চিনি-ভুটুর মিষ্টি গল্প

দুই খুদে তারকা তিয়াসা পাল ও ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝগড়া, খুনসুটি, হাসি-ঠাট্টায় ভরপুর আড্ডা দুই খুদে তারকা তিয়াসা পাল ও ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঝগড়া, খুনসুটি, হাসি-ঠাট্টায় ভরপুর আড্ডা

Advertisement

নবনীতা দত্ত

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৮ ০২:১৭
Share:

তিয়াসা ও ব্রত। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

স্প্যাগেত্তি আর কালোজামের বন্ধুত্ব হলে কেমন হয়? তিয়াসা পাল ও ব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বন্ধুত্বও ঠিক তেমনই নোনতা-মিষ্টি। কথায়-কথায় দু’জনের ঝগড়া! খানিক পরেই আবার গলা মিলিয়ে গান ধরছে, ‘ঝগড়াঝাঁটি রাগ, মারামারি ভাগ... সাতটা-আটটা হামি।’ এই দুই খুদেকে অভিনয় করতে দেখা যাবে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের ‘হামি’তে।

Advertisement

দক্ষিণ কলকাতার নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিয়াসা। ব্রত পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে। পড়াশোনার ফাঁকেও শুটিং চালিয়ে গিয়েছে জোরকদমে। এ দিকে সিনেমার পোস্টারে তাদের ছবি দেখে স্কুলের বন্ধুরা ভীষণ উত্তেজিত! ব্রত লাফিয়ে উঠে বলল, ‘‘আজ বাসের মধ্যে সকলে ভুটু ভাইজান গাইতে শুরু করে দিয়েছে। আমার আসল নামটাই তো বন্ধুরা ভুলে গিয়েছে, শুধু ভুটু বলে ডাকছে। আর বাড়িতে কী হচ্ছে বলো তো? দিদাকে সকলে ফোন করে বলছে, ‘তোর নাতির এই দেখলাম, ওই দেখলাম।’ আর দিদা বলছে, ‘তোমরা এত কী দেখলা ভাই? আমি তো এখনও কিসুই দেখতে পেলাম না।’’

ব্রতর মুখের কথা প্রায় কেড়ে নিল তিয়াসা, ‘‘আমার স্কুলের বন্ধুরা তো আরও অদ্ভুত। আমার একটা বন্ধু আছে, সে আমাকে দেখলেই শুধু বলে যায়, ‘দুটো-তিনটে হামি, চারটে-পাঁচটা হামি, দশটা-বারোটা হামি!’ আর বাকি বন্ধুরা বলছে যে, তুই স্প্যাগেত্তি খাচ্ছিস... আর তোর পাশের জন... একটু কানে কানে শোনো?’’ কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, ‘‘ব্রতকে স্কুলের বন্ধুরা মোটু বলে ডাকছে।’’

Advertisement

কথা শেষ হওয়ার আগেই ব্রত রেগেমেগে চেয়ার থেকে উঠে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, ‘‘ও! আমাকে সবাই মোটু বলে ডাকছে? আমার কান অনেক শার্প, নাকও শার্প। আমি সব শুনতে পাই। আমি মোটু? শোন, আমার তরফ থেকে তোর বন্ধুদের বলে দিবি যে-যে-যে (ঠিক তিন বার বলার পর), আমায় এ রকম বলার পরিণাম ভাল হবে না।’’ নিজেকে মোটা বলে মানতে বিলকুল নারাজ ব্রত। তার কথায় ছবির পরিচালকদ্বয় তাকে ‘কিংকংয়ের ভাই কং’ বানিয়ে ছেড়েছে! এবং আসলে সে নাকি বিশেষ কিছু খেতে ভালবাসে না, মিষ্টি ছা়়ড়া। শুধু শুটিং চলাকালীন মাত্র তিরিশটা কালোজাম খেয়েছে!

তিয়াসার কাছ থেকে কিন্তু অন্য গল্পই শোনা গেল। এক দিন শুটিংয়ের জন্য নাকি এক বাটি স্প্যাগেত্তি আর লুচি-আলুর দম এনে রাখা হয়েছিল। তখন পরিচালকদ্বয় ব্যস্ত মনিটরে। সেই ফাঁকে গায়েব দুই টিফিনবক্সের খাবার। এ বার আসল কথাটা স্বীকার করল ব্রত, ‘‘আমাদের লোভ অনেক। এই অ্যাত্তোটা...’’ বলেই দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। তার পর মুখ কাঁচুমাচু করে মাথা চুলকে বলল, ‘‘সব আবার রান্না করতে হয়েছিল। আমাদের উপর শিবুদা রেগে অ্যাটম বোম হয়ে গিয়েছিল। পুরো গোল খয়েরি বোম! মাথার উপর একটা সুতো আর তাতে আগুন লাগিয়ে দিলেই দুম ফটাস!’’ বলেই হাসতে শুরু করল। তিয়াসা খুব সাবধানী, সে আবার ব্রতকে কনুই দিয়ে ঠেলল, ‘‘তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? এই সব তো ছাপা হবে। তখন শিবুদা তোকে সত্যিই ফাটিয়ে দেবে!’’

কিন্তু একা ব্রতই খেতে ভালবাসে না, তিয়াসাও খেতে খুব ভালবাসে। তার প্রিয় খাবার মাটন বিরিয়ানি। সেটা আবার ব্রতর পছন্দ নয়। নাক সিঁটকে সে বলল, ‘‘ছাগল আবার কেউ খায় নাকি?’’ তা হলে কি মুরগি পছন্দ? সাফ জবাব তার, ‘‘নন ভেজ, ভেজ কোনওটাই পছন্দ নয়। আমার পছন্দ মাঝেরগুলো, যেমন, সয়াবিন, পনির, ধোকা...’’ তবে রোজ একটা খাবার তার মাস্ট, বকুনি খাওয়া। নিজেই স্বীকার করল, ‘‘হাতের লেখার জন্য বকুনি খাই। আসলে আমার হাতের লেখা খুবই সুন্দর। স্কুলে গিয়ে সব বাজে করে লিখি। ব্যস! বাড়ি ফিরেই বকুনি।’’

পড়াশোনা করতে ব্রতর মোটেই ভাল লাগে না। পড়াশোনার কথা উঠতেই বলল, ‘‘আমি না এ বার মাটির মধ্যে ঝাঁপ দেব!’’

সুতরাং প়ড়াশোনা থেকে সরে এলাম সিনেমা প্রসঙ্গে। পরপর ছবি করছে ব্রত, এর পরেই ‘রসগোল্লা’, তার পরে ‘কণ্ঠ।’ কিন্তু সিনেমা, শুটিংয়ে তার আগ্রহ নেই খুব একটা। ইচ্ছে বিজ্ঞানী হওয়ার। মঙ্গল, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো... এই সব গ্রহ সম্পর্কেই জানতে চায় সে। অন্য দিকে তিয়াসারও বড় হয়ে গায়িকা হওয়ার ইচ্ছে।

সিনেমা করার ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহ না থাকার মিল দেখে দু’জনেই বেশ খুশি হয়ে গেল। এত ক্ষণ ধরে দু’জনে মাঝেমধ্যেই একে অপরের কান ধরে টানাটানি করছিল। এ বার ঠোকাঠুকি ছেড়ে হেসে হাত মেলাল। কিন্তু এত ঝগড়াঝাঁটি করলেও তাদের বন্ধুত্ব অটুট। মাঝেমধ্যেই তারা হানা দেয় একে অপরের বাড়িতে। তাদের কথায়, ‘হামি’ ছবিতেও তাদের বন্ধুত্বকে কেন্দ্র করেই মূল গল্প এগোয়। কিন্তু ক্রমশ তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে এত কিছু চলে আসে যে, বন্ধুত্ব রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

এর চেয়ে বেশি ছবির গল্প অবিশ্যি তাদের কাছে থেকে আদায় করা গেল না! তিয়াসা ইশারায় বোঝাতে লাগল, তাদের নাকি এ সব বলা বারণ। ব্রত অনেক ক্ষণ ভেবে গম্ভীর গলায় বলল, ‘‘আমি কনট্র্যাক্ট সই করেছি, আমার সব বলা বারণ।’’

‘হামি’র গল্প না বললেও, প্রিয় সিনেমা নিয়ে গল্প জুড়ে দিল দুই খুদে। দু’জনেই সিনেমা দেখতে ভালবাসে। তিয়াসার ভাল লাগে এমন সিনেমা, যাতে কোনও বার্তা রয়েছে। ‘তুমহারি সুলু’ ওর খুব ভাল লেগেছে শুনে মুখ ভেংচাল ব্রত, ‘‘...‘তুমহারি সু্লু’? এটা আবার কোন সিনেমা? আমার তো ভাল লাগে ‘পদ্মাবত’ আর ‘বা-হু-উ-উ-বলী’...’’ মনে হল, তার বোধহয় বড় হয়ে বাহুবলীর মতো হিরো হওয়ার ইচ্ছে। চিৎকার করে চেয়ার থেকে লাফিয়ে নেমে প়ড়ল ব্রত, ‘‘হিরোগুলো সব ছাই লাগে আমার। আমি হব ‘ভ-ল্‌-লা-ল-দে-ব।’’ গম্ভীর গলায় নামটা বলেই কাল্পনিক তরোয়াল হাতে ব্রত যুদ্ধ শুরু করল। অতঃপর আড্ডা শেষ করতেই হল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement