টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির রাজা মিডাস বলা যায় তাঁকে। যা কিছুতে হাত দেন, সোনা ফলিয়ে ছাড়েন! এই মুহূর্তেও সাফল্যের স্পটলাইট তাঁর উপরে। অবশ্য স্পটলাইট তাঁকে কখনওই ছাড়ে না। তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলে কথা! সাফল্যের দৌ়ড় দেখছেন ৩৫ বছর ধরে। তবে গত বছর ‘ইয়েতি অভিযান’, ‘ময়ূরাক্ষী’ ও সবে মুক্তি পাওয়া ‘দৃষ্টিকোণ’-এর ত্রিফলা আলোয় একটু বেশিই উদ্ভাসিত তিনি।
কী বলছেন? ‘‘আগে ১০-১১টা করে ছবি করতাম। এখন খুব কমই কাজ করি। কিন্তু মনে করি, সাকসেস ইজ় ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট,’’ প্রত্যয়ী অথচ কিছুটা উদাসীন শোনাল প্রসেনজিৎকে। প্রতিটা ছবি আলাদা গল্প বলে। প্রতিটা গল্পে তিনি অন্য মানুষ। ভিতরের অভিনেতার খিদেটা মেটান কী ভাবে? স্পষ্ট উত্তর, ‘‘আমার কাছে ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর বা দু’নম্বর বলে কিছু নেই। কনটেন্টই শেষ কথা। ইন্ডাস্ট্রিতে ‘ইয়েতি অভিযান’-এর মতো কমার্শিয়াল সাকসেস দরকার, আবার নিজের ভিতর থেকে খুঁজে বার করে আনা ‘ময়ূরাক্ষী’র মতো গল্পেরও প্রয়োজন। ‘ময়ূরাক্ষী’র ঠিক এক সপ্তাহ আগে বছরের সবচেয়ে বড় বাংলা ছবিটা মুক্তি পেয়েছিল, ‘আমাজ়ন অভিযান’। ও দিকে আবার সলমন খানের ‘টাইগার জ়িন্দা হ্যায়’। গুটি গুটি পায়ে হেঁটেই কিন্তু ‘ময়ূরাক্ষী’ অতটা সাফল্য পেল। আসল কথা কী জানেন তো, দর্শক কিন্তু বদলে যাচ্ছেন। তাই নিজেকেও বদলানোটা জরুরি।’’ তিনি মনে করেন, ‘ময়ূরাক্ষী’ এমন একটা দরজা খুলে দিয়েছে, যেখানে অন্য রকম ছবি যাঁরা করতে চান, তাঁদের জন্য সাহস আছে। আবার ‘ইয়েতি...’র মতো ছবি হিট করলেই এই অন্য রকমের ছবিগুলো করতে পারার সাহস দেখাবে ইন্ডাস্ট্রি। তাঁর কাছে এই অঙ্কগুলো ধোঁয়াশাহীন, পরিষ্কার।
সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে তাঁর ও ঋতুপর্ণার জুটি প্রশংসিত। প্রশংসায় সম্পৃক্ত নায়ক বললেন, ‘‘এর আগে নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘প্রাক্তন’-এও আমাদের পছন্দ করেছিলেন মানুষ। এখানেও করছেন। ওই যে বললাম, দর্শক বদলে যাচ্ছেন, তাঁদের একদম নতুন কিছু দিতে হবে প্রতি বার!’’ এই নতুন কিছু দেওয়ার তাগিদেই তাঁর বিষয় নির্বাচনে এতটা বৈচিত্র। ‘‘এগুলো ম্যাটার করে। একটা ছবিকে আমি বাড়তি কিছু দিতে পারছি কি?’’ স্বগতোক্তি তাঁর।
প্রতিভা, আত্মবিশ্বাস, অভিজ্ঞতা— এই তিনের জু়ড়িদারিতে তিনি অপ্রতিরোধ্য হতে পারেন। কিন্তু বিনয় দূর অস্ত নয়। ‘‘জানেন, এখনও টেনশন হয় এক একটা রিলিজ়ের আগে! হাত-পা কাঁপে। কারণটা কী জানেন? আমি তো রাতারাতি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় হয়ে যাইনি। আর আমার নামের সঙ্গে মানুষের একটা প্রত্যাশা জড়িয়ে আছে। প্রসেনজিৎ মানেই একটা অন্য রকম কিছু হবে... এই এক্সপেক্টেশনের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আসছি সেই ‘অটোগ্রাফ’-এর সময় থেকে,’’ বললেন তিনি।
তিনি প্রতিযোগিতায় বিশ্বাস করেন না। মনে করেন, সকলেরই একক ভাবে উন্নতি হওয়া দরকার, তবেই ইন্ডাস্ট্রির সার্বিক উত্তরণ সম্ভব। তাই প্রসেনজিৎ বিশ্বাস করেন, মাইলফলক তৈরি করে দেওয়ায়। এই প্রসঙ্গেই বলছিলেন, ‘‘দেব বা জিৎ আমার চেয়ে অনেক ছোট। দেব যে ভাবে কাজটা করছে, তাতে আমি ওর জন্য সত্যিই খুশি। জিতের সঙ্গেও কথা হয়েছে। ও আমাকে বলেছে, অন্তত আরও কিছু বছর ও কমার্শিয়াল ছবিই করবে...’’
পরের প্রজন্মকে কিছু দিয়ে যেতে পারছি কি? এই চিন্তাটা নিয়েই আপাতত দৌড়চ্ছেন ইন্ডাস্ট্রির প্রিয় ‘বুম্বাদা’...