার আগে নিজেরা যাচাই করুন।

প্র: ইয়ারি রোডের ফ্ল্যাটে ঠিক কী ঘটেছিল, যা আজকের মামলার প্রেক্ষাপট?

উ: আমার ম্যানেজার অনুরাগের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ওঁর অফিসে। কয়েক দিন পর দ্বিতীয়বার তিনি ফ্ল্যাটে ডাকলেন। বাড়ি পৌঁছে ওঁর হাতে মদের গ্লাস ছাড়াও, কটু গন্ধ পাই। কিছুক্ষণ পর উনি পাশের ঘরে গিয়ে, হঠাৎই আমাকে কাছে টানেন। বারবার ‘লেট মি গো’ বলা সত্ত্বেও ছাড়েননি। আরও অনেক অভিনেত্রীর নাম বলে আটকানোর চেষ্টা করেন। তার পরের ঘটনাগুলো এখন মামলার স্বার্থে বলা যাবে না।

প্র: অনুরাগের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন না কেন?

উ: তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর কথা তুলতেই ম্যানেজার বাধা দিয়েছিলেন। তখন অনুরাগ ‘বম্বে ভেলভেট’ ছবির শুটিং করছিলেন। ওই সময়ে ওঁর প্রভাব প্রতিপত্তি ভালই ছিল। আমার মতো সাধারণ মেয়ের অভিযোগ কেউ শুনবে না, উল্টে আমার কেরিয়ারের ক্ষতি হতে পারে, সেই ভয়ে ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে সাহস পাইনি। তবে ঘটনাটা আমাকে ডিপ্রেশনের দিকে ঠেলে দেয়। রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমোতাম। অন্ধকার হলেই কেউ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে মনে হত। প্যানিক অ্যাটাক হয় দু’বার, ওষুধও খেতাম। কিন্তু এখন সব বলে দিয়ে অদ্ভুত শান্তি পেয়েছি।

প্র: এর পর যোগাযোগ ছিল অনুরাগের সঙ্গে?

উ: যোগাযোগ রাখতে বাধ্য করেছিলেন আমার ম্যানেজার। ওঁকে রাগিয়ে দিলে ক্ষতি হওয়ার ভয়ে ফোনে যোগাযোগ রাখি। তার পরেও অনুরাগের দিক থেকে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব এলেও এড়িয়ে যাই।

প্র: ‘পটেল কী পঞ্জাবি শাদি’-তে বলিউডে ডেবিউ করলেন। কিন্তু অনুরাগের ছবিতে সুযোগ পেলে কি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতেন?

উ: শর্ত ছাড়া অনুরাগ কাশ্যপ সুযোগই দিতেন না আমাকে। শর্ত মেনে কাজ করা সম্ভব ছিল না। অশালীন আচরণের পর, ওঁর সঙ্গে কাজ করব না ঠিক করেছিলাম। কিন্তু নবাগতা হয়ে সে দিন ওঁর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাইনি।

প্র: কিন্তু অনেকে বলছেন, শ্যামবাজারের পায়েল ঘোষকে এর আগে কেউই চিনতেন না। বলিউডে নিজের প্রচারের লক্ষ্যেই অনুরাগ কাশপ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন?

উ: আমার ন্যায়বিচার চাওয়াটা শুধু নিজের জন্য নয়, যাঁরা স্ট্রাগল করছেন, তাঁদের জন্যও। তাঁদের যাতে অনুরাগের মতো মানুষের মুখে না পড়তে হয়। এটা আমার সামাজিক দায়িত্ববোধ।

প্র: এই মামলার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস অটওয়ালের দল রিপাবলিকান পার্টি অফ ইন্ডিয়া (আরপিআই)-য় আপনার যোগদানকে অনেকেই বলছেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত...

উ: অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য রামদাসজি মনের জোর জুগিয়েছেন। তাই তাঁর প্রস্তাব ফেলতে পারিনি। অনুরাগের বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে পুলিশের কাছে জানতে পারি, এ রকম ভূরিভূরি অভিযোগের ফাইল পড়ে রয়েছে, যার কিনারা হয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে আমার মামলার ফাইলে অন্তত ধুলো জমবে না।

প্র: তবে পায়েল সম্পর্কে বলিউড এখনও নিশ্চুপ কেন?

উ: বলিউড নিজের স্বার্থ ছাড়া কথা বলে না। অনুরাগ না হয়ে কম প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে ঝাঁপিয়ে পড়ত।

(সাক্ষাৎকারে পায়েল ঘোষের মতামত তাঁর ব্যক্তিগত। অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন বা মেসেজের উত্তর দেননি।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement