দেব।
কমলা শাড়ি, সবুজ ব্লাউজ!
হাস্যে-লাস্যে ঝিকমিকে টলিউডের অভিনেত্রী, মঞ্চের উপরে বসেই খুল্লাম খুল্লা জানিয়ে দিলেন বিজেপি আর তৃণমূল— দুই রাজনৈতিক দলের দুই প্রতিনিধি গায়ক বাবুল সুপ্রিয় ও নায়ক দেবকে খুশি করার জন্যই তাঁর এই রং নির্বাচন!
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীমশাই বাবুলের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যুইজে অংশ নিচ্ছেন তো, তাই শাড়ির রং কমলা, তৃণমূল-সাংসদ দেবকে তিনি ভী-ষ-ণ ভালবাসেন, ব্লাউজটা তাই সবুজ!
অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তীর হাটে হাঁড়ি ভাঙা এমন রসিকতার জবাবে সঞ্চালক মীর স্টেপ আউট করে নিজস্ব ই-স্টাইলে বললেন—‘‘আমি পার্টিসিপেট করলে কিন্তু লাল রঙের পেটিকোট পরতাম দিদি!’’
দর্শক আসনে হাসির পিচকিরি! আনন্দের ফাগ। মঞ্চ-দর্শক মুহূর্তে মিশে গেল ভাললাগার দোলে।
***
রসিকতার আবির উড়িয়ে ‘রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাব’-এ, ১ মার্চ, রবিবার সন্ধ্যায় এভাবেই আরম্ভ হল ক্যুইজের আসর। ‘ক্যামেলিয়া প্রেজেন্টস আনন্দplus বায়োস্কোপে-বাজিমাত পাওয়ার্ড বাই মিঠী’।
যে প্রতিযোগিতার মঞ্চ ও ক্যুইজ শেষের পার্টি যেন রিইউনিয়ন।
দেব ও বাবুল যখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন,
ক্যামেরার ঝলকানির সঙ্গেই কি কোথাও বেজে উঠল— ‘কহো না প্যার হ্যায়’!
অথচ হালের চড়া রঙের রাজনীতির যা দাপট, তাতে এ আসর হতেই পারত ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন’, হতে পারত ‘প্রতিপক্ষ’... কিন্তু অনুপম-স্টাইলে যা আসলে হয়ে দাঁড়াল ‘বসন্ত এসে গেছে’। সব দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে, কোলাকুলির মঞ্চ। প্রেম-অপ্রেমের রং মিলেমিশে ‘বুরা না মানো... হোলি হ্যায়’!
না হলে ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ পর্যন্ত কিনা জুটি বেঁধে ক্যুইজে! গত চার বারই ওঁরা অংশ নিয়েছিলেন, প্রতি বারই ছিলেন একে অপরের প্রতিযোগী...প্রতিদ্বন্দ্বী। আর এ বার ক্যুইজ জিতলেন কিনা জুটি বেঁধে!
প্রসেনজিৎ মঞ্চের উপরেই বললেন, ‘‘আমার লাকি নায়িকা’’... পারফর্মও করলেন দু’জনে একটি বিশেষ রাউন্ডে— ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ গানের সঙ্গে।
দর্শকাসনে বসে তখন পরিচালক সুদেষ্ণা রায় স্বগতোক্তি করলেন, ‘‘ইস্ ঋতুটা (ঋতুপর্ণ ঘোষ) বেঁচে থাকলে কী খুশিই হত! মুখে অবশ্য বলত, ‘বোকার মরণ!’
***
এখানে একটা প্রসঙ্গ প্রথমেই বলে রাখা ভাল, ম্যাচ রেফারির ভূমিকায় ছিলেন অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে সম্প্রতি কলকাতায় শ্যুটিং করা ‘পিকু’ ছবির পরিচালক সুজিত সরকার। যিনি আবার ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’ ছবির প্রযোজকও বটে। তো সেই সুজিত, ক্যুইজে নম্বর বিভাজন নিয়ে এমন চুলচেরা ভূমিকা পালন করলেন, যে তাঁকেই অনায়াসে একটা ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ ট্রফি দেওয়া যায়।
***
অনুষ্ঠান আরম্ভ হওয়ার কিছু আগে থেকেই একটু ওয়ার্ম-আপ, হালকা আড্ডা, ফুরফুরে ফিশফ্রাই, সুগন্ধি চা-য়ে প্রতিযোগী ও বিশেষ অতিথিরা যে যাঁর মতো করে তৈরি করছিলেন ছোট্ট ছোট্ট নানা মুহূর্ত!
