'পারফর্ম করলেই টিভিতে টিকে থাকা যায়'

জনপ্রিয় অভিনেতা বাদশা মৈত্রর শখ জঙ্গলে বেড়ানো আর ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি। জীবন, কেরিয়ার নিয়ে আলাপচারিতায় বাদশাজনপ্রিয় অভিনেতা বাদশা মৈত্রর শখ জঙ্গলে বেড়ানো আর ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি। জীবন, কেরিয়ার নিয়ে আলাপচারিতায় বাদশা

Advertisement

পারমিতা সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০০:১১
Share:

বাদশা

জায়গাটার নাম জোরবীর। রাজস্থানে। এটা আসলে একটা ভাগাড়। ‘‘ওই অঞ্চলে যত গরু-মোষ মরছে, সব ওখানে এনে ফেলা হতো। তো, সেখানে আমরা তিন বন্ধু গিয়েছিলাম ভালচার শ্যুট করতে। একদিন সকাল থেকে সন্ধে, পরদিন একটা বেলা ওখানে ছিলাম,’’ বললেন বাদশা মৈত্র। ব্যাপারটা একবার ভেবে দেখুন, আপনি নাক বন্ধ করে ফেলবেন! সেখানে শখ এমনই বিষম বস্তু, তা মানুষকে দিয়ে গন্ধমাদনও বইয়ে নেয়!
বাদশার নেশা হল বেড়ানো। আরও নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে জঙ্গল-ভ্রমণ, ওয়াইল্ডলাইফ ফোটোগ্রাফি। ভারতের নানা অরণ্যে বেড়ানোয় তাঁর উপচে পড়া অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার। তাই সে গল্প শুরু হলে চলন অবিরাম... এ বারও যেমন পুজোর সময় বেরিয়ে এলেন ঝাড়খণ্ডের বেতলা ফরেস্ট। সপরিবার। ‘‘বেতলা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে মারোমার-এ আমরা ছিলাম এক ট্রি হাউসে। ইলেকট্রিসিটি ছিল না, রেশন নিয়ে যেতে হয়েছিল। সেখান থেকে নেতারহাট, ম্যাকলাস্কিগঞ্জ। প্রকৃতির খুব কাছে, আদিম গন্ধ মাখা জায়গাগুলো।’’ হ্যাঁ, এ হেন অনুভূতিতে মন জারিত হবে, নিসর্গের কাছাকাছি গেলে...

Advertisement

দাসানি স্টুডিয়োয় বসে কথা হচ্ছিল বাদশার সঙ্গে। ‘কুসুমদোলা’র শ্যুটিং চলছে তখন, শটের মাঝেই কথোপকথন। প্রায় বছর পনেরোরও বেশি হয়ে গেল কাজ করছেন বাদশা। মুর্শিদাবাদ থেকে তাঁর কলকাতায় আসা মূলত থিয়েটার করতেই। তা করতে করতেই আলাপ শ্যামল ঘোষ ও বিভাস চক্রবর্তীর সঙ্গে, যাঁদের কাছে তিনি আজও ঋণী এবং পেয়েছিলেন জীবনের বড় শিক্ষা। ‘‘অভিনয়টা আর পাঁচটা কাজের মতো একটা কাজ বা রোজগারের মাধ্যম নয়। এটা একটা সিরিয়াস ওরিয়েন্টেশন,’’ যা বাদশা আজও মানেন। ‘‘থিয়েটার করতে করতেই জোছন দস্তিদারের একটা হিন্দি সিরিয়াল করতে শুরু করি। ওখান থেকে টেলিভিশনের শুরু। তার পর ‘জন্মভূমি’ সিরিয়াল আমার পেশাদার অভিনেতা হওয়ার প্রথম ধাপ। সিরিয়ালে অভিনয় করা খুব কম চরিত্র মনে আছে, কিন্তু ‘অতীশ’ চরিত্রটা ভুলিনি।’’

অন্য অনেক অভিনেতার মতো বাদশার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট নিঃসন্দেহে রবি ওঝার ‘এক আকাশের নীচে’। তাঁর কথায়, ‘‘টেলিভিশনের যে সিরিয়াস ওরিয়েন্টেশন, সেটা তৈরি করেছিল ‘এক আকাশের নীচে’। রবি ওঝার ফ্লোরে যারা থেকেছে, তারা দেখেছে, একটা ভাল ছবি যে অ্যাপ্রোচ থেকে তৈরি হয়, সিরিয়াল তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। এর পর ‘প্রতিবিম্ব’-সহ আরও বেশ ক’টা সিরিয়াল এবং বাংলা ছবিতেও অভিনয় করি। এ ভাবে পুরোদস্তুর অভিনেতা হিসেবে কাজ করতে থাকি এবং থিয়েটার করাটা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।’’

