‘তাসের ঘর’-এর এই ছবি ঘিরে ফের ট্রোলড হলেন স্বস্তিকা। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
ছিলেন ‘কিজি বাসু’-র মা, হয়ে গেলেন সুজাতা। তিনি এ ছবিতে গায়ক, অভিনেতা, ভিলেন, কমেডিয়ান, পার্শ্বচরিত্র সব। ‘‘সারা ফ্রেম জুড়ে আমি আর আমি! সব জায়গা নিয়ে নিয়েছি আমি এই ছবিতে”, আনন্দে আত্মহারা স্বস্তিকা। ‘তাসের ঘর’-এ সব কাজ তিনি একা করেছেন। কিন্তু এই একা কাজের আনন্দে মাঝে মাঝে ভাবছেন দর্শক কতটা ভালবাসবে সুজাতাকে?
নিজেকে এক কঠিন পরীক্ষার সামনে রেখেছেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে চলে এল বাবা সন্তু মুখোপাধ্যায়ের কথা। “বাবা বরাবর আমার ছবি দেখে বাড়িতে এসে আমার অভিনয় নিয়ে নানা কিছু বলতেন। সব শেষে থাকতো একটা কথা, ‘তোকে আর একটু ছবিতে দেখাতে পারত! কম দেখিয়েছে”, স্মৃতি উপুড় করলেন স্বস্তিকা। তাঁর বাবা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘শাহজাহান রিজেন্সি’ দেখেও বলেছিলেন, “ইশ! এত তাড়াতাড়ি মেরে দিল তোকে! আর একটু রাখতে পারতো”, বাবা ফিরে ফিরে আসে তাঁর কথায়, কাজে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর ‘হইচই’-তে আসছে ‘তাসের ঘর’। স্বস্তিকা মনে করছেন, সুদীপ্ত রায়ের পরিচালনায় এই ছবি দেখলে তাঁর বাবার সারাজীবনের এই আফসোস মিটে যেত।
এই ছবিতে আক্ষরিক অর্থেই এক ভিন্ন চরিত্র সুজাতা। “যেমন অনিন্দ্যদার গল্প তেমনই সুদীপ্তর মেকিং। সহজাত অভিনয় করার জন্য সামনে ক্যামেরাকে ভুলে ২০ বছর ধরে কাজ করেছি। এই প্রথম ক্যামেরাকে সামনে রেখে সব কথা বলতে হল”, উচ্ছ্বসিত স্বস্তিকা।
‘চলে যাওয়ার পর আমার কাজ মনে রাখবে লোকে। আমি ক’জনের সঙ্গে প্রেম করেছিলাম মনে রাখবে না।’
ছবিতে গাছের সঙ্গে গল্প করে সুজাতা। গানের মধ্যে চলে যায় সুজাতা। বাথরুমে আলো নিভিয়ে একা নিজেকে দেখে সুজাতা...
চোখের তলায় কালি, ছোট্ট টিপ, নীল ছাপা ব্লাউজ, যার থেকে সাধারণ এক গৃহবধূর মতো বেরিয়ে পড়েছে বেখায়ালি অন্তর্বাস। খুব কাছের চরিত্র নয় কি এই সুজাতা? “আমি তো অত্যধিক অনুভূতিপ্রবণ। এই অতিরিক্ত অনুভূতি আর সমস্ত চরিত্র করার মতো সুজাতার অভিনয়েও কাজ দিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে এই অতিরিক্ত অনুভূতি একেবারেই কার্যকরী নয়”, হেসে ওঠেন স্বস্তিকা। স্বগতোক্তির মতোই বলে ওঠেন সংলাপ, “সব কিছু তো আর পারফেক্টলি প্লেটে সাজিয়ে পাওয়া যায় না।”
নিজের জীবনের যা কিছু, কাজ দিয়ে নির্মাণ করেছেন তিনি। ভাল থাকা থেকে পরিচিতি, যশ— সবটাই অভিনয় ঘিরে। “দেখুন, একটা ভাল কাজ করলে আমি ১০ দিন খুশি থাকব। এখন এমনিতেই মানুষের মন কেমন, কেউ কোথাও যেতে পারে না, বন্ধু, আত্মীয় কারও দেখা হয় না। কেউ ফুচকা খেতে, এমনকি হাঁটতেও যেতে পারছে না!” স্বস্তিকা মনে করেন মানুষকেই নিজের মুক্তির পথ বের করতে হবে। তাঁর মুক্তির রাস্তা যেমন কাজে।
আরও পড়ুন: রিয়ার ‘দুই বাবা’ সুশান্তের হত্যার ছক কষেছিল, দাবি জিম ইনস্ট্রাক্টরের
আরও পড়ুন: সুশান্তের বন্ধু সিদ্ধার্থ ও পরিচারক নীরজের বয়ানে ফারাক, ফের জেরা সিবিআইয়ের
