অভিনেত্রী হিসেবে আমি ওভাররেটেড,অকপট স্বীকারোক্তি চূর্ণীর

সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই দেওয়ালে সারিসারি ছবির পোস্টার— ‘বাস্তুশাপ’ থেকে ‘দ্য গডফাদার’... বাদ নেই কিছুই। ঘরে ঢুকতেই মিলল সেই রুচিরই আভাস। ব্যস্ততার মাঝেও আড্ডা দিতে বসলেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই দেওয়ালে সারিসারি ছবির পোস্টার— ‘বাস্তুশাপ’ থেকে ‘দ্য গডফাদার’... বাদ নেই কিছুই। ঘরে ঢুকতেই মিলল সেই রুচিরই আভাস। ব্যস্ততার মাঝেও আড্ডা দিতে বসলেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

রূম্পা দাস

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৮ ০০:২৬
Share:

চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়

প্র: ‘নির্বাসিত’র পর ‘তারিখ’-এর মতো মেনস্ট্রিম ছবি বাছলেন কেন?
উ: মেনস্ট্রিম কি না, সেটা দর্শক বলবেন। তবে ‘তারিখ’ মুক্তচিন্তার কথা বলে। সোশ্যাল মিডিয়াকে মানিয়ে চলতে পারা ও না পারাকে কেন্দ্র করে তিনটি চরিত্রের বন্ধুত্ব ও আদর্শে টিকে থাকার লড়াইয়ের গল্প বলে এই ছবি। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দিই, মতাদর্শ আলোচনা করি। কাশ্মীরের বাচ্চাটিকে নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের জায়গা তৈরি করতে পারি। ব্লগার বা মুক্তচিন্তকের পরিণতি তো আমরা অনেকেই জানি। সবটাই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।

Advertisement

প্র: ছেলে অভিনেতা হোক, এটাই চেয়েছিলেন?
উ: উজান অভিনয় করছে ঠিকই। তবে অভিনেতাই হবে কি না, জানি না। পড়াশোনাও করছে। আমার চাওয়া-না চাওয়ার উপর নির্ভর করে না। তবে ওকে বলেছি, অভিনয় ফ্রিলান্সিং কাজ। তার জন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিভা খোঁজার সুযোগ যেন ও পায়, সেটা খেয়াল রেখেছি। তবে পড়াশোনাটা প্রায়োরিটি। অ্যাকাডেমিকসে যাওয়ার কথা ভাবলেও, ওর ভাল কেরিয়ারই হবে। আমি চেয়েছি, ওর জীবনে সেই সমতা যেন থাকে, যাতে ও নিজের সিদ্ধান্ত ঠিকঠাক নিতে পারে।

প্র: অভিনয়ের টিপস দেননি?
উ: আমার মনে হয়, প্রভাবিত না হয়েই নিজের কাজটা ওর করা উচিত। একটা চরিত্রকে বিশ্লেষণ করার জায়গাগুলো সকলেরই আলাদা হয়। এটা অন্য প্রোডাকশন বলে জানতেও চাইনি। কোনও দিন এসে হয়তো অভিজ্ঞতার কথা বলল। তবে বলেছি, অতিরিক্ত কোরো না। প্রত্যেকটা দৃশ্য হয়তো তোমার জন্য নয়। সব সিনে ফাটিয়ে দেব, এই প্রবণতা ভাল নয়।

Advertisement

প্র: ‘দৃষ্টিকোণ’-এ আপনার চরিত্রটি লড়াইয়ের কথা বলে। এ ধরনের চরিত্র বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত কি সচেতন ভাবে নেন?
উ: আমি আসলে এ ধরনের চরিত্রই পাই। আলাদা করে যে বাছতে হয়, এমনটা নয়। তবে টানাপড়েন আছে, এমন চরিত্র করতেই ভালবাসি।

প্র: এসভিএফ-এর প্রযোজনায় ‘নির্বাসিত’ জাতীয় পুরস্কার এনেছিল। সেখানে ‘তারিখ’ প্রযোজনার ক্ষেত্রেই তাঁরা পিছিয়ে গেলেন!
উ: যে সময়ে শ্রীকান্তের (মোহতা) সঙ্গে ‘তারিখ’-এর কথা হয়েছে, তখন ওরা এ ধরনের ছবি করতে চায়নি। ওর মনে হয়েছিল, ভাবনাটা অন্য রকম হলে ভাল হতো। তবে এক বারও বলেনি, ভাল লাগছে না। সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ‘তারিখ’-এর মতো ছবি ওরা প্রযোজনা করতে চায়নি। তবে আমাদের সম্পর্কের জায়গায় অসুবিধে নেই। ‘তারিখ’-এর ঘোষণার দিনে শ্রীকান্ত কিন্তু এসেছিল।

প্র: ইন্ডাস্ট্রি তো বদলাচ্ছে...
উ: তখন এত ছড়িয়ে কাজ হতো না। টিভির কাজ করতে বেশি ভাল লাগত। কৌশিক ‘আরেকটি প্রেমের গল্প’ ছবি করার অনেক আগেই টেলিফিল্মে ‘উষ্ণতার জন্য’ করে ফেলেছে। টেলিভিশনে তখন সেন্সরশিপ ছিল না। এখন বোধহয় টিভিতে সব কিছু গৃহীত হয় না। আর ছবির ক্ষেত্রে কোনও বিষয়কেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না!

প্র: পরিচালক না অভিনেতা কৌশিক— কাকে এগিয়ে রাখবেন?
উ: দুটোই সমান ভাবে রাখব। ‘নগরকীর্তন’ যেমন ওর অন্যতম ভাল কাজ। আর ওর অভিনয় দারুণ। চেহারার কারণে কিছু সীমাবদ্ধতা হয়তো আছে। তবে ও পরিচালনা, অভিনয়ে সমান পারদর্শী।

প্র: এই প্রশ্নটাই যদি আপনার জন্য রাখা হয়?
উ: অভিনেত্রী হিসেবে আমি ওভাররেটেড। পরিচালনার জায়গায় এক পয়েন্ট হলেও এগিয়ে।

প্র: ব্যক্তিগত জীবনে আপনি ঠিক কেমন?
উ: বোরিং তো বটেই। একটু পারফেকশনিস্ট গোছের। কাছের কেউ আদর্শ না মানলে, প্রমিস ভাঙলে দুঃখ হয়। আর আমি বিচার করি না। বরং কাজের কার্যকারণ খোঁজার চেষ্টা করি। তাই বিশ্বাস করি, অপরাধীদের জেলখানায় না পাঠিয়ে থেরাপি করানো দরকার। কিছু ক্ষেত্রে ফেরা যায় না অবশ্যই। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে থেরাপি জরুরি। আর পাহাড়ে বড় হয়ে ওঠার জন্য কি না জানি না, আমি খুব শান্ত প্রকৃতির। নিজেকে জাহির করতে চাই না। সহ-অভিনেত্রী ভাল করলে খুব আনন্দ হয়। ভিতর থেকে ভাল থাকায় বিশ্বাসী আমি। আর ফোন দেখার অভ্যেস আমার খুব কম। এমন নয় যে, সব সময়ে ব্যস্ত থাকি। হয়তো ফোন একপ্রান্তে, আমি আর এক প্রান্তে বই হাতে।

আড্ডা শেষে দরজায় এগিয়ে দিতে এলেন চূর্ণী। মনে করিয়ে দিলেন, ‘তারিখ’ কিন্তু এই বিশেষ সময়ে দাঁড়িয়ে কমিউনিজমের মৃত্যুর কথাও বলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement