নাজিয়া হাসানের কণ্ঠের মাদকতা ‘ডিস্কো দিওয়ানে’ করে তুলেছিল সবাইকে। আটের দশকে বড় হওয়া প্রজন্মের কাছে তাঁর গান ছিল আলাদা আকর্ষণ। ব্যক্তিগত জীবনে যন্ত্রণায় আকণ্ঠ ডুবে থেকে জমজমাট পারফরম্যান্স উপহার দিতেন তিনি। ফুসফুসে কর্কট রোগের সংক্রমণ থেকে কোনও অংশে কম ছিল না জীবনসঙ্গীর থেকে পাওয়া আঘাত। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
নিজের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার পপ-রানি বলে পরিচিত নাজিয়ার জন্ম ১৯৬৫ সালের ৩ এপ্রিল, পাকিস্তানের করাচিতে। তাঁর বাবা বসির হাসান ছিলেন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা, মুনিজা বসির সমাজকর্মী। ভাই জোহেব এবং জারার সঙ্গে নাজিরার শৈশব ও কৈশোরের বড় অংশ কেটেছিল লন্ডনে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
লন্ডনের রিচমন্ড আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও ইকোনমিক্সে স্নাতক হন নাজিয়া। পরে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রিও লাভ করেন। সত্তরের দশক থেকেই নাজিয়া পাকিস্তান টিভিতে শিশুশিল্পী হিসেবে পারফর্ম করতেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
পেশাদার শিল্পী হিসেবে পথ চলা শুরু পনেরো বছর বয়সে। পঞ্চদশী নাজিয়ার কণ্ঠে মুগ্ধ ফিরোজ খান তাঁকে সুযোগ দেন ‘কুরবানি’ ছবিতে। নাজিয়া ছিলেন ছবির মূল কণ্ঠশিল্পী। তাঁর কণ্ঠে ‘আপ জ্যায়সা কোই’ তুমুল জনপ্রিয় হয়। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
মাদকতায় ভরা হাস্কি ভয়েস আর নিজস্ব ঘরানা। দ্রুত ভারতের প্রথম সারির জনপ্রিয় শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন পাকিস্তানি নাজিয়া। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
‘আপ জ্যায়সা কোই’ গানের সুরকার ছিলেন বিড্ডু আপ্পাইয়াহ। লন্ডনবাসী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিড্ডুর সঙ্গে নাজিয়ার যুগলবন্দি ছিল সুপারহিট। ভারতীয় বিনোদন দুনিয়ায় নাজিয়া ছিলেন প্রথম প্লেব্যাক শিল্পী, যিনি মিউজিক অ্যালবাম করেছিলেন। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৮১ সালে মুক্তি পায় নাজিয়ার প্রথম মিউজিক অ্যালবাম ‘ডিস্কো দিওয়ানে’। ভারত ও পাকিস্তানে বিক্রির সব রেকর্ড ভেঙেচুরে দেয় এই অ্যালবাম। এমনকি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, লাতিন আমেরিকা এবং রাশিয়াতেও বিক্রির তালিকার সবার উপরে ছিল ‘ডিস্কো দিওয়ানে’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
নাজিয়ার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘স্টার/বুম বুম’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। অ্যালবামের সাউন্ডট্র্যাক ব্যবহৃত হয়েছিল ‘স্টার’ ছবিতে। কুমার গৌরব ও রতি অগ্নিহোত্রী অভিনীত ছবিটি বক্সঅফিসে সাফল্য না পেলেও শ্রোতাদের মনের আরও কাছাকাছি চলে আসে নাজিয়ার গান। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
