প্র: ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই আপনি তারকা। কী রকম অনুভূতি?
উ: নিজেকে তারকা ভাবি না। আগামী দিনেও ভাবব না। আমি ভাল অভিনেত্রী হতে চাই। গত এক বছরে আমার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই পুরো সময়টা মনপ্রাণ উজাড় করে আমার ছবিকে দিয়েছি। অভিনয় কতটা করতে পেরেছি, সেটা দর্শক বলবেন ২০ তারিখের পর। তবে যা ভালবাসা পেয়েছি, তাতে আমি আর ঈশান (খট্টর) অভিভূত।
প্র: ‘সাইরাট’-এর মতো হিট মরাঠি ছবির রিমেকে কাজ করতে গিয়ে শ্রীদেবী আর বনি কপূরের মেয়ে হিসেবে কতটা চাপ ছিল?
উ: ‘সাইরাট’ আইকনিক ছবি। প্রথম বার যখন দেখেছিলাম, আমার উপর গভীর প্রভাব পড়েছিল ছবিটার। কর্ণ জোহর মা, বাবা আর আমার জন্য স্পেশ্যাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন। ছবিটা শেষ হওয়ার পর আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম, কারণ তখনও ছবিটার প্রভাব ছিল আমার উপর। মা আর বাবা তো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’জনেই খুব খুশি ছিলেন যে, আমি এই ছবিটা করব। ছবির শুটিংয়ের সময় কোনও চাপ আলাদা ভাবে আমি অনুভব করিনি। জানতাম প্রথম ছবির সব অভিজ্ঞতা, অনুভবই আজীবন আমার কাছে গচ্ছিত থাকবে।
প্র: কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে আসা নিয়ে তো আপনার মায়ের অমত ছিল?
উ: অমত ছিল না। কিন্তু মা সব সময়ে বলতেন যে, এত বছর ধরে উনি অক্লান্ত কাজ করেছেন যাতে আমাদের ভাল রাখতে পারেন। আমাকে বলতেন, অভিনেত্রী হওয়া মানে কিন্তু ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কয়েকটা সংলাপ বলা নয়। এর জন্য অনেক পরিশ্রম, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। সে সবের জন্য আমি রাজি কি? তবে মা জানতেন যে, আমার সিদ্ধান্ত বদলাবে না। মা-বাবা আমাদের খুব সুখের জীবন দিয়েছেন। কিন্তু আমারও একটা সাধ ছিল, নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করার। ছোটবেলায় আমি খুব দুষ্টুমি করতাম। আমার মধ্যে অভিনেত্রী হওয়ার একটা লক্ষণ এমনিই ছিল। স্কুলে আমার অ্যাটেন্ড্যান্স কম থাকত। মা-বাবার সঙ্গে খুব ঘুরতে যেতাম। লস অ্যাঞ্জেলেসে এক বার ফিল্ম অ্যাক্টিংয়ের কোর্স করতে গিয়েছিলাম, তখনই ঠিক করে ফেলেছিলাম যে, অভিনয়ই আমার কেরিয়ার হবে।
প্র: মা-বাবার থেকে কী রকম গাইডেন্স পেয়েছেন?
উ: আমার বাড়ি ভর্তি ইন্ডাস্ট্রিরই লোক। তাই অনেক উপদেশ পাই (হাসি)। মা একটাই কথা বলতেন, ‘প্রথমে এক জন সৎ মানুষ হও। তার পর ভাল অভিনেত্রী হবে।’ বাবা ছবি নির্বাচন, খুঁটিনাটি অনেক বিষয়ে আমাকে টিপস দেন।
প্র: শ্রীদেবীর করা সবচেয়ে প্রিয় ছবি কোনটা আপনার?
উ: মা ৩৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। আমি মাত্র কয়েকটা দেখেছি। ‘সদমা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’, ‘মম’— আমার অল টাইম ফেভারিট হল ‘সদমা’। খুব কষ্ট হয়েছিল লাস্ট সিনে মাকে ওই ভাবে দেখে। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ আর ‘মম’-এর সেটে প্রায়ই যেতাম। মাকে সামনে থেকে অ্যাক্টিং করতে দেখার অভিজ্ঞতাই আলাদা। আমি মনে করি, এক জন অভিনেতা সেটে গিয়ে যতটা শিখতে পারে, সেটা আর কোথাও সম্ভব নয়।
প্র: কলকাতায় শুটিং করে কেমন লাগল?
উ: ভীষণ ভাল। ছ’দিন আমরা কলকাতায় ছিলাম। শহরটায় আমি বিভিন্ন ধরনের চরিত্র দেখতে পেয়েছি। খুব সুন্দর আর্কিটেকচার, চোখ ফেরানো যায় না। রোজ ব্রেকফাস্টে মিষ্টি দই খেতাম, সন্দেশও খেয়েছি। ইউনিটের বাকি সকলে পান খেত খুব! কলকাতার পান বেশ বিখ্যাত। যদিও আমি খাইনি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, হাওড়া ব্রিজে আমরা শুটিং করেছি। ওখান থেকে ফিরে আমি সত্যজিৎ রায়ের ‘চারুলতা’ দেখেছি, অপূর্ব ছবি! প্রত্যেকটা দৃশ্য কবিতার মতো। ছবিটা দেখতে দেখতে আমি ওই দুনিয়ার মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছে আছে, সত্যজিৎ রায়ের সব ছবি দেখার।