ব্যাকলেস লাল চোলি ও কালো পোশাকে এসেছিলেন তন্বী তনুশ্রী। ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছিল তাঁকে! কিন্তু তনুশ্রীর সোনালি কেশসজ্জা দেখে খুনসুটি করে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলে বসলেন, ‘‘একেবারে সিংহের মতো দেখতে লাগছে রে তোকে!’’ ঠোঁট উল্টে তনুশ্রী বললেন, ‘‘কৌশিকদা, খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!’’
চিরঞ্জিত, যিশু, শাশ্বত, আবীর, অনুপম রায়রা আসেন এক্কেবারে প্রথম দিকে। চিরঞ্জিত বললেন, ‘‘আমি কিন্তু ভাই এসেছি সবচেয়ে আগে।’’ আর ক্যুইজের টেনশন কেমন বোঝাতে গিয়ে চিরঞ্জিত মঞ্চে বসে বললেন, ‘‘ব্যাপারটা অনেকটা... কোপাকাবানা বিচের ধারে প্রেমিকাকে নিয়ে বেড়াতে গেছি...সমুদ্র...বেশ লাগছে... হঠাৎ দেখলাম দূরে স্ত্রী দাঁড়িয়ে... তখন যেমন লাগত... ঠিক তেমনই লাগছে।’’
***
অনুষ্ঠান শুরুর আগে একে একে আসছিলেন সকলেই।
লাল বাতিওয়ালা গাড়িতে এলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সহাস্যে এগিয়ে গেলেন পরিচিত বন্ধু মহলে।
এলেন বাবুল সুপ্রিয়। বাবুলও এলেন বটে লাল বাতিওয়ালা গাড়ি, প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে, কিন্তু জলে পড়লে মাছের অবস্থা যে রকম হয়, সে রকমই চেনা বন্ধুদের মাঝে এসেই হইচই আড্ডা জুড়লেন নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে।
ক্যুইজ শেষের নৈশ পার্টিতে যখন তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, দেব, ব্রাত্য, চিরঞ্জিতের সঙ্গে কী বিষয় নিয়ে কথা হল? ইস্টওয়েস্ট মেট্রো?
বাবুল বললেন, ‘‘আরে না-না, ইস্ট-ওয়েস্ট-নর্থ-সাউথে এত সুন্দরী নারী...পার্টির চারদিকে এত সুন্দরী নায়িকা...আমরা তাই, ‘নায়িকা সংবাদ’-এর উত্তমকুমারের অভিনয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম।’’
আর ব্রাত্য বললেন, ‘‘বাবুল বলল কমলা রঙের প্রতি ও নাকি এমনিতেই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে...আমি ওকে বললাম, কিন্তু বাংলায় এলে সবুজই দেখতে হবে ভাই।’’ বাবুল বললেন, ‘‘সবুজ চোখের পক্ষে ভাল, তাই সময় পেলেই আমি সবুজ দেখি।’’
***
ভাবা যায়! কেন্দ্র-রাজ্যের দুই মন্ত্রীর এমন কথোপকথন!
এ দিকে অনুষ্ঠান শুরুর আগে দেব ও বাবুল যখন একে অপরকে জড়িয়ে ধরলেন, ক্যামেরার ঝলকানির সঙ্গেই কি কোথাও বেজে উঠল— ‘কহো না প্যার হ্যায়’!
আর রাতের পার্টিতে যখন এক গোল-টেবিলে দেব-ব্রাত্য-অরিন্দম শীল-বাবুল, ঋতুপর্ণা-রূপা... দলাদলি ভুলে নিখাদ আড্ডায় ...তখন সত্যিই যেন ‘বসন্ত এসে গেছে’।
না হলে সেই মজলিশে এমন কথাও শোনা যায়...‘‘সত্যজিৎ রায় আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে নাকি বিস্তর মিল।’’
কী মিল? না, ওঁরা দু’জনেই যে কাজটা করেন (ছবির ও রাজ্যের) তার সব ক’টা দিক নিজে হাতেই সামলান।
এ সব দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল সত্যিই, ‘একটা ছোট্ট ‘সন্ধ্যা’ ...এক দারুণ বিপ্লব, পৃথিবীর উষ্ণায়নও যেন তুলনায় তুচ্ছ...’
