কাঞ্চনা।ছবি: অর্পিতা প্রামাণিক
প্র: আপনি বলেছিলেন, সেপ্টেম্বর থেকে আপনার সময়টা বেশ ভাল যাবে! কিন্তু ‘বিলু রাক্ষস’ তো আশার আলো দেখাতে পারল না। তার উপর আবার পুজোর আগে মদ্যপ যুবকদের হাতে অপদস্থ হলেন...
উ: কিছু ছবি হাউসফুল হয় না, কিন্তু সেই সব ছবিতে অভিনয় করলে বায়োডেটা আরও উজ্জ্বল হয়। ‘বিলু রাক্ষস’ সে রকমই একটি ছবি। একজন আন্তর্জাতিক মানের পরিচালককে যদি নিজের কিছু কাজ দেখাতে চাই, তা হলে বিনা দ্বিধায় এই ছবিটা দেখাতে পারব। সেখানে হয়তো আমার অভিনীত অন্য ছবি দেখাতে পারব না। ‘বিলু রাক্ষস’ কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা পেয়েছে। আমার অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, পুজোর আগে আমার সঙ্গে যে ঘটনাটা ঘটল, তা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। পেজ থ্রি, পার্টি, ইন্টারভিউ, শ্যুটিং... এই কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে আমি মুখোমুখি হলাম এমন একটি ঘটনার। প্রথম দিন থানায় একা সব হ্যান্ডল করেছি। আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে গিয়েছে। পুলিশের ভূমিকায় আমি খুশি। তাঁরা যেমন আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন, তেমনই মেন্টাল সাপোর্টও দিয়েছেন। একটা আন্তর্জাতিক মানের ছবিতে অভিনয় করলাম, আমার আত্মবিশ্বাস আরও দৃঢ় হল। সময়টা একেবারে খারাপ বলা যাবে না।
প্র: পুজোর সেরা প্রাপ্তি?
উ: ‘নিউটন’! পুজোয় অনেকগুলো বাংলা আর হিন্দি ছবি দেখেছি। কিন্তু ‘নিউটন’ দেখে আমি সত্যিই মুগ্ধ।
প্র: আপনার পরবর্তী ছবি তো...
উ: ‘গুহামানব’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে পারমিতা মুন্সির ডেবিউ ফিল্ম। শ্বশুর ও বউমার মধ্যে অসম সম্পর্ক নিয়ে ছবিটা। বউমার চরিত্রে আমি, শ্বশুরের ভূমিকায় চিরঞ্জিৎ। যথেষ্ট বিতর্কিত বিষয়। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের ‘টুসকি’ও অক্টোবরেই রিলিজ করবে। স্বর্গীয় গৌতম সেনের ‘ধ্রুবকথা’ এবং ‘নন্টে ফন্টে’ও কমপ্লিট। এ বার দেখা যাক, কবে মুক্তি পায়।
প্র: শোনা যায়, ‘বাই বাই ব্যাংকক’-এর স্ক্রিপ্ট তিন দিনে লিখেছিলেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়?
উ: (হাসি)... সে এক মজার কাণ্ড। সেই সময় একদিন আমি, খরাজদা, কাঞ্চন, অঞ্জনা, শিলাজিৎ ঠিক করেছিলাম ব্যাংকক বেড়াতে যাব। শিলাজিৎ বলল, ও ক্যামেরা নিয়ে যাবে। ট্র্যাভেল ডকুমেন্টারি ফিল্ম শ্যুট করবে। ও মা! তার পরদিন শুনলাম, আমরা ব্যাংককে শ্যুটিং করতে যাব। অনিকেতদাকে একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি তিন দিনে একটা গল্প লিখবেন। সেই গল্পেরই শ্যুটিং হবে।
প্র: সিনেমা নিয়ে আপনার যথেষ্ট খুঁতখুঁতানি আছে, সেটা তো সিরিয়ালের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না! এমনকী আপনি যাত্রাও করেছেন!