“আমি চলে যাওয়ার পর আমার কাজ মনে রাখবে লোকে। আমি ক’জনের সঙ্গে প্রেম করেছিলাম মনে রাখবে না। আর আমি পাঁচটা প্রেম করলে সেটা নিয়ে বেশি চর্চা হয় কারণ আমি লাইমলাইটে আছি। পাশের বাড়ির মেয়ে পনেরোটা প্রেম করুক। কেউ কিছু বলবে না।” সাফ কথা ‘পাতাল লোক’-এর চর্চিত চরিত্র ডলি মেহরার। লকডাউনে একের পর এক কাজ করে দর্শকদের চমকে দিচ্ছেন স্বস্তিকা। গৃহবন্দি হয়েও তিনি থেমে নেই। পরিস্থিতি বুঝে খুব শিগগিরি মুম্বই পাড়ি দেবেন। শুট শেষ করবেন অর্জুন দত্ত-র ‘শ্রীমতি’ ছবির। এই ছবিতে কোনও আধুনিকা নন, এক্কেবারে গৃহবধূর বেশে হাজির হতে চলেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীর স্ত্রীর বেশে দেখা যাবে স্বস্তিকাকে।
হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে হাতে আছে বেশ কিছু ওয়েব সিরিজের কাজ। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম তাঁকে ভিন্ন জায়গায় এনে দিলেও সাইবার বুলিং আর ট্রোলিং তাঁর পিছু ছাড়ে না। লকডাউনে অভিনেত্রী বলেই কি… প্রশ্ন শেষ হয় না, স্বস্তিকা মুখর, “অভিনেত্রী বা মহিলা নয়, যারা সমাজে গতানুগতিক ধারা মেনে চলছে না তারাই আক্রমণের শিকার, যেমন সমকামী, রূপান্তরকামীরাও এর শিকার। ভেবেছিলাম লকডাউনে এগুলো কমবে। দেখলাম উল্টো হল”, বুঝিয়ে দিলেন স্বস্তিকা।
সম্প্রতি ‘তাসের ঘর’-এর ‘সুজাতা’র ব্রা-এর স্ট্র্যাপ দেখা গিয়েছে পোস্টারে। ব্যস, রে রে করে উঠেছে নেটপাড়ার একাংশ। কী হত, স্বস্তিকা যদি নেটাগরিকদের মন্তব্য এড়িয়ে যেতেন?স্বস্তিকা যেন প্রশ্ন শুনেই ফোঁস করে উঠলেন। “কেন উত্তর দেব না বলুন তো? সব সময় ছাড়ব কেন? সারাজীবন সব ছেড়েই রাখব? কী হবে, বাজে কথা লিখবে লোকে, লিখুক। কিন্তু একটা সচেতনতা তো তৈরি করা উচিত। মানুষ জানে না মেয়েরা অন্তর্বাস পরে? না পরলে লোকেরাই রাস্তায় তাকাবে। তাই অন্তর্বাস পরতে হয়! সমাজ বদলাক না, লোকেরা মেয়েদের বুকের দিকে তাকানো বন্ধ করুক! মেয়েদেরও আর অন্তর্বাস পরতে হবে না!”
একটা ছবির পোস্টারে মানুষ শুধু কালো অন্তর্বাস দেখল? অবাক স্বস্তিকা। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।
লুকিয়ে রেখে জামাকাপড় পরতে হবে শুধু মেয়েদের। আর ছেলেরা দারুণ শরীর তৈরি করে কখনও শুধু আন্ডারওয়্যার পরবে, কখনও কোমরের নীচে প্যান্ট পরবে, সে নিয়ে আদিখ্যেতা হবে— এই তথাকথিত ধারাকেই প্রশ্ন করেছেন স্বস্তিকা। একটা ছবির পোস্টারে মানুষ শুধু কালো অন্তর্বাস দেখল? আর কিছু দর্শকদের চোখে পড়ল না! এই নিয়ে রীতিমতো অবাক স্বস্তিকা। শুধু অভিনয় নয়, অভিনেতা হিসেবে সামাজিক সমস্যা আর সংস্কারকে বার বার প্রশ্ন করে তাঁর দর্শকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চান তিনি।
জোর করে তাঁর কণ্ঠরোধ করা যায় না। এমন লড়াকু মন তাঁর।
“মেয়েরা প্যান্টি পরে, পিরিয়ডের সময় প্যাড ব্যবহার করে, এগুলো অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা। তা নিয়ে আজও কেন লুকোছাপা? আমি অন্তর্বাস দেখাব, প্যাড লুকিয়ে কিনব না বা কালো প্যাকেটে নেব না। সরকার বলছে কনডোম ব্যবহার করুন, অথচ কনডোম কিনবে লোকে লুকিয়ে। কেন? এই উল্টো দিকের জীবন অভ্যেস করুক মানুষ! লুকিয়ে, ফিসফিস করে আমি কিছু করি না!” বুঝিয়ে দিলেন স্বস্তিকা। এ ভাবেই সুজাতারা বাঁচে। মননে, স্বপ্নের মাঝে বাগান খুঁজে পাওয়ায়, একাকিত্বে! হোক না তা ‘তাসের ঘর’!