***
ঠাট্টার তুঙ্গে তখন রাত বারোটা...
পাশের টেবিলেই হইহই করে সুরাপাত্র হাতে সুরসিক শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে স্টাইলিস্ট গিন্নি মহুয়া। নায়িকা কনীনিকা। আবীরের স্ত্রী নন্দিনী। জুন মাল্য। পল্লবী চট্টোপাধ্যায়। যিশুর স্ত্রী নীলাঞ্জনা।
শাশ্বত কবিতার ঢঙে অনেক টুকরো কথা বলছিলেন!
আচ্ছা, ‘নায়িকা সংবাদ’ ছবির নায়িকা অঞ্জনা ভৌমিকের মেয়ে তো নীলাঞ্জনা! তাই তো?
কিছু পরে টেবিল ছেড়ে উঠে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় নলেন গুড়ের আইসক্রিম খেতে খেতে প্রযোজক রানা সরকারকে বলছিলেন, ‘‘আমি ‘শবর’ করিনি, আমার ইচ্ছে। আরে এখন আমি রাজ্যের হয়ে কাজ করব, আর বছরে দুটো ছবি করব, ব্যস্ কার কী ভাই!’’ একটু আগে সুন্দরী নায়িকা লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও দেখা গিয়েছিল। এক ঝলক।
***
পাশে দাঁড়িয়ে আবীর চট্টোপাধ্যায় এই আনন্দ-সন্ধ্যা প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আসলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিটা তো খুব ছোট, সম্পর্কগুলোও ব্যক্তিগত স্তরের। তাই এই অনুষ্ঠানটা যেন রিইউনিযন। যেখানে ক্যুইজটা একটা খেলা মাত্র, যেটা খুব হেলদি।’’
তবে এই সুস্থ প্রতিযোগিতাও যে কতটা টানটান, তা বোঝা গেল ক্যুইজে বাবুল-সুপ্রিয়র র্যাপিড ফায়ারে গায়ক শান সংক্রান্ত প্রশ্নে সময় পেরিয়ে যাওয়ায়। নৈশভোজেও অনেকে তা নিয়ে অনুযোগ করলেন।
ভাল কথা, প্রতিযোগী চোদ্দোজনের, প্রথম পাঁচের মধ্যেই অনেককে চমকে দিয়ে খোলা চুলের সিগনেচার স্টাইলে হাজির হন নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত! জিজ্ঞেস করলাম, প্রসেনজিতের সঙ্গে জুটি বেঁধে তো অংশ নিচ্ছেন ক্যুইজে, ফের জুটি বেঁধে ছবি করবেন কবে? ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘এই তো কথা হয়েছে শিবুর (শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে।
ও দিকে প্রসেনজিতের কাছে পার্টির শেষে যখন জানতে চাইলাম, গত বার তো রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যুইজে ছিলেন? এ বার মিস্ করছেন না রচনাকে?
‘‘রচনাও খুব লক্ষ্মী নায়িকা। আমার খুব প্রিয়। টিভিতে আমাদের ‘তুমি যে আমার’ শো-টা দর্শকদের খুব পছন্দ হয়েছিল,’’ বললেন প্রসেনজিৎ।
—ওটার দ্বিতীয় পর্ব হবে না?
‘‘হবে তো! এ বছর পুজোর সময় থেকেই আরম্ভ হবে।’’
তার মানে, ফিল্মে ঋতুপর্ণা আর টিভিতে রচনা— আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দর্শকদের কাছে ‘প্রসেনজিতের মহাভোজ’!
