১৯৬২-র ১৩ অগস্ট তৎকালীন বম্বেতে জন্ম অনিতার। পুরো নাম অনিতা রাজ হিঙ্গোরানি। অভিনেতা জগদীশ রাজের মেয়ে।
১৯৮৬ সালে ‘করিশ্মা কুদরত কা’ ছবির শুটিংয়ের সময় ডিরেক্টর সুনীল হিঙ্গোরানির প্রেমে পড়েন অনিতা। ওই বছরেই তাঁরা বিয়ে করেন। এখনও তাঁরা এক সঙ্গেই থাকেন মুম্বইতে।
বিয়ের পরও অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। বিয়ের পর ‘ইনসানিয়ত কে দুশমন’, ‘হাওয়ালত’, ‘সত্যমেব জয়তে’, ‘হিরাসত’, ‘ইনসাফ কি পুকার’, ‘পাপ কো জ্বালা কর রাখ কর দুঙ্গা’, ‘নফরত কি আঁধি’, ‘ঘর কি ইজ্জত’-এর মতো প্রচুর ছবিতে অভিনয় করেছেন।
১৯৯৬ সালের ফিল্ম ‘গেহরা রাজ’-এর পর কেরিয়ারে একটা লম্বা শূন্যস্থান তৈরি হয়। বহু বছর বড়পর্দায় সুযোগ পাননি তিনি। ২০১২ সালে ‘চার দিন কি চাঁদনি’-তে সাপোর্টিং চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এটাই ছিল তাঁর কামব্যাক ফিল্ম। যা বক্স অফিসে একেবারেই চলেনি।
বলিউডে নায়িকা হিসাবে অনিতার ডেবিউ ফিল্ম হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৯ সালের ‘পুরস্কার’। গোবিন্দার কাকা আনন্দের বিপরীতে তিনি অভিনয় করছিলেন। কিন্তু পরিচালক মানিক চট্টোপাধ্যায়ের আচমকা মৃত্যুতে সেই ছবি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফলে দু’বছর পর ১৯৮১ সালে ‘প্রেম গীত’ ছবি দিয়েই তাঁর বলি ডেবিউ হয়।
এই দীর্ঘ অভিনয়ের কেরিয়ারে প্রচুর ফিল্মে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন অনিতা। অভিনয় এবং সৌন্দর্য প্রশংসিত হলেও তাঁর ফিল্ম সে ভাবে বক্স অফিস সফল হয়নি। তবে আশির দশকের এই চার্মিং নায়িকা সে সময় দর্শকদের মন জুড়ে ছিলেন।
শুধু দর্শকই বা কেন! ধর্মেন্দ্র প্রথম দেখাতেই অনিতার প্রেমে পড়েছিলেন, এমন গসিপ আজও বলিউড পাড়ায় শোনা যায়। দু’জনের জুটি দর্শকও পছন্দ করেছিলেন। তবে ধর্মেন্দ্রর বাড়ি থেকে নাকি এই সম্পর্কে রাজি ছিলেন না কেউই। সে কারণে তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক সে ভাবে টেকেনি। শোনা যায়, ধর্মেন্দ্রই ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন।
১৯৮৯ সালে ফিল্ম ‘জুর্রত’-এ অভিনয় করার সময় অনিতা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। এই ফিল্মের প্রযোজক ছিলেন অভিনেতা রাজেন্দ্র কুমার। কাজের ক্ষেত্রে রাজেন্দ্র কুমারের ভীষণ কঠিন ছিল। শোনা যায়, রাজেন্দ্র কুমারের জন্য অনিতার গর্ভপাতের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থাতেই যত দিন পেরেছেন ফিল্মের অভিনয় চালিয়ে গিয়েছেন অনিতা। তিনি যখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তাঁর পক্ষে আর অভিনয় চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। তিনি কয়েক দিনের জন্য ছুটি চেয়েছিলেন। রাজেন্দ্র কুমার নাকি তাতে রাজি হননি। অভিনয় করতে গিয়ে পা পিছলে শুটিং সেটেই পড়ে যান অনিতা। অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর সন্তানের জন্ম হয়।
কিন্তু এই নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ছিল না রাজেন্দ্র কুমারের। মা হওয়ার দু’দিন পরই অনিতাকে শুটিং সেটে আসার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন তিনি। সেই চাপেই নাকি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই অনিতাকে সেটে আসতে হয়েছিল।
১৩ অগস্ট সদ্য ৫৭ বছর পূর্ণ করেছেন অনিতা। বড় পর্দায় সুযোগ না পেলেও ছোট পর্দায় কিন্তু এখনও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
৫৭ বছরের অনিতা কিন্তু এখনও একই রকম চার্মিং এবং ফিট। রোজ সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। নিয়ন্ত্রিত ডায়েট আর অনেকটা সময় জিমে কাটান তিনি। জিম ওয়ার্কআউট নিয়ে তাঁর প্রচুর ইউটিউব ভিডিয়ো রয়েছে। অনিতার মতে, বিয়ের পর মোটা হওয়ার ভয় থেকেই তাঁর জিমে যোগদান।
শোনা যাচ্ছে, রাজনীতিবিদ দীনদয়াল উপাধ্যায়ের বায়োপিক, ‘দীনদয়াল এক যুগপুরুষ’ দিয়ে ফের বড় পর্দায় ফিরতে চলেছেন ৫৭ বছরের এই অভিনেত্রী। চলতি বছরেই এই বায়োপিক মুক্তি পাওয়ার কথা।