অ্যাড ফিল্মস দিয়েই শুরুটা করেছিলেন ‘বধাই হো’ ছবির প্রযোজক আলেয়া সেন।
ছ’সপ্তাহে পা দিতে চলল। এখনও এত মানুষ রোজ ‘বধাই হো’ দেখতে যাচ্ছেন। বধাই হো!
হা হা হা হা! এই দুটো শব্দ আমি কয়েক মাস ধরে খুব শুনছি বুঝলেন। ভেবেছিলাম, ছবিটা রিলিজ হয়ে গেলে তো আর কেউ ‘বধাই হো’ বলবে না। ও বাবা! রিলিজের পর তো দেখছি আর এক বিড়ম্বনা। আরও বেশি করে লোকে ‘বধাই হো’ বলছেন। তবে রিলিজের পর শুনতে আরও ভাল লাগছে। অনেক ধন্যবাদ।
তা হলে কি বলছেন, ২৯ কোটির ‘বধাই হো’ ৩০০ কোটির ‘ঠগস অব হিন্দোস্তান’-কে সহজেই টেক্কা দিয়ে দেবে তা-ও বুঝতে পারেননি?
একদমই না। আন্দাজ করেছিলাম ঠিকই। আজ নয়। বহু বছর আগে ‘বধাই হো’-র গল্পটা নিয়ে একটা বিজ্ঞাপন করার কথা ছিল। কিন্তু ওই ওয়ান লাইনারটা শোনার পরেই অমিত (ছবির পরিচালক অমিত শর্মা) বলেছিল, এ তো দারুণ আইডিয়া। এই নিয়ে তো একটা ফিচার ফিল্ম করা যেতে পারে। সে দিনই মনে হয়েছিল এ ছবি চলবেও। শুধু ঠগস অব হিন্দোস্তান কেন, ‘পদ্মাবত’-এর মতো সফল ছবি পঞ্চম সপ্তাহে ৭.৫৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছিল। আর পাঁচ সপ্তাহে ‘বধাই হো’-র রোজগার ৮ কোটি। তা হলে তো অনেককেই টেক্কা দেওয়া হল।
সত্যিই কি ‘বধাই হো’-তে গজরাজ রাওয়ের চরিত্রটি ইরফান খান ফিরিয়ে দিয়েছিলেন?
বাজে কথা। ‘বধাই হো’-তে নীনা গুপ্ত-র চরিত্রটির জন্য শুধুমাত্র আমরা তব্বুর সঙ্গে কথাও বলেছিলাম। তব্বুরও স্ক্রিপ্টটা খুব পছন্দ হয়েছিল। তবে অভিনয় করতে চাননি উনি। তব্বুই আমাদেরকে নীনা গুপ্ত-র কথা বলেছিলেন। আর যখন থেকে আমরা প্রদীপ সরকারকে অ্যাসিস্ট করছি, তখন থেকে গজরাজ রাওকে চিনি। ওই চরিত্রটার জন্য গজরাজ ছাড়া আর কারও কথা মাথায় আসেনি।
কিন্তু আপনার পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘দিল জাঙ্গলি’ তো সে ভাবে চলল না!
গল্পটাই আসল, বুঝলেন। আর তা মানুষের সঙ্গে কানেক্টও করতে হবে। ‘দিল জাঙ্গলি’ হয়তো সে ভাবে কানেক্ট করতে পারেনি। তা ছাড়া কোন সময়ে ছবি রিলিজ করছে, সেটাও অনেকটা নির্ভর করে। ‘দিল জাঙ্গলি’ এক্কেবারে যাকে বলে পরীক্ষার সময়ে মুক্তি পেয়েছিল। কম বয়সীদের দেখতে যাওয়ার সিনেমা। অথচ তাদেরই সে সময়ে পরীক্ষা।
পরের প্রশ্ন মাঝপথে থামিয়ে দিয়েই বললেন, আর ‘বধাই হো’ তো আমার বরেরই সিনেমা। আমরা তো বাড়িতে ঘুম থেকে উঠে এক বার আর ঘুমোনোর আগে এক বার একে অন্যকে ‘বধাই হো’ বলে ঘুমিয়ে পড়ি।
‘বধাই হো’-র শুটিংয়ে মনিটর দেখতে ব্যস্ত প্রযোজক আলেয়া সেন।
অমিতেরও প্রথম ছবি ‘তেবর’ ফ্লপ হয়েছিল। আপনারও প্রথম ছবি ফ্লপ। কি মনে হয়, আপনার পরের ছবিটি হিট হলেই কি অঙ্কটা মিলে যাবে?
(একটু হেসেই) অমিতকে আমি বহু বছর ধরে চিনি। আমার বাবাও বিজ্ঞাপনী ছবি তৈরি করতেন। অমিত আমার বাবার অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল, আমিও তখন বাবাকে অ্যাসিস্ট করতাম। ওখানেই আলাপ। পরে আমি আর অমিত দু’জনেই প্রদীপদাকে (প্রদীপ সরকার) অ্যাসিস্ট করতে শুরু করি। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। ওর সঙ্গে আমার আবার কিসের কম্পিটিশন?
আয়ুষ্মানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
আয়ুষ্মান এক্কেবারে মাটির মানুষ। রোল দেখে হ্যাঁ করার পাত্র ও নয়। যদি কোনও স্ক্রিপ্টে ছোট রোলও থাকে ওঁর জন্য, সেটাকেও নিজের ভঙ্গিতে ফুটিয়ে তোলার পাত্র সে। যে ধরনের স্ক্রিপ্ট দিনের পর দিন ওঁর সামনে আসেছ, আর সেগুলো যে ভাবে ও অভিনয় করে দেখাচ্ছে, তাতে পরিষ্কার সামনের দিনে বহু দূর এগিয়ে যাবে আয়ুস্মান খুরানা।
আরও পড়ুন: ক্ষমা চাইতে হবে শাহরুখকে, হুমকি কলিঙ্গ সেনার
বিগত এই কয়েক বছরে প্রদীপ সরকার, সুজিত সরকার থেকে শুরু করে গৌরী শিন্ডে, আশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি, অভিনয় দেও এবং আরও অনেক পরিচালক বিজ্ঞাপনী ছবি থেকে ফিচার ফিল্মে চলে এসেছেন, তাতে কি বলিউডের ছবির ধারাতে কি আদৌ পরিবর্তন কিছু এসেছে?
অবশ্যই হচ্ছে। না হলে ‘বধাই হো’-র মতো একটা ছবি কী করে এত টাকার ব্যবসা করে? একটু ভাল করে লক্ষ্য করে দেখবেন, এঁরা বলিউডে আসার পর সত্যিই বলিউডে একটা নিউ ওয়েভ এসেছে।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)
আপনি তো শাহরুখ খানকে বিজ্ঞাপনে পরিচালনা করেছেন। ওঁকে নিয়ে সিনেমা কবে করছেন?
আমি এক্কেবারে ডাইহার্ড শাহরুখ ফ্যান। তার সঙ্গে আবার আমার প্রিয় জঁর রোম্যান্টিক কমেডি। খুব ইচ্ছে আছে ওঁর সঙ্গে সিনেমা করার। এখনও মাথায় কিছু নেই। এলে নিশ্চয়ই করব।
স্টুডিও সিস্টেমের মধ্যে কাজ করতে গেলে কি কম্প্রোমাইজ করতে হয়?
হ্যাঁ, তা তো একটু আধটু করতেই হয়। তবে আমার মনে হয়, বেশি কম্প্রোমাইজ করে ক্রিয়েটিভ সত্ত্বাটা নষ্ট করার থেকে সিনেমাটা না করা ভাল।
আরও পড়ুন: ‘গুলু মামী’! এই নামে কে ডাকে ঐশ্বর্যাকে?
আগের থেকে তো হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়ার লোক কমেছে। কি মনে হয়, এর জন্য কি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো দায়ী?
কিছুটা তো দায়ী বটেই। আজ কত কম টাকায় আমরা মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। কত কিছু দেখতে পাই ডিজিটাল মিডিয়ামগুলোতে। আমার ড্রাইভার অবধি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত অরিজিনাল সিরিজ দেখে। এমনকি, আমি নিজে ভিডিয়ো দেখতে, সিনেমা দেখতে এত ভালবাসি, ফোনেই অনেক কিছু দেখে ফেলি। তবে কন্টেন্ট ভাল হলে মানুষ হলে ছুটবেনই। ‘বধাই হো’-ই তা প্রমাণ করে দিল।
মধ্যমণি আলেয়া। ডান দিকে স্বামী অমিত শর্মা আর বাঁ দিকে বিজনেস পার্টনার হেমন্ত ভান্ডারি। তিন জনেই ‘বধাই হো’-র প্রযোজক।
আচ্ছা, সেন্সর কি আর একটু আলগা হলে মানুষ আবার বেশি করে হলমুখী হবেন?
হতে পারে। অনেক কন্টেন্টই আছে যেগুলো সিনেমা হলে রিলিজ করতে গেলেই সেন্সরের কাঁচির মুখোমুখি হতে হবে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তা হবে না। তবে আমারও বাড়িতে একটা বাচ্চা আছে। আমিও চাইব না, এমন কিছু দৃশ্য যেটা তার জন্য প্রকৃতপক্ষেই ক্ষতিকারক, সেটা সে বন্ধুদের সঙ্গে হলে গিয়েই দেখুক, বা আমরাই যদি তার সামনে দেখাতে একটু ইতস্তত বোধ করি।
যে ভাবে যৌন হেনস্থা নিয়ে এক এক করে বলিউডের অভিনেত্রী থেকে শুরু করে ক্রু মেম্বাররা মুখ খুলছেন, কী বলবেন তা নিয়ে? আর #মিটু প্রতিবাদ কি আদৌ কোনও দিশা দেখাচ্ছে?
দিশা দেখাচ্ছে কি না বলতে পারব না। কিন্তু খুবই দুঃখজনক। যাঁদের সঙ্গে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তাঁরা যে সাহস করে মুখ খুলছেন সেটাই অনেক। তবে অনেকেই #মিটুকে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন। ঈশ্বরের অনেক কৃপা যে আমার মাথার উপর প্রদীপ সরকার ছিলেন। আমাদেরকে সব সময় আগলে রাখতেন। ঠিক এ ভাবেই পরে অমিত আমাকে আগলে রাখত। #মিটুর থাবা আমার উপর আসতে দেননি ওঁরা কখনও।
আপনার কি মনে হয় এই কারণেই কি দেশে মহিলা পরিচালকদের কমতি?
না না, এটা কারণ হতে পারে না। শুধু বলিউড নয়, সব জায়গাতেই ‘মহিলা’ পরিচালকের একটু ক্রাইসিস। মানে পুরুষ পরিচালক কথাটা কি খুব একটা ব্যবহার করি আমরা? ‘দিল জাঙ্গলি’-র শুটিং করতে আমি যখন লন্ডনে গিয়েছিলাম, ওখানকার লোকজন আমাকে অ্যাকশন, কাট বলতে শুনে এলিয়েন ভাবছিলেন বোধ হয়। কেমন যেন ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছিলেন সবাই। কিন্তু কোথায়? বলিউডে তো এখন অনেক ‘মহিলা’ পরিচালক। গৌরী শিন্ডে, নন্দিতা দাস, অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি, জোয়া আখতার, এমনকি মহিলা পরিচালক রিমা দাসের ছবি অস্কারেও গেল। তা হলে অনেক মহিলা পরিচালক তো দেশে এখন।
‘বধাই হো’-র সেটে গজরাজ রাও এবং নীনা গুপ্ত-র সঙ্গে পরিচালক অমিত শর্মা।
আর আপনার বং কানেকশন?
আমি দিল্লির বাঙালি। কলকাতায় আমাদের পরিবারের অনেকেই থাকেন। কলকাতা আমার প্রিয় জায়গা। বহু বিজ্ঞাপন আমি ওখানে শুট করেছি। আর আমার বর অমিত শর্মা পঞ্জাবি হলে কী হবে? ও বাংলাও বলতে পারে। আবার ঝিঙে আলু পোস্তও খেতে ভালবাসে।
হাতে আর কী কী প্রজেক্ট আছে?
একটা অরিজিনাল সিরিজ করছি। আর একটা ফিচার ফিল্ম। তবে সব কিছু ফাইনাল না হওয়া অবধি এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে পারব না।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।