—আচ্ছা, অর্পিতা আসবেন না অনুষ্ঠানে? ‘‘না, ও তো দিল্লিতে আছে...’’ বলতে বলতে বন্ধুদের দিকে এগিয়ে গেলেন প্রসেনজিৎ।
অনুষ্ঠানের শেষে অবশ্য ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ জুটি মাত্র আড়াই পয়েন্টে এগিয়ে জিতেছেন বলে পরমব্রত মজা করে বললেন, ‘‘এ বার থেকে ঋতুদিকে ‘আড়াইদি’ আর বুম্বাদাকে ‘আড়াইদা’ বলে ডাকব।’’
***
ও দিকে ক্যুইজ শুরুর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার আর্জি জানাচ্ছেন অনেকেই সঞ্চালক মীরের কাছে। আর মীর মেতে নিজস্ব মেজাজে। মঞ্চে উঠেই অনেক আগে এসে পড়া ঋতুপর্ণা আর দেরি করে আসা প্রসেনজিৎকে নিয়ে মজা করে ঝালিয়ে নিলেন তাঁর স্টাইল। বললেন, ‘‘ভাবা যায়! ঋতুপর্ণা আগে এসেছে...কার আগে, সেটা অবশ্য বলতে চাই না।’’
ক্যুইজ কোলাজ
স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই মীর আরম্ভ করলেন ক্যুইজ! জুটিরা ছিলেন—
দেব-তনুশ্রী। বাবুল-সুদীপ্তা। ব্রাত্য-চিরঞ্জিত। যিশু-অনুপম। আবীর-শাশ্বত। পরম-চূর্ণী। এবং ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ।
***
প্রথম রাউন্ড ‘অগ্নিপরীক্ষা’। নিজেদের পার্টনারকে কে, কতটা চেনেন তা নিয়ে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ফিল্মের উপর নানা প্রশ্ন।
তবে তৃতীয় রাউন্ডটিই ছিল সব চেয়ে অভিনব। প্রত্যেক জুটিকে অভিনয় করে দেখাতে হবে একটি বিশেষ মুহূর্ত। যদিও তাতে কোনও পয়েন্ট ছিল না।
একটি খেলনা হাঁস ও তিনটি ডিম দেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মীর বললেন, ‘‘এটা হল বুনো হাঁস টু— বুনো হাঁসের ডিম’’। এটা নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে একটি দৃশ্য অভিনয় করে দেখাতে হবে দেব-তনুশ্রীকে।
মিষ্টি হেসে দেব বললেন, ‘‘আমি তো সাধারণত রি-মেক ছবি করে থাকি, তাই অভিনয়টা দেখিয়ে দিলে, করতে পারি।’’ দর্শকাসনে রাজ চক্রবর্তী দেখলাম নায়িকা মিমির পাশে বসে মিটিমিটি হাসছেন। টিম ‘কাটমুন্ডু’ যেন!
কিছুক্ষণ আগে এই রকমই দর্শকাসনে বসে হাসছিলেন সন্দীপ রায় ও তাঁর স্ত্রী ললিতা, যখন মঞ্চে ‘সোনার কেল্লা’র কোল্ট পয়েন্ট থ্রি টু রিভলভার নিয়ে প্রশ্ন হচ্ছিল।
সন্দীপ রায়কে দেখলে মনে হয়, ইস্ অস্কারের ওই ট্রফিটা যদি ওঁর বাড়িতে এক বার দেখা যেত!
***
বাবুল-সুদীপ্তার রাউন্ডটিও অনবদ্য! বলা হয়েছিল দিল্লির মন্ত্রী বাবুল নিজের বাংলোয় ঘুমিয়ে। সুদীপ্তা সেই বাংলোর কাজের মেয়ে। অভিনয় করে দেখাতে হবে, কী ভাবে তিনি মনিব-মন্ত্রীকে ঘুম ভাঙিয়ে পার্লামেন্টে যেতে বলবেন। সুদীপ্তা বললেন, ‘‘ও দাদাবাবু উঠেন...যান ওই গোল বাড়িতে...গিয়ে ঝগড়া করেন ...আমরা তো বাবু টিভিতে দেখি আপনাদের ওই ঝগড়া...আর সব্বাইকে বলি, ওই যে আমার মন্ত্রী দাদাবাবু...’’
ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে যেন বাবুল বললেন, ‘‘ওহ্, শ্যামবাজারের গোল-বাড়ির কষা মাংস দিয়ে লাঞ্চ...’’
কিছুতেই যখন ঘুম ভাঙছে না মন্ত্রীর, তখন রেগে গেলেন সুদীপ্তা। ধুর তেরিকা, টাকা-পয়সাও ঠিকঠাক দেয় না... নেহাত মন্ত্রী, কেস ঠুকে দেবে...তাই কাজ করছি।
দু’ মিনিটের অভিনয়ে জাত বুঝিয়ে দিলেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা।
***
পরের রাউন্ডে ব্রাত্য ও চিরঞ্জিত। যেখানে পরিচালক হিসেবে চিরঞ্জিত, ব্রাত্যকে ঠিক করে সংলাপ বলানোর চেষ্টা করছেন। আর বার বার ব্রাত্য তোতলাচ্ছেন সেটা বলতে গিয়ে। সংলাপ— বৌ গেলে বৌ পাওয়া যায়, কিন্তু মা গেলে মা পাওয়া যায় না রে..
ব্রাত্য ভুল করছেন। আর রেগে যাচ্ছেন চিরঞ্জিত। শেষে ব্রাত্য যখন বললেন, ‘‘বৌ গেলে, মা খুশি হয় রে।’’ হাসিতে ফেটে পড়লেন দর্শক। চিরঞ্জিত বললেন, ‘‘দ্যাটস বেটার।’’
***
অনুপম-যিশুর রাউন্ডটাও মজার। যিশুর বৌ নীলাঞ্জনাকে দর্শকাসন থেকে নিয়ে যাওয়া হল। নীলাঞ্জনার কোলে যিশু মাথা রেখে এমন ভাবে শুয়ে, যেন জ্বর হয়েছে। আর অনুপম গিটার নিয়ে গাইলেন, ‘‘আমলকী বনে শোনো, সোয়াইন ফ্লু এসে গেছে।’’ ‘বসন্ত এসে গেছে’র জায়গায় ‘সোয়াইন ফ্লু’ বসিয়ে অনন্য ভঙ্গিতে অনুপম, অতি অনুপম!
অনুপমকে দেখলেই একটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়। জানতে ইচ্ছে করে, আচ্ছা, আপনার ওই যে বিখ্যাত গান ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও...’, সেটা কি রবি ঠাকুরের‘...আপন মনে আমায় থাকতে দে...আমায় থাকতে দে না’ থেকে অনুপ্রাণিত? কিন্তু আশ্চর্য, এই প্রশ্নটা কেন যে করা হয়ে উঠল না, কে জানে!
***
পরের জুটি পরমব্রত-চূর্ণী। সাংবাদিকের ভূমিকায় পরম আর পরিচালক চূর্ণী। চূর্ণীর কোলে প্রপস হিসেবে ছিল খেলনা বিড়াল।
চূর্ণীর প্রথম ছবি ‘নির্বাসিত’ যেহেতু তসলিমা নাসরিনের জীবনভিত্তিক, তা-ই ওই বিড়ালের উপস্থিতি। পরম বললেন, ‘ঘণ্টাখানেক সঙ্গে বেড়াল’-এ আপনাকে স্বাগত।
তার পর রসিকতামূলক নানা প্রশ্ন!
***
এর পরই সে-ই... ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিতের রোম্যান্টিক দৃশ্য। সাদা টুপি, লাল স্কার্ফ আর সানগ্লাসে স্লো মোশানে মঞ্চে ঢুকলেন প্রসেনজিৎ। ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’ ...তার পর তো দু’জনের দুষ্টু-মিষ্টি কোমর জড়ানো দৃশ্য। যেন ফ্লাশব্যাক! চোখের সামনেই হচ্ছে, তবু যেন বিশ্বাস হয় না!
শুনেছি, প্রেম নাকি ওয়ান ওয়ে ট্র্যাফিকের মতো। একবার সেই রাস্তায় ঢুকে পড়লেই, ব্যস। হয় পরিণতিতে সানাই, নয় ‘বসন্ত ফেঁসে গেছে’। কিন্তু এই দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে হল, ট্র্যাফিক সিগনালটাই উঠে গেল নাকি শেষ পর্যন্ত! নিখাদ বন্ধুত্বের রং হয়তো এমনই!
***
দোলের আগে রং ছড়িয়ে পড়ে মঞ্চ, দর্শকাসন সব জায়গায়। হসপিটালিটি পার্টনার ‘ওহ্ ক্যালকাটা’র ডিনারেও সেই রং ছড়িয়ে রইল মধ্যরাত পর্যন্ত।
পাওলি, গার্গী, অরুণিমা, পায়েল সরকার, সোহিনী সরকার, অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, রূপম ইসলাম, ঊষসী চক্রবর্তী, গৌরব-ঋদ্ধিমা, দোলন রায়, সাহেব ভট্টাচার্য, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, ইন্দ্রাণী দত্ত, কৌশিক সেন, কৌশিকের ছেলে ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর ঋদ্ধি সেন, রজতাভ দত্ত, ডা. রূপালি বসু, ডা. জীবক মুখোপাধ্যায়, ডা. গৌতম খাস্তগীর, ডা. গৌতম মুখোপাধ্যায়, ডা. রাজীব শীল, সত্যম রায়চৌধুরী, সন্দীপ ভুতোরিয়া, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, হিমাংশু ধানুকা... নাম শেষ হওয়ার নয়...
অনুষ্ঠানের, গিফ্ট স্পনসর ছিল, শ্যামসুন্দর দে-র ‘গ্রিন টাচ এন্টারটেনমেন্ট’। অন্য দিকে প্রতিযোগীদের হাতে বিশেষ পুরস্কার তুলে দেন ‘ক্যামেলিয়া’র নীলরতন ও রূপা দত্ত। এ ছাড়াও পুরস্কার তুলে দেন ‘জাতিস্মর’খ্যাত প্রযোজক রানা ও মৌ সরকার।
পরিচালক সুমন ঘোষ এই অনুষ্ঠানটির প্রতি এতটাই আবেগপ্রবণ ছিলেন... যে মায়ামি থেকে এসে তিনি বললেন ‘‘সত্যিই এখানে আসা সার্থক। শুধু এই সন্ধ্যাটুকুর জন্যই।’’
***
বিজয়ী জুটি প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণার হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রধান সম্পাদক অভীক সরকার।
তারকাখচিত এই ক্যুইজ শো এ বছর হচ্ছে পঞ্চম বার। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল সত্যিই কী অদ্ভুতভাবে প্রতি বারই পাল্টে-পাল্টে যায় পটভূমি! তাই ফুরফুরে পরিবেশে, একটু ভারী হলেও মনে পড়ে যাচ্ছিল সেই উক্তি ‘‘Change is the only constant in life”. এ জীবনের একমাত্র অমোঘ হল পরিবর্তন।
এ বারের প্রতিযোগীরা যেমন—
• দেব। গত বার ছিলেন সুপারস্টার, এ বার সুপারস্টার-সাংসদ।
• চিরঞ্জিত। গত চার বার ক্যুইজেই ছিলেন না। কিন্তু এ বার প্রতিযোগী। বলা হয়, রাজনীতি নাকি নায়কদের রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটের পথ। এ কথাটাকে বিলকুল পাল্টে, হিট ছবি ‘চতুষ্কোণ’-এর বিজয় রথে চেপে কামব্যাক করলেন চিরঞ্জিত।
জিজ্ঞেস করেছিলাম, প্রসেনজিতের সঙ্গে আবার তো এই ক্যুইজ মঞ্চে প্রতিযোগিতা? আর ‘কাকাবাবু’র চরিত্রে অভিনয়েরও তো কথা চলছে? স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে চিরঞ্জিত বললেন, ‘‘সাঁইত্রিশটা কাকাবাবুর গল্প আছে। বুম্বাকে বলেছি, দু’জনে মিলে করলেও দশ বছরে শেষ হবে না।’’
• বাবুল সুপ্রিয়। গত বছর ক্যুইজের দিন পর্যন্ত ছিলেন গায়ক। ক্যুইজের পরদিনই আসানসোল থেকে বিজেপির প্রার্থী। আর এ বছর? গায়ক প্লাস কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী।
তবে ব্যবহারে কিন্তু তিনি আজও একই রকম অমায়িক ও বন্ধুসুলভ!
• চূর্ণী। গত বার ছেলের পরীক্ষার কারণে আসতেই পারেননি। বরং তাঁর স্বামী পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জিতেছিলেন রাইমার সঙ্গে জুটি বেঁধে।
— এ ভাবে আবীর চট্টোপাধ্যায় ব্যোমকেশ থেকে ফেলুদা হয়েছেন। শাশ্বত, অজিত পেরিয়ে হয়েছেন শবর। যিশু হতে চলেছেন আগামীর ব্যোমকেশ। গত বার অভিজ্ঞ পরিচালক অপর্ণা সেনের সঙ্গে জুটিতে খেলেছিলেন পরমব্রত। আর এ বছর সদ্য পরিচালক চূর্ণীর সঙ্গে।
• সব শেষে... ঋতুপর্ণা-প্রসেনজিৎ গতবারের প্রতিযোগী থেকে এ বার সহযোগী।
সত্যি একটা বছরের মধ্যেই কত কী-ই যে পাল্টে যায়!
কত বদল, কত পরিবর্তন!
ছবিগুলি তুলেছেন: সুব্রত কুমার মণ্ডল ও কৌশিক সরকার।