অনুপম।
লকডাউনের সময়ে বই লিখেছিেলন অনুপম খের। সেই বইয়ের প্রকাশ উপলক্ষে কলকাতায় অভিনেতা
প্র: আপনার বইয়ের নাম ‘ইয়োর বেস্ট ডে ইজ় টুডে’, যা করোনা কালে লিখেছেন। বইয়ের নাম আর বাস্তবের তো মিল নেই!
উ: আমি বিষয়টা অন্য ভাবে দেখি। ছোটবেলায় মা আমাকে আর ভাইকে স্কুলে দিয়ে আসার সময়ে কাশ্মীরি ভাষায় বলতেন, ‘ইয়োর বেস্ট ডে ইজ় টুডে’। এটা শুনে আমি আর ভাই খুব খুশি হতাম। স্কুলে পরীক্ষা থাকুক, সেই পরীক্ষায় ফেল করি, খেলার মাঠে গোল খাই... কিচ্ছু এসে যায় না। কারণ এটাই আমাদের সেরা দিন। পরিস্থিতি যেমনই হোক, খুশি থাকাটাই আসল। কোনও অবস্থাতেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। আমি তো আগে এপিডেমিক জানতাম, প্যানডেমিক প্রথম শুনলাম। প্রত্যক্ষও করলাম।
প্র: লকডাউন কি বই লিখেই কাটল?
উ: আসলে আমি ঠিক লিখি না, কথা রেকর্ড করি। অভিনেতা তো, কথা বলতে ভালবাসি। পরে সেটা ট্রান্সক্রিপ্ট করি। তা ছাড়া আমি ভাবি হিন্দিতে, তার পর মনে মনে ইংরেজিতে ট্রান্সলেট করি। ছোটবেলায় খুব ভাল স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি।
প্র: সে সব কথা তো আপনার বইয়েও উঠে এসেছে।
উ: হ্যাঁ। ছোটবেলাটাই তো সেরা সময়। অনেকে ভাবে, আমার গরিব থাকার সময়টা বিক্রি করি, তা নয়। আমার পরিবার, কাছের মানুষ, কেমন ছিলাম— সে সব নিয়ে কথা বলতে ভাল লাগে, গর্ববোধ করি।
প্র: ছবিতে আপনাকে কম দেখা যাচ্ছে। কোনও বিশেষ কারণ?
উ: অনেক কিছু নিয়েই ব্যস্ত। আমার ঠাকুরদা বলতেন, ব্যস্ত মানুষ সব কিছুর জন্য সময় বার করে নেয়। মার্চ মাসে নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে ঘরবন্দি হয়ে গেলাম। তার পর ধীরে ধীরে কাজের মধ্যে ফিরলাম। অ্যাক্টিং স্কুলের, ফাউন্ডেশনের কাজ ছিল। প্রচুর স্ক্রিপ্ট পড়লাম।
অভিনয়ও করেছি। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘দ্য লাস্ট শো’— দুটোতেই আমি অন্যতম প্রযোজকও।
প্র: সরকারি ভাবে ১০০ শতাংশ অকুপেন্সির পরেও বড় ছবি যেমন মুক্তি পাচ্ছে না, দর্শকও হলে যাচ্ছেন না। তার উপরে ওটিটি-র এই দাপট কি সিঙ্গল স্ক্রিনকে আরও কোণঠাসা করে দিচ্ছে?
উ: দর্শকের সিনেমা হলে না যাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। কিন্তু আমাদের অপেক্ষা করতে হবে পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার জন্য। হয়তো আরও এক বছর লেগে যাবে সব কিছু আগের মতো হতে। ওটিটি যতই জনপ্রিয় হোক, সিনেমা হলকে রিপ্লেস করতে পারবে না। আমাদের কাছে সিনেমা হলে যাওয়া একটা অনুষ্ঠান। পিকনিকের মতো। আপনাদের এখানে কী অবস্থা?
প্র: দর্শক খুব কম আসছেন সিনেমা হলে।
উ: এটা ধীরে ধীরে ঠিক হবে। কলকাতার মানুষ সংস্কৃতি প্রেমী। আমি এখানে সিনেমা করেছি। নিজের থিয়েটার নিয়ে এসেছি। অসম্ভব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। ভাল হলে কলকাতার দর্শক মাথায় তুলে নাচেন, খারাপ হলে জাস্ট ছুড়ে ফেলে দেন।
প্র: নেপোটিজ়ম, ইনসাইডার-আউটসাইডার বিতর্কে বলিউড জেরবার। এটা কি ইন্ডাস্ট্রির উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে?
উ: এগুলো চলতেই থাকবে। সকলেই নিজের ছেলেমেয়েকে প্রোমোট করতে চায়। এতে দোষের কিছু নেই। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি লাইমলাইটে থাকে বলে এত কথা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সব পেশাতেই আছে। তবে প্রোমোট করার লিমিট আছে। সেই ছেলেটি বা মেয়েটির মধ্যে যদি প্রতিভা না থাকে, তা হলে দর্শক তাকে বাতিল করে দেবেন।
প্র: আপনি বইয়ে সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন। আপনার কাছের বন্ধু ঋষি কপূর মারা গেলেন। এই শোকগুলো কাটিয়ে ওঠা কতটা কঠিন ছিল?
উ: ঋষি খুব কাছের মানুষ ছিল। ইরফান (খান) দুম করে চলে গেল! আর সুশান্তের মৃত্যু তো বড় ধাক্কা। ধোনির বায়োপিকে ওর বাবার চরিত্রে কাজ করেছিলাম আমি। মনে হয়, কী এমন হল যে ছেলেটা হাল ছেড়ে দিল! মৃত্যু বড় কঠিন বাস্তব। সংবাদমাধ্যমে করোনায় মৃত্যুর খবর পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে, মৃত্যু যেন স্রেফ একটা সংখ্যা হয়ে গিয়েছে আমাদের কাছে।
প্র: সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের রাজনৈতিক মতামত তুলে ধরেন। এর জন্য ট্রোলডও হন...
উ: যেটা ঠিক মনে করি সেটাই করি। যে জীবনটা যাপন করি, সেটাই তো তুলে ধরব। ডিপ্লোম্যাটিক হই না। সমস্যা হয় তাদের নিয়ে, যাদের মুখে হাসি আছে কিন্তু মনে কী ভাবছে সেটা প্রকাশ করে না (হাসি)! আর ট্রোলিং ইগনোর করি।
(রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে আপত্তি ছিল অভিনেতার। এই প্রশ্নের পরে তিনি সাক্ষাৎকার শেষ করার অনুরোধ করেন।)