‘মাসান’ ছবির একটি দৃশ্য
প্রথম ছবিতেই জাতীয় পুরস্কার। কিন্তু তাতে মাথা ঘুরে যাওয়া তো দূর, বরং পারলে পালিয়ে বাঁচেন। হয়তো শিল্পী মানুষেরা এ রকমই হন। তিনি নীরজ ঘেওয়ান। ২০১৫ সালে ‘মাসান’ দিয়ে যাত্রা শুরু নীরজের। তবে সূচনা ঠিক নয়। এর আগে অনুরাগ কাশ্যপের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর’-এ তিনি ছিলেন সহকারী পরিচালক। কাজ করেন ‘আগলি’তেও। কথা ছিল ‘বম্বে ভেলভেট’-এও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার। কিন্তু নিজের গল্প বলার তাড়না নীরজকে সরিয়ে আনে। তৈরি করেন ‘মাসান’।
কেরিয়ার শুরু করেছিলেন কর্পোরেট দুনিয়া থেকে। কিন্তু সিনেমার পোকা যাকে কুরে কুরে খায়, সে কি আর বেশি দিন দূরে সরে থাকতে পারে? বলিউডে জাঁকিয়ে বসতে সময় লেগেছে নীরজের। কিন্তু আক্ষেপ নেই। ‘‘কারণ আগে শুরু করলে হয়তো ম্যাচিয়োরিটি আসত না। এখন যে ভাবে, যত তাড়াতাড়ি সিনেমার খুঁটিনাটিগুলো ধরতে পারি, রপ্ত করতে পারি, সেটা আগে করলে হয়তো এখনকার মতো হতো না,’’ বলছেন নীরজ।
স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির প্রতি অবিচ্ছেদ্য টান নীরজের। পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ‘মাসান’-এর আগে বানিয়েছেন ‘শোর’, ‘দ্য এপিফ্যানি’র মতো শর্ট ফিল্ম। বললেন, ‘‘প্রথমত সময় কম। দ্বিতীয়ত গল্পের থিম, অভিনেতা, চিত্রনাট্য... সমস্ত কিছুই নিজের স্বাধীনতা অনুযায়ী বাছা যায়। এ ছাড়া ওই অল্প সময়ে স্পষ্ট করে নিজের মনের কথাটা বলাটাই বড় ক্রিয়েটিভ চ্যালেঞ্জ।’’ এখন তো চার পাশে অনেক শর্ট ফিল্মই তৈরি হচ্ছে। কিছু কি বিবর্তন আসছে? নীরজ মনে করেন, আগে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি অনেকটাই পিয়োর ছিল। ‘‘এখন অনেক ধরনের ছবি হয়তো হচ্ছে। ডিজিটাল সর্বত্র। ক্যামেরাও সহজলভ্য। সকলেরই কিছু না কিছু গল্প বলার আছে। তাতে ছবি তৈরির ক্রাফ্টটার প্রতি সিরিয়াসনেস কোথাও কমে যাচ্ছে,’’ হাসলেন নীরজ।
প্রথম ছবিতেই এতটা সাফল্য। শাবানা আজমি চেয়েছেন নীরজের সঙ্গে কাজ করতে। চাপ তৈরি হয় না? হেসে ফেললেন পরিচালক। বললেন, ‘‘অবশ্যই প্রেশার থাকে। কিন্তু আমি কোনও দিনই ‘মাসান’-এর চাপে নুইয়ে পড়িনি। আমার জন্য আমার ভিতরের চাপটাই বেশি। আমি তো সাফল্য থেকে রীতিমতো পালিয়ে বেড়াই। আর আমাকে এমন ছবি তৈরি করতে হবে, যেটা আমাকেও প্রভাবিত করবে। সেটার চাপ বড়।’’ আর শিল্পী সত্তার ভিতরকার আলোড়ন? সামলান কী করে? ‘‘সেই আলোড়ন তো পুরোটা নিংড়ে নেয়। অ্যাড, শর্ট ফিল্ম বানাই। আবার ফিরে আসি। আর এ ভাবেই কমব্যাট করি,’’ বলছেন নীরজ।
নীরজ। ছবি: সুদীপ্ত চন্দ
নিজের কোনও পছন্দের বিষয় রয়েছে, যা নিয়ে ছবি বানাতে চান? ‘‘কিছু দিন আগে রূপান্তরকামীদের নিয়ে একটা অ্যাড বানিয়েছি। এখন তো আর্বান লাইফ নিয়েই বেশি ছবি হয়। অথচ কৃষকরা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ। সিনেমায় তাঁরা কই? তবে টপিক যা-ই হোক, সেটা যেন ভিতর থেকে আসে,’’ দৃপ্ত কণ্ঠ নির্দেশকের। দীপিকা হোক বা আলিয়া... বলিউডের বেশির ভাগ অভিনেত্রীই এখন দারুণ কাজ করছেন বলে মনে করেন নীরজ। পরবর্তী ছবির চিত্রনাট্য তৈরি? ‘‘চিত্রনাট্যই তো ছবির নায়ক। বিশ্বাস করুন, আমি হন্যে হয়ে গল্প খুঁজছি,’’ শিল্পীসুলভ ব্যাকুলতা নীরজের গলায়।