Advertisement

ডেলিসোপ প্রসঙ্গে বর্তমানে অনেকেরই মত যে, এখানে যা দেখানো হয়, তা ঘরোয়া কূটকচালে সীমাবদ্ধ। এ ব্যাপারে বাদশার কী অভিমত? ‘‘দেখুন, ডেলিসোপের একটা ফরম্যাট আছে, সেটা রাতারাতি ভেঙে দেওয়াটা ডিফিকাল্ট। তবে টিভিতেও নানা এক্সপেরিমেন্ট চলছে। আবার একই সময়ে আমার অভিনীত চরিত্রের নানা দৃশ্য ধরে বলে দিতে পারি, সেগুলো এক-একটা ফিলোজফিক্যাল ডিসকোর্স। ওই সিচুয়েশনে জীবন, দর্শন, প্রেম, নৈতিকতা সম্পর্কে ওই চরিত্রের যে ব্যাখ্যা, সেটা কোথাও আন্ডারলাইনড হয়নি। টিভি একটা ভীষণ শক্তিশালী মিডিয়াম, যা মানুষের ঘরে-ঘরে পৌঁছে যায়। এই ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু ভীষণ পেশাদার। এখানে টিআরপি নেই মানে আমি কাল থেকে পরদায় নেই। এখানে পারফর্ম করলেই টিকে থাকা যায়। তাই টিভির দর্শক মানেই ক্যাটিগোরাইজ করার মানে নেই। প্রশ্নটা হচ্ছে, আপনি কী দেখাচ্ছেন। আর টিভির মাধ্যমে কত পুরনো অভিনেতা ফিরে এসেছেন, বাংলা ছবিতে তাঁদের জায়গা নেই। মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীর কাছে এই সেট-ই সব। তাঁরা বলেন, ‘আমরা তো অভিনয় করতে চাই, তোদের সঙ্গে থাকতে চাই, গল্প করতে চাই...’ এটাই তাঁদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আর টিভি একমাত্র মিডিয়াম, যেখানে এত নতুন মুখ দেখতে পাই। ডেলিসোপের খামতি নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। এটাও ঠিক, এই মুহূর্তে খুব আইডিয়াল পরিস্থিতিতে আমরা নেই। টিআরপি রেখে ভিন্ন স্বাদের কিছু দৃশ্য রেখে দেখা হচ্ছে দর্শক কী ভাবে নিচ্ছে। তবে ভাল জিনিস করলে লোকে দেখে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাল কাজও বাড়বে।’’

ধারাবাহিকে কাজ মানে সারাদিনের ব্যস্ততা। ‘কুসুমদোলা’ ছাড়াও বাদশার আর একটি ধারাবাহিক ‘সীমারেখা’ শুরু হতে চলেছে। সেখানেও তাঁরা দর্শককে নতুন গল্পের স্বাদ দিতে চান। এক সময় তো বাদশা একসঙ্গে তিনটে ডেলিসোপও করেছেন। এর পরও কী করে সময় বের করেন বছরে এতগুলো ট্রিপ করার? ‘‘আমি যখন থাকি, আমার কাজটা তুলে দিয়ে যাই। প্রযোজকরা আমার উপর সে ভরসা রাখেন, তাই সেই সুযোগটা পাই। আমার বন্ধু অভিনেতারাও বলেন, এটা কী ভাবে পারিস?’’

এ হেন বাদশার ভ্রমণসঙ্গী কখনও তাঁর শিক্ষিকা স্ত্রী মনীষা এবং সাত বছরের কন্যা বিনোদিয়া। ‘‘এক বছর বয়স থেকে মেয়ে আমার সঙ্গে ঘুরছে। চিকচিকের যখন সাড়ে তিন বছর বয়স, তখন গিয়েছিলাম বান্ধবগড়, পেঞ্চ। সেটা জুন মাস, মাথার উপর সূর্য যেন আগুন ছড়াচ্ছে। হুডখোলা জিপে আমরা জাঙ্গল সাফারি করেছিলাম। মহারাষ্ট্রের নাগজিরা জঙ্গলে থেকেছিলাম। সেখানে ইলেকট্রিসিটি ছিল না। তার উপর প্রচণ্ড গরম। রাতে চাল-ডাল খেয়ে শোয়া। তাই চিকচিক এ সবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে,’’ বললেন বাদশা।

বার্ডিংয়ে গেলে অবশ্য তাঁর বন্ধুদের একটা আলাদা দল আছে। অনেক হাঁটতে হয় বলে, পরিবার নিয়ে যান না সাধারণত। কখনও আবার একাই বেরিয়ে পড়েন, যেমন গিয়েছিলেন করবেট।

এ সবের সঙ্গে বাদশা মৈত্রর সমান তালে চলছে ডেলিসোপ এবং সিনেমায় অভিনয়। সব মিলিয়ে তাঁর জীবনে নানা রঙের পরত। পরিপূর্ণতার আস্বাদ। আর তারই স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ বোধ হয় প্রতিফলিত হয় পরদায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement