লীনা।
প্র: এই প্রথম হিন্দি ধারাবাহিকের জন্য মৌলিক গল্প লিখছেন। লেখার ধরন কতটা পাল্টালেন?
উ: হিন্দিতে কাজ করছি বলে নিজেকে বদলে ফেলিনি পুরো। নিজস্বতা বজায় রেখেই গল্প লিখেছি। তবে দর্শক যেহেতু আলাদা, একটা প্রাথমিক রিসার্চ করেছি। এর আগে আমার গল্প নিয়ে ‘শ্রীময়ী’ থেকে ‘অনুপমা’, ‘কুসুমদোলা’ থেকে ‘গুম হ্যায় কিসি কে পেয়ার মে’, ‘ইষ্টিকুটুম’ থেকে ‘ইমলি’ হয়েছে। এ বার কালার্সের নতুন ধারাবাহিক ‘থোড়াসা বাদল থোড়াসা পানি’ আমার ছেলে অর্কর প্রোডাকশন। ওর কাছে প্রথমে ছবির প্রস্তাব ছিল। মুম্বই যাওয়ার পরে যখন সকলে জেনেছিল আমি ওর মা, তখনই ঠিক হয়, আমার লেখা গল্প নিয়ে তৈরি হবে ধারাবাহিক।
প্র: ‘ধুলোকণা’র গল্প কতটা আলাদা আপনার আগের গল্পগুলির চেয়ে?
উ: সব সময় মাথায় ঘোরে, কোন ক্ষেত্রটা এখনও এক্সপ্লোর করা হয়নি। ‘ধুলোকণা’র সময়ে ভেবেছিলাম, সেই সব প্রান্তিক মানুষের কথা, যাঁদের ছাড়া আমাদের এক দিনও চলে না। অথচ আলাদা করে মনে পড়ে না তাঁদের।
প্র: আপনার সৃষ্ট অনেক চরিত্রই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে মিম-কৌতুকের কেন্দ্রবিন্দু। সে সব দেখে রাগ হয় না?
উ: সোশ্যাল মিডিয়ার মতামতকে খুব একটা গ্রাহ্য করি না। কারণ আমার যাঁরা দর্শক, তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া করেন না। যে মিমের মধ্যে হিউমর আছে, সেটায় মজা লাগে। তবে অনেক মিম অশ্লীল, বহু মন্তব্যই কুরুচিপূর্ণ। চারদিকের এত মতামত নিয়ে তো একজন লেখক লিখতে পারেন না। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেও পার পেয়ে যান। মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে আমার পক্ষে শাস্তির ব্যবস্থা করাও খুব কঠিন নয়। সম্প্রতি শ্রুতি দাসের সঙ্গে হওয়া ঘটনাটি তা দেখিয়ে দিয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এই প্রবণতাও কমবে হয়তো।
প্র: সমসাময়িক বাংলা ধারাবাহিকের মান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তুলনা করা হয় পুরনো দিনের সিরিয়ালের সঙ্গে। লেখক হিসেবে কী ভাবে দেখেন বিষয়টি?
উ: দর্শকই কিন্তু শ্রেষ্ঠ বিচারক। আগে অনেক কম পুঁজি নিয়ে গল্প বলতে হত, যেটা আজকের দিনে অনেক পাল্টে গিয়েছে। আর দর্শকের কাছেও সেই অভিজ্ঞতা নতুন ছিল। প্রথম যা কিছুই আসে, তা ছাপ রেখে যায়। তবে এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভাল কাজ হচ্ছে না, সেটা বলা যায় না। কারণ এখন বাংলা ধারাবাহিক বাণিজ্যিক দিক থেকে অনেক বেশি সফল। মানুষ দেখেন বলেই বিজ্ঞাপন আসছে। সময়ের সঙ্গে গল্প বলার ধরন বদলেছে। আমরা যখন প্রথম কাজ করতে এসেছিলাম, টিআরপি কী, জানতাম না। আর এখন দর্শকও টিআরপি নিয়ে কথা বলেন। এই লড়াইটায় তাঁরাও ঢুকে পড়েছেন।
প্র: আপনার মতে, ‘শ্রীময়ী’র বিপুল জনপ্রিয়তার কারণ কী?
উ: কারণ, প্রত্যেক ঘরেই একজন করে শ্রীময়ী আছেন। চরিত্রটার মধ্যে আমি কখনও আমার মায়ের ছায়া দেখতে পাই। আসলে চেনা চরিত্র না হলে আমি লিখতে পারি না। শুধু ‘শ্রীময়ী’ কেন, জনপ্রিয়তার নিরিখে ‘ইষ্টিকুটুম’ একটা ব্র্যান্ড তৈরি করে ফেলেছিল।
প্র: কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কী ভাবে পেরোলেন কঠিন সময়টা?
উ: আমার একটু বাড়াবাড়িই হয়েছিল। তবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি। কণ্ঠস্বর এত ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল যে, ডিক্টাফোনে আমার গলা শুনে টাইপ করতে সমস্যা হত লেখা। আমার কিছু হয়ে গেলে যদি প্রোডাকশন বিপদে পড়ে, এই আশঙ্কায় বেশি করে লিখে রাখতাম। কোভিডের সময়েই আমার লেখার সবচেয়ে বেশি ফুটেজ উঠেছে!
প্র: আপনি ওয়েবে কাজ করবেন না?
উ: করলে হিন্দিতে করব, বাংলায় নয়। বাংলা ওটিটি-র ধরনের সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারি না। হিন্দি ওটিটির প্রস্তাব আছে, সেগুলো নিয়ে বছরখানেক পরে ভাবব। ছবিও তো অনেক দিন ধরে আটকে আছে। পুজোর পরে দেব, শ্রাবন্তী, পাওলিকে নিয়ে নতুন কাজ শুরু হবে।
প্র: নিজের জন্য সময় পান?
উ: নাহ। বই পড়ার সময় পাই না, আগে যেটা ভাবতেই পারতাম না। মহিলা কমিশনের কাজে নিয়মিত স্পট ভিজ়িটে যেতে হয়। সব ফোন ধরতে হয়। রাত তিনটের সময়েও লিখি, সকাল ন’টায়ও। একদিন নিশ্চয়ই এই রুটিন থেকে বেরোব। আবার বই পড়তে পারব।