উ: ‘সেদিন দু’জনে’ করার পর বুঝলাম, আমার পক্ষে কমার্শিয়াল বাংলা ছবি করা সম্ভব নয়। এই সব ছবি কিছু টাকা আর জেলায় কয়েকটা শো ছাড়া আমাকে কিছু দেবে না। আমার কোনও উত্তরণ হবে না। খুঁতখুঁতানি আছে বলেই হয়তো ‘অ্যাক্সিডেন্ট’, ‘বাই বাই ব্যাংকক’, ‘শজারুর কাঁটা’, ‘পাখি’র মতো ছবি করেছি। অনেক ভাল ভাল টেলিফিল্মও করেছি। শুধু সিনেমা করলে আমার চলত না। কবে কখন একটা চরিত্র পাব... বড় অনিশ্চয়তা! নিশ্চয়তা ও আর্থিক স্বাচ্ছল্য দিয়েছে সিরিয়াল। আর যাত্রা? কিছুটা কৌতূহল থেকেই করেছি। যাত্রা করতে গিয়ে দেখেছি, এই ক্ষেত্রের শিল্পীরা কত প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করে। অথচ সে রকম কোনও প্রচার নেই, টাকাও নেই। অভিনয় নিয়ে সাংঘাতিক প্যাশনেট যাত্রাশিল্পীরা। প্রসঙ্গত বলি, আমি কিন্তু থিয়েটারও করেছি। ব্রাত্য বসুর পরিচালনায় ‘হ্যামলেট দ্য প্রিন্স অব গরানহাটা’। অভিনয়ের সব ক্ষেত্রেই আমার বিচরণ (হাসি)!
আরও পড়ুন:‘অ্যাক্টিং নিয়ে পড়াশোনা করতে চাই না’
প্র: আপনার জেনারেল নলেজ বেশ স্ট্রং, আপনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চা করেন, বিদেশি ছবি দেখেন, ‘দাদাগিরি’-তে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন...
উ: এটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। একটা স্মার্ট ফোন থাকলেই সব জেনে ফেলা যায়। অবশ্য জানার ইচ্ছে থাকা চাই। সেটে ফাঁকা সময়ে আমি ম্যাগাজিন পড়ি, চারপাশে কী হচ্ছে সে নিয়ে আপ টু ডেট থাকার চেষ্টা করি। আসলে ছোটবেলায় বাবা আমাকে হয় ইতিহাসের নয় দেশ বিদেশের গল্প বলতেন। সেই থেকে জানার ইচ্ছেটা প্রবল। ইন্ডাস্ট্রিতে আসার পর যাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে, তাঁরা সকলেই বুদ্ধিমান। তাই বাধ্য হয়েই নিজের বুদ্ধিতেও শান দিতে হয়। অবশ্য বোকা লোকের সঙ্গে মিশতেও পারতাম না। (হাসি)
প্র: আপনাকে কোনও রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে বা প্রচারে হাঁটতে দেখা যায় না কেন?
উ: ও বাবা, রাজনীতি থেকে আমি শতহস্ত দূরে। আমার মতো অতি আবেগপ্রবণ ও প্রতিবাদী মানুষের পক্ষে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। অন্যায় দেখলেই আমি চেঁচাব।
প্র: বিয়ে করছেন কবে?
উ: ২০১৮। আপনি উত্তর শুনেই যা যা প্রশ্ন করবেন তার আগেই বলি, নিজের জন্য নিজেই বর জুটিয়েছি। মানুষটি এই ইন্ডাস্ট্রির নন, তিনি বেজায় শান্তশিষ্ট। আমার অতীতের সম্পর্কগুলি নিয়ে তাঁর কোনও মাথাব্যথা নেই। বলতে পারেন, তাকে আমিই ডমিনেট করি। প্লিজ, নাম এখনই জানতে চাইবেন না। আর বলি, বিয়ের পর আমি মায়ের সঙ্গেই থাকব!
প্র: আপনি তো বেশ কড়া ফেমিনিস্ট!
উ: অবশ্যই। তবে যৌনতা, পুরুষ বন্ধু বদলানো, নেশা করা বা পোশাক নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার চেয়ে আমি মনে করি, মানসিক ভাবে ও আর্থিক ভাবে একটি মেয়ের শক্ত ও স্বনির্ভর হওয়া দরকার। কোথাও বেড়াতে গিয়ে যদি খরচটা আমাকে করতে হয়, তা নিয়ে আমি স্বামীর উপর রাগ করব না। আমাকে স্বামী হিরের নেকলেস না কিনে দিলে মুখ গোমড়া করে থাকব না। বরং নিজেই কিনে নেব। আশা করব, ও সঙ্গে থাকবে পছন্দ করে দেওয়ার জন্য।
প্র: সতেরো বছর হয়ে গেল এই ইন্ডাস্ট্রিতে। পরিচালনা করার ইচ্ছে নেই?
উ: ইচ্ছে আছে শর্ট ফিল্ম পরিচালনা করার। গল্পও ভেবে ফেলেছি, তবে এখনই নয়। আমি অবশ্য কয়েকটা শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেছি। ‘লাস্ট ট্রাম’, ‘হোটেল সি ভিউ’। এখন বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হচ্ছে ছবিগুলো। ‘হোটেল সি ভিউ’-এর জন্য মাদ্রিদ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনয়ের জন্য নমিনেশনও পেয়েছিলাম।