সাফল্য ও জনপ্রিয়তার ধারা নাজিয়া ধরে রেখেছিলেন তাঁর তৃতীয় অ্যালবাম ‘ইয়াং তরং’ এবং চতুর্থ অ্যালবাম ‘হটলাইন’-এর ক্ষেত্রেও। পাকিস্তান টেলিভিশনেও বহু জনপ্রিয় শোয়ে ভাই জোহেবের সঙ্গে কাজ করেছেন নাজিয়া। তাঁর দেখানো পথে অনেক শিল্পীই নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন পপগানের দুনিয়ায়। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয় নাজিয়ার পঞ্চম তথা শেষ মিউজিক অ্যালবাম ‘ক্যামেরা ক্যামেরা’। প্রকাশের আগে জোহেব জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটাই তাঁদের শেষ অ্যালবাম। আগের অ্যালবামগুলির মতো অতটা জনপ্রিয় হয়নি ‘ক্যামেরা ক্যামেরা’। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৯৫ সালে বিড্ডুর সুর করা ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ গানটির অফার ফিরিয়ে দেন নাজিয়া। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল এতে পাকিস্তানবাসীর ভাবাবেগে আঘাত লাগতে পারে। পরে এই গানটি আইকনিক হয়ে ওঠে আলিশা চিনয়ের কণ্ঠে। শুধু এই গান-ই নয়। তার আগে সপ্রতিভ ও সুন্দরী নাজিয়া ফিরিয়ে দেন অভিনয়ের সুযোগও। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
গোটা আটের দশক এবং নয়ের দশকের শুরুতে নাজিয়া ছিলেন ভারত ও পাকিস্তানের জনপ্রিয়তম পপ শিল্পী। কিন্তু খ্যাতির শীর্ষে থাকতে থাকতেই তিনি বিনোদন দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। চলে যান অকাল-অবসরে। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
ব্যক্তিগত জীবনকে আরও বেশি সময় দেবেন বলে মঞ্চ থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। কিন্তু একইসঙ্গে জীবনের পর্দা থেকেও তাঁর বিদায়ের পর্ব ঘনিয়ে এসেছিল। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৯৫ সালে তাঁর বিয়ে হয় পাকিস্তানি ব্যবসায়ী মির্জা ইশতিয়াক বেগের সঙ্গে। তার কিছুদিন আগেই নাজিয়ার শরীরে বাসা বেঁধেছে মারণরোগ। এরপর তাঁর জীবন জুড়ে শুধুই কালান্তক লড়াই। শারীরিক ও মানসিক। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২০০০ সালের ১৩ অগস্ট ক্যানসারের কাছে হার মানেন নাজিয়া। চিরতরে বিদায় নেন জীবনের মঞ্চ থেকে। তার ঠিক দশদিন আগে বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয় তাঁর। তিনি কোনওদিন প্রকাশ্যে আনতে চাননি পারিবারিক বিবাদ। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা জানতেন, বিবাহিত জীবনে নাজিয়া ছিলেন অসুখী। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
১৯৯৭ সালে জন্ম হয় নাজিয়ার একমাত্র ছেলে আরেজের। নাজিয়া চেয়েছিলেন, ছেলে যেন কোনওমতেই তাঁর বাবা মির্জা ইশতিয়াকের কাছে বড় না হয়। তাই মৃ্ত্যুর আগে জোর করে চূড়ান্ত করেছিলেন বিবাহবিচ্ছেদ। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
নাজিয়ার পরিজনদের অভিযোগ, তাঁকে তিলে তিলে মানসিক যন্ত্রণায় বিদ্ধ করেছিলেন মির্জা ইশতিয়াক। তিনি নাকি বলতেন, জীবন্ত নাজিয়ার থেকে মৃত নাজিয়াই তাঁর কাছে বেশি প্রিয়। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
২০১৮ সালে, তাঁর প্রাক্তন স্বামী মির্জা নাজিয়ার বায়োপিক বানাবেন বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তাতে তীব্র প্রতিবাদ জানান নাজিয়ার ভাই জোয়েব। বলেছিলেন, তাঁর মৃত দিদিকে নিয়ে তিনি মির্জাকে ব্যবসা করতে দেবেন না। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)
মাত্র ৩৫ বছর বয়সে নাজিয়া তাঁর মায়ের সামনেই মারা যান লন্ডনের এক হাসপাতালে। লন্ডনের হেনডনের সমাধিক্ষেত্রে ঘুমিয়ে আছেন পপগানের রানি। তাঁর চিরসবুজ গান ছাড়াও নাজিয়া বেঁচে আছেন ‘নাজিয়া হাসান ফাউন্ডেশন’-এর মধ্যে। পথশিশুদের জন্য কাজ করে এই সংস্থা। (ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া)