ঋতব্রত।ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক
প্র: এই জেনারেশনের কোন কোন বৈশিষ্ট্য আপনার মধ্যে রয়েছে?
উ: এই জেনারেশন মোবাইল-ইন্টারনেটের সঙ্গে যতটা কানেক্টেড, আমি অতটাও নই। হ্যাং-আউট কালচার আমার মধ্যে নেই। কাজের জন্যই বন্ধুদের সঙ্গে খুব একটা বেড়ানো হয় না। এই প্রজন্ম অল্পেতেই চাপ খায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমারও সেটা হয়। তবে টেনশন নেওয়া বা অল্পেতেই রিঅ্যাক্ট করি না।
প্র: ঋতব্রত কি ‘আমি’কেন্দ্রিক?
উ: ছোটবেলা থেকে থিয়েটারের পরিবেশে বড় হওয়ায় ‘আমি’কেন্দ্রিক হয়ে উঠতে পারিনি। সব সময়ে মনে হয়, আমার কাজ যেন আমার চারপাশের মানুষ, সমাজকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। তবে এখন কলেজে দেখি, সকলেই নিজেরটা আগে ভাবে। মা মাঝে মাঝে বকাবকি করে, সবাইকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নিজের কাজটা কখনও কখনও হয় না। কেসও খেয়ে যাই (হাসি)।
প্র: কেমন কেস?
উ: সকলে তো সমমনস্ক হয় না। আমি উদ্যোগ নিয়ে কোনও কাজ করতে গেলে অনেকেই ভাবে, হয়তো আমার এতে বাড়তি সুবিধে আছে। তাই পরিচিত লোকজন কমে যায়।
প্র: অনস্ক্রিন বাবা (শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়) খুব কড়া। অফস্ক্রিনও কি উনি তাই?
উ: অনস্ক্রিন বাবার সঙ্গে আমার বাবার কোনও মিল নেই। আমার চরিত্রের সঙ্গে ঋতব্রতরও মিল নেই। দু’জনেই অভিনয় করেছি। বাবা অভিনেতা হওয়ার একটা বড় সুবিধে, কোনটা করলে কী হবে, সেটা ছোট থেকেই ভাল করে বোঝানো হয়েছে। বাবা কখনও নিজের চাহিদা-ইচ্ছে আমার উপরে চাপিয়ে দেননি। তাই সেটে শট দিয়ে বেরোলেই টেকনিশিয়নরা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করত, ‘বাবা এখানে এত বকছে! বাড়িতে এ রকম হয় নাকি?’
প্র: ‘জেনারেশন আমি’র বিষয়বস্তু ক্লিশে মনে হয়নি?
উ: আমি বুম্বাকাকুর একটা ছবি দেখেছিলাম ‘চলো পাল্টাই’। সেখানে দ্বন্দ্বটা ছিল প্যাশন আর বাবা-মায়ের চাপের মধ্যে। তবে এই ছবির দুটো দিক আছে। এক দিকে এই জেনারেশনের স্বাধীনতার দাবি, অন্য দিকে বাবা-মা বোঝাতে চাইছে স্বাধীনতার সঙ্গে কী কী সমস্যা আসতে পারে। পেরেন্টিংয়ের সমস্যাও দু’রকমের। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ শৈশবের উপরে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে, সেটাও রয়েছে। আর সাবজেক্টটা ক্লিশে মনে হয়নি কারণ এই সমস্যার সমাধানও রয়েছে ছবিতে। মৈনাকদার (ভৌমিক) চিন্তাভাবনা এতটাই সৎ যে, আমার মনে হয় সব প্রজন্মের এই ছবি দেখা উচিত।
প্র: বাবার সঙ্গে কোনও বিষয়ে জেনারেশন গ্যাপ উপলব্ধি করেছেন?
উ: আমি যদি ‘ফ্রেন্ডস’ খুব এনজয় করি, বাবা হয়তো সেটা করবেন না। এক-এক প্রজন্মের স্কুলিং যেমন। আমার মামাবাড়ি যৌথ পরিবার। এখনও দিদা, মামা-মাসি, দিদি-দাদা, ভাই-বোন সকলে একসঙ্গে বসে আড্ডা দিই। মাসি-মেশোর সঙ্গে আমার লাভ লাইফ নিয়ে আলোচনাও করি। ফলে জেনারেশন গ্যাপ অতটা উপলব্ধি করিনি।
প্র: পড়াশোনার সঙ্গে ছবির কাজের ভারসাম্য বজায় রাখেন কী ভাবে?
উ: খুব চাপের (হাসি)। আমি আর ঋদ্ধি (সেন) খুব ছোট বয়সে এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম। তখন লোকে বলত, ‘ছবি করছিস, তা হলে আর পড়াশোনা হল না’। তবে আমার সুইচ অন ও অফ মোড আছে। যখন পড়ছি, তখন বাকি সব অফ। আবার যখন থিয়েটার-ছবি করছি, পড়াশোনার কথা ভাবি না।
প্র: ফ্যান ফলোয়িং, পরিচিতি মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায় না?
উ: ‘নায়ক’-এর একটা সংলাপ আমার প্রিয়, ‘তিনটে ছবি ফ্লপ হলে এই লোকগুলোই ভুলে যাবে।’ ওটা আমার সব সময়ে মনে থাকে। দিনের শেষে কাজটাই লোকে মনে রাখবে। তাই বাকি কিছু আমাকে ডিসট্র্যাক্ট করে না।
প্র: ঋদ্ধি কি বড় দাদা না প্রতিদ্বন্দ্বী?
উ: কোনওটাই নয়। ঋদ্ধি ভাল বন্ধু। হাফপ্যান্ট পরার বয়স থেকে ঋদ্ধি আর আমি পরস্পরকে চিনি। প্রথম মোবাইল ফোন থেকে আইফোন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বেরও বয়স বেড়েছে। আমার ব্রেকআপ হলে ও যেমন বুঝিয়েছে, আমিও ওর প্রথম প্রেমের দিনগুলোর কথা জানি। তাই কখনও ওর সঙ্গে আমার প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব হয় না। আগের মতো এখন দেখা হয় না। তবে দেখা হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিই। আর শেষ ছ’মাস ধরে দু’জনে একসঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছি।
প্র: প্রেমহীন জীবন কেমন চলছে?
উ: চলছে। কাজে ব্যস্ত।
প্র: দলের মধ্যে বিজোড় হয়ে যাবেন তো...
উ: (জোরে হাসি) আমাদের দলে কখনও না কখনও কেউ বিজোড় হয়েছে। এখন আমার দশা চলছে। জানি না, কবে কাটবে। তবে আমার মুভ অন করতে সময় লাগে।
প্র: পরের ছবি কী কী করছেন?
উ: অপর্ণা সেনের ‘ঘরে বাইরে আজ’-এ আমার অংশের শুট হয়ে গিয়েছে। আর সৌকর্য ঘোষালের ‘রক্ত রহস্য।’